একটি দ্বীপে একটি বাড়ি!
যান্ত্রিকতার শহরে হাঁপিয়ে গিয়ে মানুষ কল্পনার জগতে ঘুরপাক খায়, আর সেখানে নিস্তব্ধতার ছোঁয়ায় নিঃসঙ্গ কোনো কুটিরে থাকার বাসনা যেন প্রকট হয়ে ধরা দেয়। মানুষের সেই কল্পনার জগতের মতোই একটি নিঃসঙ্গ বাড়ি রয়েছে বাস্তবেই।
প্রায়শই সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা মেলে নিস্তব্ধ কোনো জায়গায় নিঃসঙ্গ কোনো ছোট্ট একটি বাড়ির লোভনীয় ছবি । আর তার সাথে ক্যাপশনে থাকে মানুষের ব্যস্ত জীবন থেকে পালিয়ে সেখানে বসবাসের আকাঙ্ক্ষা। এসবই জেনো আধুনিক যান্ত্রিক জীবনে মানুষের হাঁপিয়ে ওঠার ফল। তবে হুট করেই যদি দেখেন আপনার কল্পনার মতো একটি বাড়ির ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরপাক খাচ্ছে, তবে?
একবার ভাবুন তো চারদিকে কেবলই নীল জলরাশি। আর সে জলরাশির মধ্যে বিচ্ছিন্ন এক দ্বীপ। সেই বিচ্ছিন্ন দ্বীপটিতে একটি মাত্র বাড়ি। এ যেনো কল্পনাকেও হার মানায়। একটা সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয় এই বাড়ির ছবি।
কেউ কেউ তো বলছেন, পৃথিবীতে এমন কোনও জায়গাই নেই। এটি নিছকই শিল্পীর কল্পনায় ফটোশপে তৈরি। আবার কেউ বলছেন আইসল্যান্ডে এমন জায়গার অস্তিত্ব রয়েছে। কল্পনা- বাস্তব ঝগড়াকে পাশে রেখে ছোট্ট ওই দ্বীপের একমাত্র বাড়িটিকে বিশ্বের ‘নিঃসঙ্গতম বাড়ি’র তকমা দিয়েছেন নেটাগরিকরা। তবে চলুন বাড়িটি নিয়ে বিশ্বে ভেসে বেড়ানো কিছু মত জেনে নেয়া যাক।
এক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের দাবি, আইল্যান্ডের দক্ষিণে এক বিচ্ছিন্ন এলাকায় এই দ্বীপটি অবস্থিত। দ্বীপটির নাম এলিডে। আইসল্যান্ডের দক্ষিণে ১৫ থেকে ১৮টি এমন ছোট ছোট দ্বীপ রয়েছে। সেই ছোট ছোট দ্বীপগুলোর মধ্যে একটি এই এলিডে নামক দ্বীপটি। এক সময় এখানে ৫টি পরিবার বাস করত। কিন্তু বর্তমানে এই দ্বীপটি একেবারেই জনমানব শূন্য। শেষ পরিবারটি ১৯৩০ সালে এই দ্বীপ ছেড়ে চলে যায়।
আর এক ব্রিটিশ দৈনিকে লেখা হয়েছে, কোনও এক কোটিপতি এই বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বাড়িটি তৈরি করিয়েছিলেন। তার কারণ হিসেবে যা বর্ণনা করা হয়েছে তা যদিও খানিকটা অদ্ভুত। ঐ দৈনিকে বলা হয়েছে, কোনও দিন জোম্বি আক্রমণ শুরু হয়, তবে তিনি সেখানে চলে যাবেন। এমন আরো অনেক অদ্ভুত মতবাদ রয়েছে বাড়িটিকে নিয়ে। এক দল মানুষের ধারণা, আইসল্যান্ডের জনপ্রিয় গায়িকা বিউর্ক এই বাড়িটি তৈরি করেছেন। কেউ কেউ আবার দাবি করছেন, ধর্মীয় সাধনার জন্য নির্জন এই দ্বীপে বাড়িটি তৈরি করা হয়েছে।
গুলিয়ে যাচ্ছেন তো? মনে প্রশ্ন জাগছে তো, আদৌ এমন কোনো বাড়ির অস্তিত্ব আছে নাকি নিছকই কল্পনা? সত্যিটা হচ্ছে, বাস্তবেই আইসল্যান্ডের এলিডে দ্বীপে এমন একটি বাড়ি রয়েছে। আর তার মালিক হল ‘এলিডে হান্টিং অ্যাসোসিয়েশন’। বাড়িটি আজ থেকে প্রায় ৭০ বছর আগে, ১৯৫০ সালে তৈরি করা হয়। এই অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা শিকার করতে গিয়ে এই বাড়িতে থাকেন। এই শিকারিরা সমুদ্রে দীর্ঘচঞ্চু যুক্ত এক প্রকার পাখি ‘পাফিন’ শিকার করতে যান। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে বাস্তবেই এমন একটি দ্বীপ আর সেই দ্বীপে বিশ্বের ‘নিঃসঙ্গতম বাড়ি’ রয়েছে। তাহলে যান্ত্রিকতার এই ভিড় ঠেলে বাস্তবেই যাবেন নাকি আপনার কল্পনার জগতের নিঃসঙ্গ ছোট্ট কুটিরে?