দেশেই যখন কাঞ্চনজঙ্ঘা
হিমালয়কন্যা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দূরত্ব মাত্র ১১ কিলোমিটার। সাধারণত শীতের মেঘমুক্ত আকাশে তুষারশুভ্র পাহাড়ের চূড়া রোদে চিকচিক করে ওঠে আর ঠিক তখনই কাঞ্চনজঙ্ঘার সেই মোহনীয় শোভা উপভোগ করা সম্ভব হয়।
এভারেস্ট চূড়ার সোনালি আলোয় উজ্জ্বল বাংলাদেশের সর্বোত্তরের জনপদ হিমালয়কন্যা পঞ্চগড়। নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে পঞ্চগড় ও তেঁতুলিয়ায় এলে দেখতে পাবেন উত্তর আকাশ হিমালয়, কাঞ্চনজঙ্ঘা ও এভারেস্ট চূড়া সোনালি আলোয় উজ্জ্বল সুন্দর দৃশ্য। এ সময় আকাশ মেঘাচ্ছন্ন না থাকায় প্রতিদিন এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছে বিভিন্ন পেশাজীবীসহ ভ্রমণ পিপাসুরা। বিশেষ করে প্রতিদিন ভিড় জমছে জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার মহানন্দা নদীর তীরঘেঁষা পিকনিক কর্নারসহ বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে। এখান থেকে সুস্পষ্ট দেখা মেলে হিমালয়, কাঞ্চনজঙ্ঘা ও এভারেস্ট চূড়ার সুন্দর দৃশ্য।
পঞ্চগড় জেলা সফরে এলে একটা বাইনোকুলার সঙ্গে আনার চেষ্টা করবেন। যারা পঞ্চগড় জেলার বাইরের, এই পর্বত চূড়া দেখার আগ্রহ তাদের অনেকেই এমন অবস্থা যে, তারা পঞ্চগড় জেলায় শুধু পর্বতশৃঙ্গ 'কাঞ্চনজঙ্ঘা' দেখার জন্য ছুটে আসেন এবং প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার কারণে অনেকে তা দেখতে পান না। জেলার অন্যান্য দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে ধারণা না থাকায় সেগুলো না দেখেই হতাশ হয়ে ফিরে যান। 'কাঞ্চনজঙ্ঘা' দেখা যাদের মুখ্য উদ্দেশ্য তাদের পঞ্চগড় ঘুরতে অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বর মাসের যে কোনো সময় আসা ভালো। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি এই সময়ে এলে কেউ 'কাঞ্চনজঙ্ঘা' দেখতে পাবেন না। তবে কেউ শীত উপভোগ করতে চাইলে সেটা আলাদা কথা।
এ ছাড়া কাঞ্চনজঙ্ঘা মার্চের প্রথম থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়টায় দেখা যায়। যদি মেঘে আকাশ ছেয়ে থাকে অথবা আকাশ ভেঙে বৃষ্টি ঝরে তা হলে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার আশা বাদ দিতে হবে। সূর্যের আলোর সঙ্গে সঙ্গে কখনও শুভ্র, কখনও গোলাপি, আবার কখনও লাল রং নিয়ে হাজির হয় বরফে আচ্ছাদিত এই পর্বত চূড়া। তবে কাঞ্চনজঙ্ঘা উপভোগ করার মোক্ষম সময় হলো ভোর ও পড়ন্ত বিকেল। ভোরে আলো ফুটতেই তা গিয়ে পড়ে ঠিক কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়ায়।
এদিকে চারপাশে তখনও আবছা অন্ধকার থাকলেও চকচক করে চূড়াটি। ভোরের আলোয় এবং বিকেলে পর্বত চূড়াটি পোড়া মাটির রং নেয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা ঝাপসা হয়ে আসে। তখন রং হয় সাদা। দূর থেকে মনে হয় এ যেন আকাশের গায়ে এক খণ্ড বরফ। পর্বত চূড়াটির নিচ দিয়ে কালো রঙে দার্জিলিংয়ের পাহাড়ি এলাকা দেখা যায়। শীতের এমন আমেজ এবং কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য পঞ্চগড়ের একটি ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর এই সময়ে ভ্রমণপিপাসুরা পঞ্চগড় আর তেঁতুলিয়া ঘুরে তৃপ্ত হন।
যেভাবে যাবেন
ঢাকার গাবতলী থেকে পঞ্চগড়-তেঁতুলিয়াগামী বাসে করে পঞ্চগড়-তেঁতুলিয়া, সেখান থেকে তেঁতুলিয়া সরাসরি ডাকবাংলোর সামনে চলে যাবেন। ভাড়া নন এসি ৬৫০ ও এসি বাসে ১৬০০ টাকা।
একতা এক্সপ্রেস ট্রেনে সকাল ১০টায় কমলাপুর থেকে ছেড়ে যায়। পঞ্চগড় এক্সপ্রেস রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে কমলাপুর থেকে ছেড়ে যায়। ভাড়া শোভন চেয়ার ৫৫০ ও স্নিগ্ধা ১০৫০টাকা।
কোথায় থাকবেন
তেঁতুলিয়ায় থাকার জন্য রয়েছে আবাসিক হোটেল সীমান্তের পাড়, আরডিআরএস, কাজী ব্রাদার্স ও তেঁতুলিয়া জেলা পরিষদ ডাকবাংলো। ডাকবাংলোয় থাকার জন্য আগেভাগে কথা বলে যেতে হবে। পাহাড় দেখার জন্য খুব ভোরে ডাকবাংলোয় মহানন্দা নদীর পাড়ে বসে উপভোগ করুন কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য। যারা এখানে আসার জন্য প্লান করছেন, অবশ্যই আগে আবহাওয়ার আপডেট নিয়ে আসবেন, আবহাওয়া খারাপ থাকলে দেখা না পাওয়ার আশঙ্কাই বেশি।