Skip to content

৮ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বুধবার | ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আসছে মন্দা, প্রস্তুত হওয়ার সময় এখনই

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাস। সংক্রমিত হয়েছে প্রায় ১৩ লাখ মানুষ। গত চার মাসে প্রাণহানি ঘটেছে ৭০ হাজারেরও বেশি। এক রকম লকডাউন পুরো বিশ্ব। জীবন বাঁচাতে যে যার বাড়িতে অবস্থান করছেন দীর্ঘদিন ধরে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে অফিস, আদালত, ব্যাংক, কারখানা, গণ-পরিবহন, এমনকি আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ব্যবস্থা। জীবন বাঁচলেও তাই সামনে অপেক্ষা করছে অর্থনৈতিক মন্দা। শুধু বাংলাদেশে নয়, এই মন্দা দেখা দেবে বিশ্বব্যাপী। মন্দার সময় সাধারণত পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে। ফলে চাকরি হারায় অগণিত মানুষ, দেশের আয় কমে যায়, এমনকি দেউলিয়া হয় বহু প্রতিষ্ঠান। সর্বশেষ ২০০৭ ও ২০০৮ সালে বিশ্ব মুখোমুখি হয়েছিলো অর্থনৈতিক মন্দার। সেই স্মৃতি পুরনো হতে না হতেই আবার আরেকটি মন্দার সম্মুখীন গোটা বিশ্ববাসী।

 

বিশ্বের প্রায় ১৯০ দেশে রয়েছে করোনার সংক্রমণ। চীনের পর আমেরিকা, স্পেন, ইতালি, ইরানের অবস্থা এখন শোচনীয় পর্যায়ে। এক রকম লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। কোনোভাবেই যেন হার মানানো যাচ্ছে না এই ভাইরাসকে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ বা বিশ্বব্যাপী এই পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে। ইতোমধ্যে বাতিল হয়েছে হাজার কোটি টাকার ক্রয়াদেশ। আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি থাকায় অভ্যন্তরীণ বাজারেও দেখা দিয়েছে ক্রেতা সংকট। এই পরিস্থিতি আরো কতদিন চলবে, তাও ঠিক করে বলা যাচ্ছে না। দেশের রপ্তানি খাত থেকে শুরু করে গণ-পরিবহন এমনকি গলির মুখের দোকানও হয়ে পড়েছে স্থবির। সব মিলিয়ে হয়তো দেশের সবচেয়ে বড় সংকট দেখা দিতে যাচ্ছে ব্যবসায়। আর এর ফলে বিপাকে পড়তে যাচ্ছেন বেসরকারি খাতের শ্রমিক, চাকরিজীবী, ছোট ব্যবসায়ী, হকার, রিকশা ও অটো-রিকশাচালক ও শ্রমজীবী মানুষ। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো আয় কমতে শুরু করেছে, ফলে দেরি হতে পারে বেতনের ক্ষেত্রেও। তবে অবস্থা আরো খারাপও হতে পারে। অনেকেই বিনা বেতনে বাধ্যতামূলক ছুটির মুখে পড়তে পারেন, চাকরি হারাতে পারেন কিংবা অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধও হয়ে যেতে পারে।

 

মূলত মন্দা হল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাওয়া এবং সেটা কয়েক মাস স্থায়ী হওয়া। এ সময় মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) কমে যাবে, শিল্পের উৎপাদন কমবে, পণ্য বিক্রি কমবে। মানুষের জীবনের ওপর প্রভাব হলো, আয় কমে যাবে। বিশ্ববাসী ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী মন্দার সম্মুখীন হয়েছিল ১৯২৯ সালে। প্রায় ১০ বছর ধরে চলার পর এই মন্দার অবসান ঘটে ১৯৩৯ সালে। একে মহামন্দা বলা হয়। আর সর্বশেষ ২০০৭ ও ২০০৮ সালে বিশ্ব মুখোমুখি হয়েছিলো অর্থনৈতিক মন্দার। এ সময় চাকরি হারায় অনেক মানুষ, দেউলিয়া হয় বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। করোনার সংক্রমণের ফলে এমনই একটি অর্থনৈতিক মন্দার সম্মুখীন হতে চলেছে বিশ্ব। আগামী কয়েক মাসের এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে চলে এলেও এর বিশ্ব অর্থনীতিতে এর প্রভাব হবে সুদূর প্রসারী। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাও একই কথা বলছে। যেমন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার হিসাবে করোনার কারণে বিশ্বজুড়ে আড়াই কোটি মানুষ কাজ হারাতে পারেন।

 

