বাগদান থেকে বৌভাত, বিয়ের পোশাক
সামনেই বিয়ের মরশুম। বিয়ে বাড়ি মানেই সর্বদা এক রমরমা ভাব থাকবে। সে হোক খাওয়া দাওয়া, আনন্দ অনুষ্ঠান বা পোশাক। বর্তমানে সবাই নিজেদের বিয়ের পোশাকে আনতে চান ভিন্নতা। আর চাইবেন নাই বা কেন। বিয়ের পোশাক যদি পছন্দসই না হয় তবে যেন পুরো সাজটাই থেকে যায় অপরিপূর্ণ। আজকাল বিয়ের অনুষ্ঠান মানে একদিনের অনুষ্ঠান নয়। প্রায় সবাই আয়োজন করেন বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান। তাই তো অনেকেই বিয়ের বহুদিন আগে থেকেই ভেবে রাখে কোন অনুষ্ঠানে কোনধরনের পোশাক পরিধান করবেন। আজ আমরাও কথা বলবো বাগদান থেকে বৌভাত পর্যন্ত বিয়ের পোশাক নিয়ে:
বাগদান
প্রথমেই আসে বাগদানের পর্ব। এদিনে সাধারণত গাঢ় রঙের পোশাক পছন্দ না করাই ভালো। বাঙালি নারীরা সবধরনের অনুষ্ঠানেই শাড়িকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। তবে বাগদানের দিন শাড়িকে একটু পাশে রাখাই ভালো। এদিন সাধারণত জরজেটের পাথর বা জড়ির কাজ করা লেহেঙ্গা বা গাউন পড়তে পারেন। আর শাড়ি যদি পড়তে চান সিল্ক এবং জরজেটের ভারী কাজ ও নকশার শাড়ি পড়তে পারেন। আর রঙের ক্ষেত্রে পছন্দ করতে পারেন গোল্ডেন, বাদামি, অফ হোয়াইট বা এধরনের কিছু হাল্কা রঙ। সাথে পাথরের কিছু গহনা; হাতভর্তি চুড়ি, গলায় নেকলেস, কানে দুল, মাথায় বড় একটি টিকলি।
মেহেদি
আজকাল বেশিরভাগ বিয়েতেই মেহেদি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনেকে বেশ আয়োজন করে আবার বড় করে না হলেও ঘরোয়াভাবে অনেকেই মেহেদি অনুষ্ঠান সারেন। এইদিনে ভারী কোনো পোশাক না পড়ে হালকা ধরনের ছোটো হাতার কোনো পোশাক পরতে পারেন। এক্ষেত্রে সাধারণত হালকা গোলাপি, গোল্ডেন, কমলা, হালকা নীল, আকাশী রঙয়ের লেহেঙ্গা, গাউন, সারারা বেশ মানানসই। বিভিন্ন ধরনের ফ্লোরাল কাজ করা সিম্পল পোশাক বেশ মানানসই হবে। আর সাথে সিম্পল গহনা।
গায়ে হলুদ
গায়ে হলুদ বাঙালির বিয়ের সাথে বহু আগে থেকেই জড়িত। গ্রামে কিংবা শহরে জমকালোভাবেই সাধারণত আয়োজন করা হয় গায়ে হলুদের । গায়ে হলুদ মানেই যে ধরনের পোশাকই পড়া হোক না কেন তাতে থাকবে হলুদের ছোঁয়া। অবশ্য এ ধারণা থেকে বর্তমানের বিয়েগুলোতে ভিন্নতাও দেখা যায় । হলুদের পরিবর্তে ভিন্ন ভিন্ন রঙের পোশাক পছন্দ করছেন অনেকেই। যেমন: কমলা, হালকা সবুজ, বাসন্তী। তবে রঙ যাই হোক পোশাক হিসেবে হলুদে শাড়ির প্রাধান্যই অধিক। আটপৌরে ধাঁচে শাড়ি