নিলুফার জীবনের গল্প
পরিশ্রম,সততা ও প্রবল ইচ্ছে শক্তি থাকলে যে কোন স্বপ্ন হাতে এসে ধরা দেয়। এটার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত নিলুফা আক্তার। নিজের ইচ্ছাকে সম্বল করে চরম প্রতিকূলতাকে জয় করে জীবন যুদ্ধে সফল নারীদের পথিকৃৎ তিনি। অদম্য এই নিলুফা এখন নির্যাতনের স্বীকার, ভাগ্য বিড়ম্বিত হাজারো নারীর ঘুরে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরণা।
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার বুরুদিয়া ইউনিয়নের সালুয়াদী গ্রামে নিলুফার বাড়ি। নিলুফার বাবা খাইরুজ্জামানের আকস্মিক মৃত্যুতে তার পরিবার অভাবের মুখে পরে যায়। তিন ছেলে ও তিন মেয়েকে নিয়ে সংসারে দু'বেলা দু'মুঠো খাবার জোগাতে হিমশিম খেতে হতো তার স্ত্রী চম্পা আক্তারকে। এ কঠিন বাস্তবতায় অষ্টম শ্রেণিতেই থমকে যায় নিলুফার পড়াশোনা। ২০১৫ সালে তার বিয়ে হয় পার্শ্ববর্তী পাটুয়াভাঙ্গা এলাকার এক গার্মেন্ট কর্মীর সঙ্গে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, সেখানেও শাশুড়ি ও স্বামীর অত্যাচার নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে তার জীবন। পাশবিক নির্যাতনের একপর্যায়ে তার গর্ভের সন্তানও নষ্ট হয়ে যায়। স্বামী তালাক দেয়। ফিরে আসেন বাবার বাড়িতে। সামাজিকভাবে নিগৃহীত হয়ে ভাইয়ের সংসারে বোঝা হয়ে থেকে তার মন বিষিয়ে ওঠে। এসময় তার পরিচয় হয় মা ও শিশু স্বাস্থ্য বিষয়ক 'নতুন দিন' প্রকল্পের কমিউনিটি মোবিলাইজার সালেহা বেগমের সঙ্গে। এরপর থেকেই তার ভাগ্যের চাকা ঘুরতে থাকে।
সালেহার মাধ্যমে ২০১৭ সালের দিকে পপুলেশন সার্ভিসেস ট্রেনিং সেন্টারের (পিএসটিসি) নতুন দিন প্রকল্পের বৈঠকে উপস্থিত হন নিলুফা। সেখান থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে এসএমসির পণ্য বিক্রয় প্রতিনিধি গোল্ড স্টার মেম্বার হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে জন্মবিরতিকরণ পিল, কনডম, ফেমিকন, স্যানিটারি ন্যাপকিন জয়া, ওরস্যালাইন, মনিমিক্স ইত্যাদি পণ্য বিক্রি করে এবং মা ও শিশু স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ দিয়ে থাকেন তৃণমূলের গ্রামবাসীকে।
এসব পণ্য বিক্রি করে প্রতি মাসে ছয় থেকে সাত হাজার টাকা লাভ হয় তার। এর মাধ্যমে তিনি স্বাবলম্বী হন এবং সংসার চালাতে সক্ষম হন। এখন এলাকায় তিনি 'নতুন দিনের ডাক্তার আপা কিংবা জয়া আপা'নামে পরিচিত হতে থাকেন।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা স্বপন দত্ত বলেন, 'নিলুফা একজন স্বামী পরিত্যক্তা। অসচ্ছল পরিবারে তার জন্ম। তবুও জীবন সংগ্রামে তিনি থেমে যাননি। কঠোর পরিশ্রম, একাগ্রতা আর অদম্য মনোবল তাকে আজকের পর্যায়ে নিয়ে এসেছে।
নির্যাতনের বিভীষিকা ভুলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করা নিলুফা তার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে নারী ক্যাটাগরিতে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে সেরা জয়ীতা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। করোনার এই মহামারির সময়েও তিনি কঠোর স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ ও পালন করে তার কাজ চালিয়ে যান। তার সঙ্গে গ্রামের সাধারণ গৃহিণীরাও উপকৃত হচ্ছেন।