Skip to content

১২ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | মঙ্গলবার | ২৭শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চলুন, ঘুরে আসি সুইজারল্যান্ডের রাঁদা

অনেকেই বলে পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর দেশ সুইজারল্যান্ড। তবে সুইস আল্পসের কোলে ঘোরাঘুরির সুযোগটা বেশ কমই হয়। কখনো সুইজারল্যান্ড ঘুরতে গেলেই খেয়াল করবেন, সেখানে কিছু ট্যুর প্যাকেজ আছে। এসব ট্যুর প্যাকেজ কিছু চেনাজানা জায়গাতেই আবদ্ধ। কয়েকটি নাম এখনই হয়তো আপনার মনে চলে এসেছে। ইন্টারলাকেন, মাউন্ট টিটলিস, বার্ন।

অথচ সুইস আল্পসের কোলঘেঁষে একবার ঘুরে আসলে অবাক হতে বাধ্য আপনি। সুইজারল্যান্ডের পর্বতাঞ্চলের আনাচে কানাচে কিংবা উপত্যকার বুকে পর্যটকদের জন্যেই যেন ওঁৎ পেতে আছে প্রকৃতি। নিষ্পলক দৃষ্টিতে আপনি তাকিয়ে থাকতে বাধ্য হবেন এ সব দৃশ্যে।

সুইজারল্যান্ডে গেলে প্রকৃতির পরশে নিজেকে বুলিয়ে নেওয়াই সবচেয়ে ভালো। সেজন্যে যেতে পারেন রাঁদা গ্রামটিতে। এই গ্রামটি অবশ্য একটু বিশেষই বলা চলে। সমগ্র সুইজারল্যান্ডে ২৬টি রাজ্য আছে। এ সব রাজ্যকে সুইস ভাষায় ক্যান্টন বলা হয়। মূলত ভালাইস ক্যান্টনের ভিস্প জেলায় রাঁদা গ্রামটির অবস্থান।

পাহাড়ের কোলঘেঁষে থাকা এই গ্রামটি প্রথমবার দেখলে মনেই হবে না বেশ ক’বার প্রাকৃতিক দুর্যোগ একে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল। এরমাঝে ১৮১৯ সালে এক তুষারধসের সময় পুরো গ্রামটিই যেন তলিয়ে গিয়েছিল। আবার নতুন করে নিজেদের গুছিয়ে নেওয়াটা মোটেও চাট্টিখানি কথা নয়।

জুরিখ থেকে রাঁদা গ্রামে যেতে হলে আপনাকে ট্রেনে চাপতে হবে। মাঝে একবারই ট্রেন বদলাতে হয়। এমনিতে যাতায়াতের ব্যবস্থা সুইজারল্যান্ডে অসাধারণ। এখানকার ট্রেনগুলোর জানালা বেশ প্রশস্ত। এমনকি কাঁচগুলোও ঝকঝকে। সেই স্বচ্ছতা দিয়ে চোখের দৃষ্টি গলে দেখা যাবে সুইস আল্পস পর্বতমালার সমাহার। এখানকার প্রকৃতি ভীষণ মায়াবী।

বিভিন্ন ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করে এখানে প্রকৃতি। শীতে গেলে দেখবেন চারদিকে বরফের পুরু আস্তর। হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডায় যেন নীরব কঠোর এক প্রকৃতি। তবু সেই তুষার দেখাতে কিছুটা হলেও আনন্দ আছে। বাংলাদেশের মানুষ গরমেই অভ্যস্ত। হাড় কাঁপানো শীতটা ঠিক তাদের মানায় না।

সেজন্যে গরমের সময়ই সুইজারল্যান্ডে যাওয়া ভালো। জুন-জুলাই মাসে প্রকৃতি যেন আপনার সামনে মেলে ধরবে নিজেকে। আকাশে মেঘের চিহ্ন নেই। কিন্তু পর্বতের পাশেই পেঁজা তুলোর মতো জমে থাকা সাদা মেঘগুলো আপনাকে মুগ্ধ করতে বাধ্য। পাহাড়ের ঘাড়ের ওপর দিয়ে যেন উঁকি মেরে হাসছে সূর্য। ট্রেনের জানালা খুলে দিলেই মৃদু বাতাস আর চারদিকে অজস্র ফুলের সারি ও মিঠে ঘ্রাণ।

