চোখেমুখে ফুটে উঠে ধর্ষকের অভিব্যক্তি
বহু নারীর নিত্যনতুন ফটো ফেসবুকে দেখা, মার্কেটে আড়চোখে সুন্দরী নারীদের এক নজর দেখে নেওয়ার স্বভাব আছে অনেকের। টিভি স্ক্রিনে সুন্দরী নারীদের এনজয় করে মনটাকে চাঙ্গা করা তো আছেই। ফেসবুকে মেসেজ, মোবাইলে কথা বলা, ফেসবুকে নারীদের মেসেজ পাঠানো ও জাস্ট ফেসবুক গার্লফ্রেন্ড হওয়া যদিও বাস্তবে কেউ কাউকে দেখেনি এমনটি ফেসবুকেই দেখা যায়। মন দেওয়া, ঐ নারীকে কল্পনা করা ও একসময় ফেসবুকেই হারিয়ে যাওয়া মানে তাকে বাদ দিয়ে নতুন আরেকটি ভাবনায় চলে আসা। এইগুলি ২-৩ মাস স্থায়ী হয়। এভাবে হাজারো নারীকে নিয়ে কল্পনা করা আবার বাদ দেওয়া হয়। আর এভাবেই আসলে শুরু হয় এক ধরনের ব্যভিচার।
নারীরা আমাদের দেশে নিরাপদ নয়। কোনো নারীকে নিয়ে মানসিকভাবে কিছু ভাবনা থেকেই আসলে মনের ভেতর শুরু হয় কুভাবনা। এই কু ভাবনাই আস্তে আস্তে শুরু করে নারী নিপীড়ন। রাস্তায় কোনো নারীকে দেখলেই তাকে নিয়ে মনের ভেতর থাকে নানা ধরনের কল্পনা। অনেক সময় তার শরীরের মাপ থেকেই শুরু হয় অন্য ধরনের মানসিক ভাবনা। এসব ভাবনা মানুষের মনে অবচেতনে নানাভাবে ঠাই গাড়ে। একসময় যখন তা অবসেশনে পরিণত হয়। এই অবসেশন থেকেই মূলত ধর্ষকের মনের জন্ম।
আমাদের সামাজিক কাঠামোতে কুভাবনা বা মানসিক ভাবনাকে নিয়ে এত গবেষণা হয়নি। নারীর শরীরের প্রতি নজর পড়া শুরু হয় নারীর জন্ম থেকেই। কৈশোর বয়সে পা না দিতেই ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় গায়ে জড়াতে হয় ওড়না নামক কয়েক হাত এক কাপড়, নাহলে বুকে চোখ যাবে পুরুষের। সে নারী খারাপ বলে গণ্য হবে। ওড়নায় নারীর লজ্জা লুকায়িত? আসলে ওড়না কি আমাদের প্রটেক্ট করে? ওড়না পরি কিংবা বোরকা, লোলুপ দৃষ্টির শিকার নারীর শরীর বরাবরই হয়। ৩/৪ বছর বয়সী একটা মেয়ে শিশুর শারীরিক গঠন আর একটা ছেলে শিশুর শারীরিক গঠনের বিশেষ পার্থক্য থাকেনা। তবুও সেই শিশুর শরীরে পুরুষের চোখ যায় কারণ সে মেয়ে শিশু। নারীদেহের প্রতিটা অঙ্গ পুরুষের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। কেউ কখনো ১০০ ভাগ আশ্বস্ত করতে পারবে যে পুরোপুরি পর্দা মেনে চলা কেউ কখনো পুরুষের লালসার দৃষ্টির শিকার হয়নি? আমাদের সোশ্যাল আইডলজি পুরুষতন্ত্র এমনভাবে সেট করে দিয়েছে যে নারীদেহ মানেই পুরুষের চোখের প্লেজার।
মূলত চোখের দর্শন থেকেও নারীকে ধর্ষণের এক ধরনের এপপ্রবণতা সম্প্রতি অনেক বেড়েছে। বিষয়টিকে শুধু টিজের পর্যায়ে ভাবলে চলবে না। ভাবতে হবে সংকটের জায়গা থেকে। সমাজে কিছু নৈতিক পরিবর্তনের বিষয়ে নিয়মিত আলোচনা হয়। তবে এসবে আসলে পূর্ণাঙ্গ সমাধান পাওয়া যায় না। নারীরা স্বাধীনভাবে পোশাক পরার অধিকার রাখবে এবং তা স্বাভাবিক তাদেরই করতে হবে। পুরুষদের বাজেভাবে তাকানো কিন্তু স্বাভাবিক করা যাবে না। “পুরুষ মানুষ মেয়েদের দিকে তাকাবেই”-এই ভাবনা থেকে সরে আসা জরুরি। এমন এক সাংঘর্ষিক ভাবনাই আসলে সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতা অনেক বাড়িয়ে দেয়। তা করে দেয় সংকটময় সবকিছুকে। পোশাক আশাক ঠিক করলেই কুদৃষ্টি সরে যাবে এ ভাবনা যে ভুল তা সম্প্রতি অনেক ঘটনাতেই স্পষ্ট। অন্যায়কে অন্যায় হিসেবে চিহ্নিত করেই সামাজিক প্রতিরোধ গড়তে হবে।