কৃষিতে নারীর বিচরণ বৃদ্ধি পাচ্ছে
বাংলাদেশ একটি কৃষিনির্ভর দেশ। সেই শুরু থেকেই দেশের গ্রামীণ জীবিকা ও অর্থনীতি কৃষিকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে। বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনীতিও অনেকটাই কৃষি নির্ভর। এই কৃষিতে গত কয়েক বছরে নারীর অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত আট বছরে কৃষি খাতে নারীর অংশগ্রহণ ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। শ্রমশক্তি জরিপ ২০১৬-১৭ অনুযায়ী ৭২.৬ শতাংশ গ্রামীণ নারী কৃষিকাজের সাথে জড়িত।
কেবল যে সাধারণ নারীর সংখ্যা বেড়েছে তা নয়, এর মধ্যে অধিকাংশই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। দিন দিন কৃষিতে প্রশিক্ষিত নারীদের বিচরণ বেড়েই চলেছে। এরকমই দুই নারীর গল্প আমরা আজ জানবো।
ফরিদপুর পৌরসভার গোবিন্দপুর গ্রামের সাহিদা বেগম। বাড়ি থেকেই পেঁয়াজের বীজ বিক্রি করেন তিনি। ফরিদপুরের বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা সাহিদার বীজ কিনতে আসেন। ২০০৪ সালে পাশের এক চাষিকে দেখে পেঁয়াজের বীজ চাষ শুরু করেন সাহিদা। প্রথম ৪০ শতাংশ জমিতে দুই মণ বীজ পান। ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। দেখেন এর চাহিদা অনেক, লাভও ভালো। এভাবেই শুরু হয় তার যাত্রা। প্রশিক্ষিত এই নারী আজ একজন সফল কৃষক। গতবছর ৩০ একর জমিতে পেঁয়াজ বীজ চাষ করে ২০০ মণ বীজ পান তিনি। চার কোটি টাকায় বিক্রি করেন এই বীজ। বাড়ি থেকে বীজ বিক্রি করে ৩ কোটি টাকা লাভ করেন তিনি। জাতীয় পর্যায়ে সফল নারী কৃষক হিসেবে তিনি প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।
আরেক সফল নারী হলেন সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের সাদুল্লাপুরের সাহানারা বেগম। তার নিজের কোনো জমি ছিলোনা। স্বামী অন্যের জমিতে কাজ করতো। তিনি নিজে কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন। বেশ কিছু প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তিনি। এরপর অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে ৬ শতক জায়গায় ফুল আর ৬ শতক জায়গায় গম চাষ শুরু করেন। আর বর্তমানে তিনি সারা বছরই শাক-সবজি, গম আর গোলাপের চাষ করেন। প্রথমদিকে তিনি একাই জমিতে কাজ করতেন। এতে তার অনেক কষ্ট হতো। একদিকে সংসার অন্যদিকে মাঠের কাজ। তবুও তিনি হারবার পাত্র নন। কঠোর পরিশ্রমের পর তিনি সফলতার মুখ দেখেছেন। আজ তার জমিতে গ্রামের অনেক নারী পুরুষ কাজ করে। বাড়ি থেকে ও বাজারে গিয়ে তিনি উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করেন। কৃষি বিষয়ক অনেক জ্ঞান রয়েছে তার।
এসব নারীর সফল কৃষির গল্প প্রেরণা যোগাবে অনেক নারীকেই। তবে কৃষিতে নারীর একটি বড় বাধা হলো মজুরি বৈষম্য। এ ব্যাপারে সাভার কৃষি কর্মকর্তা নাজিয়াত আহমেদ বলেন, অনেকেই মনে করেন, পুরুষের শক্তি বেশি বলে কাজ বেশি করে। তাই মজুরি বেশি। কিছু কুসংস্কার ও ধর্মীয় বিষয় এখনো নারীদের এগিয়ে চলার পথে বৈষম্য সৃষ্টি করে। মজুরি বৈষম্য দূর করতে পারলে নারীদের অর্থ উপার্জনে আরো উৎসাহিত করা সম্ভব হবে।