নারীর প্রতি পুরুষের আক্রোশ চিরকালই ভয়াবহ!
নারী- পুরুষ উভয়ের সম্মিলিত রূপেই সুন্দর পৃথিবী গড়ে ওঠে। কিন্তু পৃথিবীব্যাপী নারী এবং পুরুষের মধ্যে ব্যাপক বৈষম্য। পুরুষ যা করতে পারে নারী তা পারে না। আবার নারীর ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয় এ সমাজের নানাবিধ বিধিনিষেধ। নারীর সঙ্গে ভয়াবহ আচরণ করতেও এ সমাজের অধিকাংশ পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা সম্পন্ন মানুষের বাধে না। বরং তারা খুব আত্ম- অহমিকার সঙ্গে নারীর ওপর নিজের কর্তৃত্ব ধরে রাখতে চেষ্টা করে। আর তা যদি সম্ভব না হয় তবে নারীকে চূড়ান্ত অপদস্ত করতেও তাদের বাধে না। আমাদের সমাজেই যে এমন দৃশ্য লক্ষণীয় তা নয় বরং পৃথিবীজুড়ে নারীর একই অবস্থান!
মুসলিম প্রধান রাষ্ট্রগুলোই যেন নারীর ওপর বেশি অত্যাচারে লিপ্ত। যদিও গণ্য- মান্য করা হয় ইসলাম নারীকে সর্বোচ্চ স্বাধীনতা- মর্যাদা দিয়েছে। তবে হ্যাঁ এ সমাজের অধিকাংশই ভণ্ড মুসলিম। যারা ধার্মিকতার নামে ভাড়ামি করতেই প্রস্তুত। কারণ কোনো ধর্মই মানুষের অকল্যাণ- অত্যাচার- নিপীড়ন চায় না। তাই আমাদের সমাজে যে কথাগুলো প্রায়ই উঠে আসে যে, মুসলিম হয়েও কিভাবে নারীর ওপর অত্যাচারী হয়ে ওঠে এসব মানুষ। মূলত তা না বলে, বলা উচিত ধর্মকে আবরণ করে নেয় এ শ্রেণি। যাতে এই আঁচ তার মানসিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ না করে বরং ধর্মের ওপর গিয়ে পড়ে!
তবে হ্যাঁ এ সমাজে অধিকাংশ মানুষই রক্ষণশীল। চিন্তা- চেতনা- মানসিকতায়। নাহলে ছোট্ট ঘটনাকে কেন্দ্র করেও কেনো রক্তারক্তি – মারামারি- কাদাছোড়ায় ব্যস্ত হয় কিছু কদর্য মানসিকতাসম্পন্ন মানুষ ! মূলত মানুষের সমস্যা তার বিবেক এবং নৈতিক জ্ঞানের যথেষ্ট অভাবের কারণে। কিছু ঘটনা দেশ-কালের গণ্ডি পেরিয়ে আপামর নারীর নির্যাতনের চিত্রকে তুলে ধরে। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে নারীর অবস্থান কত ঠুনকো হলে একজনের কিঞ্চিৎ স্বার্থে আঘাত লাগলেই অপরের সঙ্গে সম্পর্কচ্যুত করা যায়। প্রসঙ্গক্রমে গণমাধ্যমে প্রকাশিতব্য খবরটি তুলে ধরা হলো-
প্রথম রোজার ইফতারে বড় ভাইকে দাওয়াত দিতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন একজন মিশরীয়। স্ত্রী জানিয়েছেন, পারিবারিক গোপনীয়তা বজায় রাখতে স্বামীর অক্ষমতা ও তার বড় ভাইয়ের নেতিবাচক প্রভাবই বিচ্ছেদের প্রধান কারণ।
খবরে বলা হয়, সাত বছর হলো এই দম্পতির বিয়ে হয়েছে। তাদের রয়েছে এক ছেলে ও দুই মেয়ে। ভাইয়ের সঙ্গে তার স্বামীর অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠতাই হচ্ছে এই নারীর প্রধান উদ্বেগ। কারণ তার স্বামীর ওই ভাইয়ের নারীদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ ও একাধিক বিয়ের ইতিহাস রয়েছে। তিনি মনে করেন, তার স্বামী ওই ভাইয়ের কাছ থেকে একই ধরনের ব্যবহার শিখতে পারেন এবং একই ধরনের ব্যবহার তার সঙ্গে করতে পারে। ভুক্তভোগী ওই নারীর আশঙ্কা, তার স্বামী ওই ভাইয়ের সঙ্গে পরিবারের সব কিছু শেয়ার করেন। বিশেষ করে অর্থনৈতিক বিষয়। ভাইকে ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নিতে না পারার কারণেই মূলত স্বামীর সঙ্গে বিবাদ বাড়ে তার।
ঘটনাটি মিশরের হলেও আমাদের সমাজে এমন পুরুষ অহরহ। যারা নিজের পরিবারের গোপনীয়তা বজায় রাখতে ব্যর্থ। যখন একজন পুরুষ বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তখন স্বাভাবিকভাবেই তার প্রধান গুরুত্বের জায়গা হয়ে যায় স্ত্রী। ভরণপোষণের দায়িত্ব থেকে শুরু করে সবই পুরুষের ওপর বর্তায়। তবে হ্যাঁ যেহেতু ঘটনাটি মিশরে এবং মিশর মুসলিম প্রধান রাষ্ট্র ফলে কথাপ্রসঙ্গে বলতেই হয়, এই নারী বাধ্য নন স্বামীর পরিবার- পরিজনকে দেখভাল করার জন্য। কারণ ইসলাম নারীকে স্বাধীনতা দিয়েছে। পুরুষকেও। যে যার পরিবারকে দেখতে পারবেন কিন্তু কেউ কাউকে কখনোই চাপ প্রয়োগ করতে পারেন না। তবে আমাদের সমাজে নারী বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেই শ্বশুর- শাশুড়ি- স্বামীর দাস- অনুদাস হয়ে উঠতে হয় তাকে! সমাজের চিত্র দেখে মনে হতেই পারে, নারীটি একজন পুরুষ নয় বরং গোটা গোষ্ঠী বা ওই পরিবার- পরিজনের সঙ্গেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন!
