মাছের মাথাটা আমার ছেলেই খাবে, মেয়ে কেন নয়?
‘মাছের মাথাটা আমার ছেলেই খাবে’ আমাদের সমাজের খুব পরিচিত একটি বাক্য। নারীর প্রতি অবহেলার যতগুলো দিক রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো খাদ্য বিতরণ। খাবার বণ্টনে নারীদের অবহেলার চোখেই দেখা হয়।
সেদিন হঠাৎ করেই দুপুরে বেশ কয়েকজন বন্ধুকে সাথে নিয়ে এলো রাহেলা বেগমের ছেলে৷ ছেলে, স্বামী আর ছেলের বন্ধুকে খেতে দিয়ে শেষে ঝোল আর দুমুঠো ভাত মেখে খেয়ে নিলেন তারা মা-মেয়ে। এমন ঘটনা প্রায়শই ঘটে তাদের পরিবারে। আগে স্বামী সন্তানকে খেতে দিয়ে যা থাকে তাই দিয়ে পেট পুজো করেন এই নারী। এ কি শুধু ঐ একটি পরিবারের চিত্র?
আমাদের সমাজের চিরাচরিত চিত্র হলো, আগে পরিবারের পুরুষ সদস্যরা খাবে তারপর অবশিষ্ট থাকলে নারীরা খাবেন। আজকাল আধুনিক যুগে সিলিং ফ্যান কিংবা এসি চলার কারণে হাতপাখার প্রচলন উঠে গিয়েছে। তবে একটা সময় ছিলো যখন পুরুষ সদস্যের খাওয়ার সময় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাতপাখা নাড়তে হতো নারী সদস্যদের।
সেই দিন গুলো পুরনো হলেও খাবার নিয়ে নারীর প্রতি বৈষম্যের দিকগুলো এখনো খুব একটা পুরনো হয়নি৷ কষ্ট করে ঘাম ঝরিয়ে রান্না করার পর নারীকে অপেক্ষা করতে হয় সবার খাওয়ার পর কোন খাবার গুলো বাঁচলো তা দেখার জন্য।
খাবার বিতরণের সময় মাছ কিংবা মাংসের বড় টুকরো সংরক্ষণ করা হয় ছেলে সন্তানের জন্য। এখনও অনেক পরিবারে এক গ্লাস দুধ খাওয়ার অধিকার কেবল ছেলে সন্তানেরই রয়েছে৷ নানান পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার থেকে বঞ্চিত করা হয় কন্যা সন্তানকে। শিশু বয়স থেকেই শুরু হয় এই বৈষম্য। এরপর বয়স বাড়ার সাথে সাথে বৈষম্যও বৃদ্ধি পেতে থাকে। আর নারীরাও এ বিষয়গুলোর সাথে অভ্যস্ত হতে থাকে। তাই তো পরিবারের সবার পুষ্টির জোগান দেন যে নারী তার নিজেরই পুষ্টির ঘাটতি থেকে যায়।
মা-শিশুরা অপুষ্টির সহজ ও নির্মম শিকার। সুষম খাবারে অভাবে শরীরে নানা রকম জটিলতা দেখা দেয়। এর মধ্যে অস্টিওপরোসিসও একটি।অস্টিওপরোসিসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে প্রত্যেক তিনজনের একজন নারী। সাধারণত নারীর হাড়ের ঘনত্ব পুরুষের চেয়ে কম থাকে। এ কারণে বয়স ৫০ বছর পার হওয়ার পর বাংলাদেশে ৩০ শতাংশ নারী অস্টিওপরোসিসে আক্রান্ত হন।
বিভিন্ন বয়সে নারীরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শুধুমাত্র খাদ্যের অসম বণ্টনের ফলে। চাহিদার তুলনায় মাত্রাতিরিক্ত কম পুষ্টি গ্রহণ করছেন নারীরা৷ বর্তমানে অনেক পরিবারই খাদ্যের সুষম বণ্টন করতে সক্ষম হলেও বেশিরভাগ পরিবারই সেই চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী চলে আসছে। যা নারীর শারীরিক সুস্থতার পথে প্রধান অন্তরায়।