গ্রামীণ নারীদের উন্নয়ন হোক

যুগের পরিবর্তনে নারীদের জন্য এখন বিভিন্ন সংগঠন গড়ে উঠেছে । তাদের অধিকার আদায়ে লড়ে যাচ্ছে এসব সংগঠনগুলো। কিন্তু গ্রামীণ নারীদের উন্নয়নের জন্য কতটা সংগঠিত হয়েছে সরকারি-বেসরকারি সংগঠনগুলো? নারীর প্রতি অত্যাচার-নিপীড়ন নিয়ে সংগঠনগুলো কাজ করলেও প্রান্তিক নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছ্বল করতে উদ্যোগগুলো এখনও চোখে পড়ার মতো নয়।
যদিও গ্রামীণ নারীদের উন্নয়নার্থে ১৯৯৫ সালে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের চতুর্থ নারী সম্মেলনে ১৫ অক্টোবরকে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস পালনের প্রস্তাব গৃহীত হয়। ১৯৯৭ সাল থেকে জেনেভাভিত্তিক একটি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা উইমেনস ওয়ার্ল্ড সামিট ফাউন্ডেশন দিবসটি পালনের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি পালন করে।
দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি নারী। প্রায় ২ কোটি কর্মজীবী নারীর মধ্যে ১.৫ কোটিই গ্রামীণ নারী। আর শতকরা ৮৬ ভাগ মানুষই গ্রামে বাস করে। কিন্তু এই গ্রামীণ নারীদের বৃহত্তর পরিবর্তন আজও ঘটেনি। কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বৈষম্য দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয়। সবক্ষেত্রেই নারী-পুরুষের বৈষম্য বিদ্যমান কর্মক্ষেত্রেও তা দৃশ্যমান। কিন্তু গ্রামীণ নারীদের উন্নয়ন না হলে জাতির সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। যদিও এলাকাভিত্তিক ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে, খামারে পশু পালন করতে দেখা যায়। কিন্তু বৃহত্তর স্বার্থে গ্রামীণ নারীদের উন্নয়নে সরকারি -বেসরকারি পর্যায়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
কোনো একটি দিনে স্মরণ করার মধ্যে প্রকৃত উন্নয়নের পথে হাঁটা সম্ভব নয় বরং প্রতিটি দিন কাজে লাগাতে হবে। গ্রামীণ নারীদের স্বাবলম্বী করে তুলতে পারলেই তাই দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ঘটবে।
এলক্ষে রাষ্ট্র কর্তৃক ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কারণ আমাদের দেশের নারীদের অধিকাংশই যেহেতু গ্রামেই বসবাস করে এবং শিক্ষার দিক থেকেও অনেকে পিছিয়ে। ফলে তাদের জন্য হাতে – কলমে কাজের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। প্রথম পর্যায়ে বিনা সুদে, জামানত ছাড়াই ক্ষুদ্র ঋণ দান করতে হবে। একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাদের একটি ইউনিট বা প্রকল্পের আওতায় নিয়ে কাজে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
গ্রামীণ নারীরা আগে কৃষিকাজে বিশেষভাবে নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করলেও আদিবাসীদের মধ্যে এ প্রথা চালু থাকলেও গ্রামীণ নারী সরাসরি কৃষি কাজে সংযুক্তি কমেছে। অনাবাদি জমি, বর্গা চাষে নারীদের কাজে লাগানো যায়নি। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে নারীদেরও কৃষি কাজে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
গ্রামীণ নারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। আসবাবপত্র তৈরি, খামারে মুরগি পালন, ডিম উৎপাদন, গরু-ছাগল পালন, ক্ষুদ্র-কুটির শিল্প, হস্তশিল্প, পাটজাতীয় দ্রব্য, মাটির তৈজসপত্র বানানো, গার্মেন্টস দ্রব্য প্রভৃতি কাজে গ্রামীণ নারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। গ্রামীণ নারীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হলে তবেই দেশের বৃহত্তর উন্নয়ন সম্ভব। তাই দেশকে এগিয়ে নিতে সর্বস্তরের নারীদের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। সর্বোপরি গ্রামীণ নারীদের উন্নতিকল্পে কাজ করতে হবে। কোনো একটি দিনে স্মরণ করার মধ্যে প্রকৃত উন্নয়নের পথে হাঁটা সম্ভব নয় বরং প্রতিটি দিন কাজে লাগাতে হবে। গ্রামীণ নারীদের স্বাবলম্বী করে তুলতে পারলেই তাই দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ঘটবে।