সার্টিফিকেটের ঠাঁই যেন শুধু আলমারিতেই না হয়
মানুষের মৌলিক চাহিদার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শিক্ষা। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড: শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতি জীবনে উন্নতি করতে পারে না। এমন কথা তো আমরা অনেকদিন ধরেই শুনে আসছি। উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে আমাদের শিক্ষা গ্রহণের গুরুত্ব অপরিসীম। নিজেকে সুন্দরভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে শিক্ষা ছাড়া বিকল্প কিছু চিন্তা করা যায় না। জন্মের পর মা-বাবা সন্তানকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে আপ্রাণ চেষ্টা করেণ। শত কষ্টের মধ্যেও সন্তানকে লেখাপড়া করান। সন্তানরাও মনোযোগ দিয়ে দিন- রাত কষ্ট করে লেখাপড়া করার চেষ্টা করে। মা-বাবার মুখে হাসি ফোটাতে বড় বড় ডিগ্রি অর্জনের জন্য দিনের পর দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে। আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে এই কথাটির পেছনে সন্তানের শিক্ষা গ্রহনের আকাঙ্ক্ষা অনেক
তীব্র থাকে। কিন্তু আধুনিক সময়ে আমাদের মধ্যে সন্তানকে শিক্ষা দেওয়ার ভাবনায় পরিবর্তন এসেছে। শিক্ষা মানে এখন সার্টিফিকেট ও প্রতিষ্ঠানের ভার।
আগের সময়ের অনেক বইয়ে দেখা যেতো একটি ছট স্কুলের সঙ্গে বড় স্কুলের প্রতিযোগীতা চলছে। স্কুলে কোনো বিদ্যাধর শিক্ষার্থীকে পরিচর্যা করে জেলায় ফার্স্ট করানোর আপ্রাণ চেষ্টা। এখন খোদ স্কুলই বলে, ভালো করলে আমার এখানে ভর্তি হতে পারবে। কলেজেও তাই। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে আরে সংকট। তারপর একসময় আসে সার্টিফিকেট। নারীর শিক্ষার অংশগ্রহন বেড়েছে। অন্তত বিগত এক দশকে তো অনেক বেড়েছে। কিন্তু কজনই বা পূর্ণাঙ্গভাবে নিজের ক্যারিয়ার গড়েছেন। এখন বাবা-মায়েরা ক্যারিয়ার কেন্দ্রিক ভাবেন। সন্তানের ক্যারিয়ার নিয়ে ভেবে তাদের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই।
আবার অনেকের জন্য লেখাপড়া শুধু সংসারে একটা সার্টিফিকেট ঘরে রাখা। এর বেশি কিছুই নয়।
বড় ডিগ্রি অর্জন আমাদের জন্য যথেষ্ট নয়, প্রকৃত মানুষ হওয়াটাই আসন। সার্টিফিকেট দেখে কখনো প্রকৃত মানুষ চেনা যায় না। শুধু সার্টিফিকেট অর্জনের জন্য লেখাপড়া করে প্রকৃত মানুষও হওয়া যায় না। আমাদের জীবনে সার্টিফিকেট যেমন। প্রয়োজন, প্রকৃত মানুষ হওয়া তার চেয়েও বেশি প্রয়োজন। চেষ্টা করলে টাকার বিনিময়ে সার্টিফিকেট কেনা যায়: কিন্তু প্রকৃত মানুষ হওয়া যায় না। তাই আমাদের লক্ষ্য থাকতে হবে-সার্টিফিকেট অর্জনের পাশাপাশি প্রকৃত মানুষ হওয়া। প্রকৃত মানুষের মধ্যে যে গুণাবলি রয়েছে আমাদের মধ্যেও সেই গুণাবলি বারণ করতে হবে। আমাদের দেশে পাবলিক পরীক্ষার সময় পরীক্ষার্থীর চেয়ে অভিভাবকের মধ্যে বেশি প্রতিযোগিতা লক্ষ করা যায়। সন্তানকে জিপিএ-৫ পেতেই হবে। জিপিএ-৫ ছাড়া ফলাফলের যেন কোনো মূল্য নেই। কখনো কখনো ভালো ফল করতে না পারলে সন্তানের ওপর মানসিক চাপ প্রয়োগ করা হয়। যা সন্তানের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময় আত্মহত্যার পথ বেছে নিতেও বাধ্য হয়। এজন্য একজন সচেতন অভিভাবকের কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ মোটেও আশা করা যায় না।।
সন্তানকে দিতে হবে নৈতিক শিক্ষা। শুধু সার্টিফিকেট অর্জনের জন্য চাপ প্রয়োগ না করে প্রকৃত মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে। হবে। একজন প্রকৃত মানুষ কখনো মানুষের, সমাজের কিংবা দেশের ক্ষতি করতে পারে না। একজন প্রকৃত মানুষ বোকা নয় বরং দেশের মূল্যবান সম্পদ। প্রকৃত মানুষ মানুষ অহংকারমুক্ত অঃ জীবনযাপন করে, পরোপকার করতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করে। তাই আমরা সব ধরনের লোভ-লালসা ভুলে নিজেকে প্রকৃত মানুষ হিসাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করব। নিজেকে প্রকৃত জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করে তুলব। তাই প্রকৃত মানুষ হওয়ার জন্যই আমন্ত্র শিক্ষা নেব, শুধু সার্টিফিকেট অর্জনের জন্য নয়। মূলত নৈতিক শিক্ষা দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে আনার মূল উদ্দেশ্যই হলো নারীদের আত্মসম্মানের বিষয়টিকে জোর দেওয়া। একজন নারী আত্মসচেতন হবেন। তার অধিকার সম্পর্কে জানবেন। তিনি চেষ্টা করবেন তার শিক্ষাগত যোগ্যতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করার। যদি তিনি তা না পারেন তাহলে তিনি বার্থ। আর এই ব্যর্থতার বৃত্তবন্দি অনেক নারী। তারা সার্টিফিকেট পেয়ে সংসারে শিক্ষিত মা উপাধী পান। কিন্তু সংসারে বাঁচেন আগাছা হয়ে। এমনভাবে বেঁচে কোনো ফায়দাই নেই। আধুনিক বিশ্বে লেখাপড় ক্যারিয়ারের পথ। এই পথে বড় লক্ষ্য নিয়েই এগুতে হয়। যদি না আগানো যায়, তাহলে সত্য সভাই পরিবর্তনের দিকে যাওয়া উচিত। সার্টিফিকেট শুধু ঘরে সাজিয়ে রাখার কিছু হওয়া উচিত না।