এ ধরনের মন্দার সময় নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সরকার কিংবা ব্যক্তি পর্যায় থেকে নানা সহায়তা ও প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। কিন্তু মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত, যারা মোটামুটি ধরনের চাকরি বা ব্যবসা করে জীবন যাপন করেছেন, তাদের বিপাকে পড়তে হতে পারে এই সময়টাতে। দেশের বেসরকারি খাতে যারা কর্মরত রয়েছেন, তাদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। তাই এখনই নিজের পরিবারের আর্থিক সুরক্ষায় কিছু পদক্ষেপ নিয়ে রাখতে হবে। গত বছরের অক্টোবরে মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস মন্দা থেকে নিজেকে রক্ষায় কিছু পরামর্শ দেয়। সেখানে মন্দা চলাকালীন সময়ের জন্য প্রস্তুতি-সরূপ কিছু পদক্ষেপের কথা বলা হয়,

 

  • প্রথমটি হলো জরুরি তহবিল তৈরি। একজন দায়িত্বশীল মানুষের মোটামুটি ছয় মাসের জন্য নিজের পরিবার চালানোর অর্থ নিজের কাছে জমা রাখা উচিৎ। আপনি ছয় মাস না পারলেও অন্তত তিন মাসের সমপরিমাণ অর্থ জমা রাখুন। ফোর্বস বলছে, এখন যে কাজটি আপনি সবচেয়ে জরুরি ভিত্তিতে করতে পারেন, সেটি হলো তহবিল গঠন এখনই শুরু করা। মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের অংশ হিসেবে যে ব্যাংকে আপনার বেতন হয়, সেখানে গিয়ে সঞ্চয়ী হিসাব (ডিপিএস) খুলতে পারেন। বেতন হলেই ব্যাংক জমা খাতে টাকা কেটে রাখবে। যেহেতু হাতে আসবে না, সেহেতু খরচের সুযোগ নেই।

 

  • তবে বেতন কম হওয়ায় যদি দ্রুত জরুরি তহবিল গঠন না করতে পারেন তাহলে খরচ কমিয়ে ফেলুন। বেতনের ১০ থেকে ২০ শতাংশ অর্থের সমপরিমাণ খরচ কমিয়ে ফেলা তেমন কঠিন নয়। এ জন্য আপনার খরচের একটি তালিকা করে ফেলুন। সেখান থেকে কোন কোন খরচ কমানো যায়, সেটি খুঁজে বের করুন। বাসা ভাড়া ও নানা সেবার বিল বাবদ স্থায়ী খরচ কত, বাজার খরচ কত, ছেলেমেয়ের শিক্ষার খরচ কত, নিজের খরচ কত- এসবের পূর্ণাঙ্গ তালিকা থাকলে আপনি কোথায় কোথায় খরচ কমাতে পারবেন, তা ঠিক বের করে ফেলতে পারবেন।

 

  • আপনি যে চাকরি বা ব্যবসা করেন, সেটি যদি হারানোর ঝুঁকি থাকে, তাহলে ভিন্ন পথ এখনই দেখুন। মন্দা এসে গেলে প্রতিষ্ঠান বন্ধের সহজ শিকার হওয়ার দরকার নেই।

 

  • আগে হিসাব করুন কয়েক বছর চলতে আপনার কত টাকা লাগতে পারে। সেই টাকায় বন্ডের মতো বিভিন্ন সঞ্চয় স্কিমে রাখুন।

 

  • শেয়ারবাজারের উত্তাপ-শীতলতা পরিবার থেকে দূরে রাখুন। পুঁজিবাজারে ধসের কারণে সারা দিন মুখ গোমড়া করে বসে থাকবেন। স্বামী–স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করবেন, এটা হতে পারে না। কারণ, আপনার রোজগার তো পরিবারের জন্যই।

 

  • কোনোভাবেই বাজে খরচ করবেন না। পুরনো হয়ে গেলেও রেফ্রিজারেটরটি আরও কিছুদিন ব্যবহার করুন। নতুন মডেলের মুঠোফোনের দিকে নজর দেবেন না। জুতা-জামা না কিনলে ভালো। খরচ বাঁচাতে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) চালানো বন্ধ রাখতে পারেন, কফি খাওয়া বাদ দিতে পারেন, বাইরে খাওয়া বাদ দিতে পারেন। বাজার খরচ কমিয়ে ফেলাটা সহজ নয়। তবু চেষ্টা করতেই হবে।

 

আপনার চাকরি-রোজগারের বিষয়ে স্ত্রী–স্বামী, সন্তানদের জানান। তাদেরও পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে উৎসাহিত করুন। পরিবার যদি পাশে থাকে, কোনো সংকটই আসলে সংকট নয়।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