কার রেসিংয়ে ১৫ বছরের জুজুর বিস্ময়কর সাফল্য!
জাপানের মেয়ে জুজু নোদা। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তাক লাগিয়ে দিয়েছে পুরো বিশ্বকে। কার রেসিং দুনিয়ায় সফল সব রেসাররাই পুরুষ। মেয়েদের এই দুনিয়ায় সফলতা কুড়োতে খুব কমই দেখা যায়। কিন্তু সে ইতিহাস ভেঙে নতুন ইতিহাস গড়ার দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন ১৫ বছর বয়সী জুজু৷
যখন তার বয়সের বেশিরভাগ মেয়েদের হাতে খেলনা হিসেবে ছিল পুতুল ঠিক তখনি তার খেলার সঙ্গী ছিল বিভিন্ন ধরনের গাড়ি। যে বয়সে তিনি কথা বলা শিখছিলেন সেই বয়সে কথা বলার পাশাপাশি হাতেখড়ি নিয়েছেন কার রেসিংয়ের৷ ছোটবেলা থেকেই বেশ দুরন্তপনায় মেতে থাকতেন তিনি।
তার বাবা হিদেকি নোদাও ছিলেন একজন ফরমুলা ওয়ান কার রেসার৷ তাই যখন থেকেই তিনি জুজুর কার রেসিং প্রতি আগ্রহ দেখলেন তিনি বেশ আশাবাদী হতে থাকেন জুজুকে নিয়ে। জুজুর তৃতীয় জন্মবার্ষিকীতে তার বাবা তাকে একটি ছোট্টো রেসিং কার উপহার দেন। এবং এর পরের বছরই প্রথমবারের মতো জুজু কার রেসিংয়ে অংশগ্রহণ করেন এবং প্রথমবারেই জিতে যান।
এরপর থেকে প্রতিনিয়ত সে চেষ্টা করে যাচ্ছিল যতক্ষণ পর্যন্ত না তার বাবা ভেবেছিলো জুজু এখন এফ ওয়ান এর মতো বড় কোন প্রতিযোগিতার জন্য তৈরি। পক্ষান্তরে তার বাবাও জানতো জুজু কার রেসিংকে কতটা ভালোবাসে, গতিকে কত ভালোবাসে। তাই তিনি বিশ্বাস করতেন জুজু একদিন না একদিন ফরমুলা ওয়ান এর মতো প্রতিযোগিতায় জয়ী হওয়ার ক্ষমতা রাখে।
কিন্তু জুজুর স্বপ্ন পূরণের এ রাস্তায় হাটতে গিয়ে একমাত্র পাশে পেয়েছিল তার বাবাকেই। তিনি সফল হতে পারেন এ বিষয়ে আশেপাশের সকলেরই ছিল বেশ সংশয়। কারণ বিশ্বজুড়ে সকল সফল কার রেসারদের প্রায় সবাই পুরুষ। অন্যদিকে জুজু মাত্র ১৫ বছর বয়সী একটি মেয়ে। তাই বারংবার তার চারপাশ থেকে মনে করিয়ে দেয়া হয়েছিল সে একটি মেয়ে এবং বয়সেও বেশ ছোটো। এ পথে তার সফলতার আশা খুবই নগণ্য। তাই তাকে এ পথ থেকে ফিরে আসার উপদেশ দেয়া হয়েছিল বারবার।
জুজুর বয়সী অন্য সকলের থেকে সে ছিল বেশি পরিশ্রমী। তার চেষ্টাও ছিল অনবদ্য। কিন্তু তবুও কেউ বিশ্বাস করতে রাজি ছিলোনা, এই ছোট্টো মেয়েটি এতো বড় একটি প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করতে পারে। তাদের সকলকে ভুল প্রমাণ করে জুজু জয়ের শিরোপা জিতে নেন।
এই গল্প শুধু জুজুর একার নয়। সাথে তার বাবারও। যে একাই পুরো সময়টাতে জুজুকে সমর্থন করেছেন। সমাজের বাঁকা চোখের চাহুনিতেও টলে পড়েননি তিনি। তার কাছে সন্তানকে সমর্থন করে, উৎসাহ করে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই প্রধান লক্ষ্য। সেক্ষেত্রে ছেলেসন্তান বা মেয়ে সন্তান বলে কোন পার্থক্য ৷ আমাদের সমাজে বর্তমানে নারীদের নিয়ে তৈরি হওয়া দেয়াল ভেঙে দিতে দরকার শুধু বাবা-মায়ের এমন সমর্থন এবং উৎসাহ যে সমর্থনের মাধ্যমে জুজু পুরো বিশ্বজয় করেছেন।