Skip to content

২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শনিবার | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বরফ ও আগুনের দেশ আইসল্যান্ড

আইসল্যান্ড বরফ ও আগুনের দেশ হিসেবে পরিচিত৷ প্রকৃতিপ্রেমীদের স্বর্গ৷ রাজধানী রেইকইয়াভিক থেকে ৫০ কিলোমিটারের কম দূরত্বে দেশের দক্ষিণে গোল্ডেন সার্কেলের দ্রষ্টব্যগুলির দেখা মেলে৷ সহজেই নাগাল পাওয়া যায় বলে সেই সব জায়গা জনপ্রিয় আকর্ষণ হয়ে উঠেছে৷

গাড়ি ভাড়া নিয়ে নিজেই চালিয়ে সে সব জায়গায় যাওয়া যায়, অথবা পরিকল্পিত ট্যুরে অংশ নেওয়া যায়৷ ডিডাব্লিউর টিম এক দিনের রোড-ট্রিপ বেছে নিয়েছিলো৷ তাদের প্রথম গন্তব্য ছিল গ্যুটলফস বা সোনালি জলপ্রপাত৷ গোল্ডেন সার্কেল নামটা সেখান থেকেই এসেছে৷ ‘গাইড টু আইসল্যান্ড’-এর কাটরিন ফ্রেড্রিকসনের সঙ্গে দেখা করে মূল যাত্রা শুরু হলো৷ উপরের ভিউয়িং প্ল্যাটফর্ম থেকে তার সূচনা ঘটলো৷

এটাই হলো আইসল্যান্ডের সবচেয়ে বিখ্যাত জলপ্রপাত৷ সত্যি অসাধারণ৷ কিন্তু কেন? ‘গাইড টু আইসল্যান্ড’-এর প্রতিনিধি কাটরিন ফ্রেড্রিকসন, ‘‘আসলে মাত্র দুইটি অংশ দিয়ে এই জলপ্রপাত তৈরি হয়েছে৷ প্রথম অংশটি অনেকটি ধীর গতির নির্ঝর জলপ্রপাত৷ উচ্চতা ১১ মিটার৷ তারপর সেটি বিশাল উচ্চতা থেকে নীচে পড়ছে, ২১ মিটার৷ এমন সংমিশ্রণ এবং অসাধারণ গিরিখাতে বয়ে যাওয়ার কারণে এটি এমন সুন্দর৷”

এমন নিসর্গ দেখলে সত্যি বিস্ময়ে মুগ্ধ হতে হয়৷ শীতকালে জলপ্রপাতের কিছু অংশ জমে গেলে নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে৷ নিরাপত্তার কারণে শীতের মাসগুলিতে নীচের ভিউয়িং প্ল্যাটফর্ম বন্ধ রাখা হয়৷ সেখানে পৌঁছতে দশ মিনিট সময় লাগে৷ এটাই হলো নীচে থেকে দেখার ভিউয়িং পয়েন্ট৷ মনে হয় এটি বেশি পছন্দ হচ্ছে৷ মনে হচ্ছে, যেন জলপ্রপাতের মাঝেই রয়েছি৷

এবার হোইকাদালুর উপত্যকায় যাবার পালা৷ সেখানেই আইসল্যান্ডের বিখ্যাত স্ট্রোকুর ও গ্রেট গাইজার উষ্ণ প্রস্রবণ অবস্থিত৷ গাইজার এক বিরল প্রাকৃতিক আকর্ষণ৷ বিশ্বের হাতে গোনা কিছু জায়গায় এগুলির দেখা মেলে৷ এমনটা কীভাবে ঘটে? কাটরিন ফ্রেড্রিকসন বলেন, ‘‘আমাদের এটার মতো জিওথার্মাল এলাকার প্রয়োজন৷ তাছাড়া মাটির নীচে পানির উৎস থাকতে হবে, অনেকটা জলাধারের মতো৷ সেইসঙ্গে জলাধার থেকে ভূ-পৃষ্ঠ পর্যন্ত নির্গমনের পথও থাকা চাই৷ অনেকটা প্রাকৃতিক প্লাম্বিং সিস্টেমের মতো চাপের মুখে পানি উপরে ধেয়ে যায়৷”