সাথে কোমরে বিছা। হাতায় নকশা করা এবং একদম হালকা পাথর বা জড়ির কাজ থাকতে পারে ব্লাউজে এছাড়াও অনেকে লেহেঙ্গাও পড়েন। এক্ষেত্রে খুব বেশি ভারী কাজ বা খুব বেশি হালকা কাজের পোশাক নির্বাচন না করাই ভালো। লেহেঙ্গার ওড়নাটা জরজেটের ওপরে একটু স্টাইলিশ নিতে পারেন। শাড়ি কিংবা লেহেঙ্গা যাই হোক সাথে থাকুক ফুলের গহনা।
বিয়ে
বাঙালির বিয়ে আর চোখের সামনে লালরঙ ভেসে উঠবে না এমনটা হতে পারে না। আজকাল অনেকেই লেহেঙ্গাকে প্রাধান্য দিলেও বেনারসির জায়গা খুব একটা টলাতে পারেনি কেউ। অনেকে শখ করেই পড়েন বেনারসি। বিয়ের দিনে লাল বেনারসির আবেদন যে চিরন্তন। অনেকে ভারী বেনারসি সংগ্রহ করতে না পারলেও চিন্তা নেই। আজকাল হালকা কাতান সিল্কের ওপরই সুন্দর কাজ করা বেনারসি তৈরি হচ্ছে, যা আরামদায়ক তো বটেই। এর সাথে গাভর্তি গহনা, যেন এক মহনীয় সাজ। লেহেঙ্গা হলেও লাল, গোলাপি, মেজেন্টা, খয়েরি রঙের ভারী রঙের ভারী কাজের লেহেঙ্গা পছন্দ করতে পারেন। বেনারসির কুঁচি এবং আঁচলে থাকতে পারে জমকালো কাজ। এ ছাড়া বেনারসি এবং লেহেঙ্গাতে বালুচরির কাজ, কনট্রাস্টিং পাড়, ফ্লোরাল কাজ, জ্যামিতিক নকশা ইত্যাদি থাকতে পারে। জর্জেটের ওপর স্টোনের কাজ করা লেহেঙ্গাও বেশ জনপ্রিয়।
বৌভাত
বিয়ের পর্বটা শেষ হতে না হতেই কড়া নারে বৌভাত। আর এই পর্বের মাধ্যমেই বিয়ের সকল অনুষ্ঠান শেষ হয়। তাই এইদিনের সাজটা হওয়া উচিত একদম পয়সা উসুল সাজ। হলুদ অনুষ্ঠানে, বিয়েতে যেমন হলুদ এবং লাল রঙের আধিক্যের প্রচলন দেখা যায় বৌভাতের সাজপোশাকে তেমন কোনো রঙের বাধ্যবাধকতা থাকে না। বৌভাতের পোশাক অনেকটা নির্ভর করে বিয়ের পোশাকের উপর। বিয়েতে ট্র্যাডিশনাল শাড়ি পরলে বৌভাতে ট্রেন্ডি ধাঁচের শাড়ি বৈচিত্র্য আনে। শাড়ির ক্ষেত্রে মসলিন, নেটের ওপর লেইসের নকশা, জামদানি শাড়ি বেছে নিতে পারেন। আর শাড়ি পড়তে না চাইলে লেহেঙ্গা, গাউন, ঘাগরা পড়তে পারেন। বৌভাতে গাঢ় কোনো রঙ নয় বরং চাপা সাদা, সোনালি, হালকা পিংক, হালকা বেগুনি রঙের পোশাক পছন্দ করতে পারেন। আর সাথে গাভর্তি গহনা।
বিয়ে নিয়ে প্রতিটি মেয়ের জীবনেই থাকে অনেক স্বপ্ন। আর বিয়েতে অতিথিদের জন্যও মূল আকর্ষণ থাকে কনের সাজ। কনের সাজের ভিন্নমাত্রা যোগ করে বিয়ে উৎসবকে দেয়া যায় অনন্যতা। আর পারফেক্ট সাজের জন্য প্রথমেই দরকার পারফেক্ট পোশাক। তাই বিয়েতে মানানসই পোশাক নির্বাচন করে তাক লাগিয়ে দিন, যাতে অতিথিদের চোখও তৃপ্তি পায়।