এ সমাজ ব্যবস্থার এই দুর্গন্ধযুক্ত নীতির কারণে স্বামী- স্ত্রীর মধ্যে বন্ধুত্ব- গাঢ়ত্ব সবই ধসে পড়ে। নাক গলানোর জায়গা তৈরি হয়। একে- অপরের মধ্যে পরিবারকে কেন্দ্র করে ভুল বোঝাবুঝি – সম্প্রীতির জায়গাটা খসে পড়ে। এমনকি স্বামীর যদি ক্ষমতা থাকে তবে স্ত্রীর জন্য আলাদা বাসস্থানেরও ব্যবস্থা করার কথাও বলা হয়েছে ইসলামে। ধর্মীয় বিধান টানার কারণ, সব মানুষই কথা বলতে গেলে ধর্মকে উপজীব্য করে তোলে! কারণ আধুনিক জীবনব্যবস্থায়ও তাদের যুক্তি- বুদ্ধির যথেষ্ট অভাব। ফলে যাদের বোধগম্যতা যেমন বোঝানোর ক্ষেত্রে তাকেই উদাহরণ বা প্রাসঙ্গিক হিসেবে উপস্থাপন করতে হয়। আর যেহেতু ঘটনাটি মিশরে ফলে সেখানকার ধর্মীয় নীতি অনুযায়ী এটি বিচার্য।
মিশরীয় এই পুরুষ স্ত্রীর সঙ্গে একটি ছোট্ট ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে অন্যায় করলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের সমাজের অধিকাংশ পুরুষই এটাকে সমর্থন করছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে বোধের জায়গাটা কোথায়? পুরুষের জায়গায় যদি নারীটি তার পিতা- মাতা- ভাই- বোনকে দাওয়াত না দেওয়ার কারণে ডিভোর্স দিতো তবে এ সমাজের রায় কোনদিকে এগুতো? নিশ্চিত অর্থেই ধর্মীয় ব্যাখ্যা- বিশ্লেষণ- যুক্তি- তর্কে এ সমাজ তথা এই পৃথিবীর অধিকাংশ পুরুষই নারীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করতেন।
অর্থাৎ বিষয় যাইহোক না কেনো- প্রসঙ্গ একটাই সেখানে নারী জড়িত। ফলে যেখানে নারীর কথা আসবে সেখানে যেমন করেই হোক নারীকেই দোষী করা হয়। পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার পরিবর্তন কি আদৌ কখনোই ঘটবে না? পৃথিবীব্যপী নারী আর কতভাবে, কত ঠুনকো ঘটনাকেও কেন্দ্র করে অত্যাচার – নিপীড়নের শিকার হবে? পরিবার- সমাজের কাছে একটাই নিবেদন, নারীকে মুক্তি দিন। নারীর মুক্তি নাহলে সমাজ তথা রাষ্ট্র মুখ থুবড়ে পড়বে! যুগের পরিবর্তন হয়েছে ফলে যুক্তি- বুদ্ধির সাহায্য পথ চলতে না শিখলে প্রতিপদেই ঠোকর খাওয়া বাঞ্ছনীয়। পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা পরিহার করুন। নারীকে তার মতো করে চলার স্বাধীনতা দিন। স্বার্থের বাইরে এসে পরস্পর শ্রদ্ধা- মর্যাদা – ভালোবাসায় সম্পর্কে গড়ে তুলুন। যার বৌদলতে সুন্দর ও কল্যাণময় পৃথিবী গড়ে উঠবে।