স্ট্রোকুর আইসল্যান্ডের সবচেয়ে সক্রিয় গাইজার অবস্ছিত৷ প্রতি পাঁচ থেকে দশ মিনিট অন্তর ফুটন্ত গরম পানি আকাশে বেরিয়ে আসে৷ কখনো এমনকি ২০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত ফোয়ারা ওঠে৷ অনেকটা পচা ডিমের মতো গন্ধ৷

পরের গন্তব্য থিংওয়েটলির জাতীয় পার্ক৷ সেটির বিশাল ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে৷ হোইকাদালুর উপত্যকা থেকে গাড়িতে ৪৫ মিনিটে সেখানে পৌঁছানো যায়৷ সেখানে গেলে দুটি টেকটনিক প্লেটের মাঝে হাঁটার অভিজ্ঞতা হয়৷ পার্কটি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় রয়েছে৷ সেখানেই ৯৩০ খ্রীষ্টাব্দে আইসল্যান্ডের প্রথম সংসদীয় বৈঠক বসেছিল৷ আইসল্যান্ডের এই প্রথম জাতীয় পার্কের গুরুত্ব সম্পর্কে কাটরিন ফ্রেড্রিকসন বলেন, ‘‘ভূতাত্ত্বিক কারণে জায়গাটি সত্যি গুরুত্বপূর্ণ৷ আইসল্যান্ড দুটি টেকটনিক প্লেটের উপর অবস্থিত৷ থিংওয়েটলির জাতীয় পার্ক সে সব জায়গার মধ্যে পড়ে, যেখানে সেটা স্পষ্ট দেখা যায়৷ এই মুহূর্তে আমরা একটি টেকটনিক প্লেটের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছি, যেটি নর্থ অ্যামেরিকান টেকটনিক প্লেট৷ প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে ইউরেশিয়ান টেকটনিক প্লেটের দেখা মিলবে৷ দুটির মাঝে এক ধরনের ‘নো ম্যান্স ল্যান্ড’ রয়েছে, যা আসলে নতুন ভূখণ্ড৷”

প্রতি বছর আড়াই সেন্টিমিটার হারে সেটির সম্প্রসারণ ঘটছে৷

ব্লু লেগুনই শেষ গন্তব্য৷ অনেক মানুষ গোল্ডেন সার্কেল ট্যুরের সঙ্গে সেটিও দেখে নেন৷ ন্যাশানাল জিওগ্রাফিক বিশ্বের ২৫টি আশ্চর্যের যে তালিকা প্রস্তুত করেছে, এটিও তাতে স্থান পেয়েছে৷ রেইকইয়াভিক থেকে প্রায় এক ঘণ্টা দূরে জায়গাটি অবস্থিত৷ সেখানে গেলে একটি বিষয় মনে রাখতে হয়৷ পানিতে ঝাঁপ দেওয়ার আগে মাথার চুল ধুতে হবে৷ লম্বা চুল থাকলে বেঁধে নিতে হবে৷ কারণ লেগুনের পানি ত্বকের জন্য ভালো হলেও চুলের জন্য খারাপ৷ খনিজের ঘনত্বের কারণে চুল শুকিয়ে যেতে পারে৷ পানির মধ্যে সিলিকা সূর্যের আলোর প্রতিফলন ঘটায় বলে দুধের মতো নীল একটা আবরণ দেখা যায়৷

মানুষের তৈরি উষ্ণ প্রস্রবণ হওয়া সত্ত্বেও জায়গাটি সত্যি বিস্ময়কর৷ মাটির গভীরে পানির তাপমাত্রা ২৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ লেগুনে উঠে এলে সেই পানির তাপমাত্রা কমে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়ে যায়৷ অন্যান্য অনেক অতিথির মতো একটা সিলিকা মাড মাস্ক হাতে পাওয়া গেলো৷

অনন্যা/এআই

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