রাঁদায় নামার সময় ছোট ট্রেন স্টেশনটিই যেন চমকে দিবে আপনাকে। স্টেশনঘরটি সুইস কাঠের বাড়ির আদলে বানানো। সুইজারল্যান্ডে একে শালেট বলা হয়। ছোট দোকান থেকে কফি নিয়ে একটু ইতস্তত ঘুরে বেড়ান। সুইস ফেডেরাল রেলওয়েজের বড় ঘড়িটা সহজেই চোখে পড়বে। যা করবেন এই ঘড়ি দেখেই করবেন। এর পেছনে এতটাই যত্ন নেওয়া হয় যে এই ঘড়ি কখনো ভুল সময় দেখায় না।

স্টেশন থেকে বের হয়েই দমকা বাতাস আপনাকে স্বাগতম জানাবে। রাঁদা গ্রামটিতে মাত্র ৪৫০ জন লোকের বাস। ছোটখাটো গ্রাম। এই গ্রামটি উইসহর্ন ও ডোম পর্বতশৃঙ্গের মাঝে অবস্থিত। জায়গাটি ছোট হলেও এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনন্যসাধারণ। সমস্যা হলো এখানে থাকার জায়গা খুব বেশি নেই। মাত্র দু-একটি হোটেল বা গেস্ট হাউস আছে। তবে সেটা খুব বড় সমস্যা নয়। তবে রাঁদা অবশ্য দর্শনার্থীদের ভিড়ে জমজমাট থাকে না।

রাঁদায় ঢোকার সময় লক্ষ করবেন পথের দুধারে কাঠের সুন্দর বাড়ি। গ্রামটিতে একটি ছোট গির্জা আছে। ছোট হলে কি হবে, মাথা উঁচিয়ে আপনাকে স্বাগতম জানাতেই দাঁড়িয়ে আছে।

রাঁদা নামটির অর্থ বলতেই তো ভুলে গেলাম। এটি ‘রাঁদ’ শব্দ থেকে এসেছে। এর মানে ‘সীমান্ত’। এখানকার গেস্ট হাউজগুলো আতিথেয়তার জন্যে প্রশংসিত। বিশেষত সামনের প্রশস্ত বারান্দাগুলো আপনাকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ করে দেবে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে ম্যাটারহর্ন পাহাড়টি হয়তো হোটেলের সামনেই হবে।

এই ম্যাটারহর্ন পাহাড় সুইজারল্যান্ড ও ইতালির মধ্যে বিভাজন তৈরি করেছে। এজন্যেই এর নাম সীমান্ত। এমনিতে ম্যাটারহর্নের জনপ্রিয়তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। কিন্তু ভিড় এড়াতে চাইলে রাঁদায় চলে আসুন। বারান্দায় বসে উপভোগ করুন সৌন্দর্য। পাহাড়ের দুই ধারে আল্পসের গাছের সারি। সেই সবুজ শরীর চিরে পাথুরে শরীর। একদম চূড়ায় আবার সাদা বরফের প্রলেপ। এমন সৌন্দর্য কি বাদ দেওয়া যায়?

যদি রাঁদায় কখনো যাওয়ার সুযোগ হয় ট্রেনেই যাওয়া ভালো। গ্রামটি গাড়িমুক্ত এলাকা। আর গাড়ি নিয়ে গেলে স্টেশনের পার্কিং এরিয়াতেই টিকিট কেটে পার্কিং করে আসতে হবে। চেনা সুইজারল্যান্ডের এক অপরিচিত অঞ্চলে ছুটি কাটানোর সুযোগটা খুব মন্দ হবে না।

অনন্যা/এআই

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