নিরাপদ কর্মজীবন কি তবে নারীদের জন্য নয়?
একটা সুন্দর স্বনির্ভর ভবিষ্যতের জন্য শহরে পড়তে যাবে বলে মফস্বলের মেয়েটি আবদার করলো বাবার কাছে। কিন্তু বাবা তো রাজি নয়। কোনোমতেই শহরে মেয়েকে পড়তে দেবে না। কিন্তু কেন? কারণ ঐ অতদূরে মেয়েটা একা থাকবে যদি একটা কিছু হয়ে যায়!
ভার্সিটি পড়ুয়া স্বপ্নবাজ দারুণ মেধাবী ছাত্রী আর তার প্রেমিক। মেয়েটি ছেলে বন্ধু গুলোর থেকে একটু দূরেই থাক, তাদের সাথে ঠিক কোথাও একা যাওয়া যাবেনা এইযে পজেসিভ ব্যাপার গুলো কি শুধুই তার ইগো হার্ট হয় বা তার ঠিক সহ্য হয়না এমন ভাবনা থেকে আসে? নাকি যে মানুষটা তার প্রেমিকাকে আজীবন জীবনসঙ্গী হিসেবে পাশে পাওয়ার শপথ নিয়ে রেখেছে সেই প্রেমিকা ওদের সাথে একা গেলে যদি কিছু হয়ে যায় এই ভয় থেকে!
যে স্বামী তার উচ্চশিক্ষিত বউয়ের সফল চাকরিজীবন খুব একটা মেনে নিচ্ছে না, আমতা আমতা করেই বলে ফেলে চাকরিটা না করলেই কি নয়? সেই স্বামী কি শুধু স্ত্রীর সফলতা কে মেনে নিতে পারছে না বলে এমন বাঁধা দেয় বাকি ঐযে ভয়টা, যদি কিছু হয়ে যায়!
এই সব 'যদি কিছু হয়ে যায়'র মত চারপাশে সত্যি তো নারীদের কত কিছু হয়ে যাচ্ছে। ইভটিজিং, ধর্ষণ রোজ হচ্ছে। কর্মস্থলে হয়রানি কিংবা যৌন হয়রানি রোজ হচ্ছে। বন্ধুর মত মুখোশ পরে থাকা কারোর সাথে হ্যাঙআউট বা ট্যুরে গিয়ে তাদের হাতেই ধর্ষণের শিকার হচ্ছে । তারপর প্রথম আলোর সিনিয়র সাংবাদিক রোজিনা আপার ঘটনা তো সকলের জানা। এরকম প্রতিটি কর্মক্ষেত্রেই কোন না কোন নারী এভাবেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হচ্ছে।
এরপর নিরাপদে সফল কর্মজীবন গড়ে তোলা 'যদি কিছু হয়ে যায় 'এর চক্করে আটকে দেওয়াটা আসলেই কি আমাদেরকে আগলে রাখা মানুষ গুলোর জন্য অযৌক্তিক? তার মানে কি এই যে নারী তার কর্মজীবন গড়বে না! নিজের পরিচয় তৈরি করবে না! এই সুন্দর পৃথিবীতে স্বনির্ভর হয়ে, নিজের পরিবারের দায়িত্ব নিয়ে, নিজেকে একজন দক্ষ, যোগ্য প্রমাণ করে বেঁচে থাকার স্বাদ নেবে না?
নাকি সেই প্রাগৈতিহাসিক কালের মত নারীরা ঘরবন্দী হয়ে গেলেই সকল সমস্যার সমাধান! তাহলেই কি থেমে যাবে সব দুর্নীতি, সব সহিংসতা, নারী অসম্মানের সমস্ত ঘটনা! নাকি জাতীর এই বিকৃত অসৎ মস্তিষ্কটা ভেঙে গেলে, অসুস্থ মানসিকতা বদলালেই থামবে সব! প্রশ্ন রইলো আপনার বিবেকের কাছে।