পোকা গোনা কাজ যাদের
কেউ আপনাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পোকামাকড় গুনতে বললে বিরক্ত হতে পারেন৷ মনে হতে পারে, এটা কোনো কাজ হলো? বন শহরে একদল স্বেচ্ছাসেবী সেই কাজটাই আনন্দের সাথে করছেন৷
উদ্দেশ্য – জলবায়ু পরিবর্তন, নগরায়নের মতো বিষয়াদি পোকামাকড়ের উপর কী ধরনের প্রভাব ফেলছে তা জানা৷
পোকামাকড় গোনা অসম্ভব ব্যাপার মনে না হলেও হতাশাজনক কাজ মনে হতেই পারে৷ তবে জার্মানির বন শহরের এক বেসরকারি উন্নয়নসংস্থার জন্য এটি এক গুরুত্বপূর্ণ সিভিল সায়েন্স প্রকল্প৷ পোকা গোনা স্বেচ্ছাসেবীদের একজন জীববিজ্ঞানে স্নাতক ইওহানেস ক্রাসম্যান৷
তিনি বলেন, ‘‘আমার কাছে যে বিষয়টি সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের মনে হয়েছে সেটা হচ্ছে, অনেক রকমের কীটপতঙ্গ রয়েছে৷ এবং সবগুলো সম্পর্কে আমাদের সম্পূর্ণ ধারণা নেই৷ আর অধিকাংশ পোকাই খুব দ্রুত নড়াচড়া করে: তারা উড়তে পারে, মাটিতে থাকতে পারে৷ ফলে তাদের পর্যবেক্ষণ করতে খুব কম সময় পাই আমরা৷”
এই পাইলট প্রকল্পের আওতায় বনে স্বেচ্ছাসেবীরা শহরাঞ্চলে কীটপতঙ্গ পর্যবেক্ষণের একটি কার্যকর পন্থা গড়তে বিজ্ঞানীদের সহায়তা করছেন৷ জার্মান বেসরকারি সংস্থা বন সায়েন্স শপ আগ্রহীদেরকে একটি ওয়ার্কশপে আমন্ত্রণ জানিয়েছে যেখানে কীটপতঙ্গ পর্যবেক্ষণ এবং পেশাগতভাবে সেগুলো বর্ণনা করা শেখানো হয়৷
বন সায়েন্স শপের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মনিকা কোনিগোর্স্কি বলেন, ‘‘আমরা অপেশাদার মালীদেরকেও এই প্রকল্পে অন্তর্ভূক্ত করেছি, কারণ, কীটপতঙ্গ কার্যকরভাবে এবং সহজভাবে পর্যবেক্ষণ করতে কী দরকার তা তারা জানেন৷”
প্রকৃতিপ্রেমী এবং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণে আগ্রহী স্বেচ্ছাসেবীদের ছাড়া এরকম বিস্তৃত গবেষণা প্রকল্প পরিচালনা কার্যত অসম্ভব৷
স্বেচ্ছাসেবী ইওহানেস ক্রাসম্যান বলেন, ‘‘আমরা সারাদিন ধরে কাজ করি বা কাজের দিকে মনোযোগ দিয়ে থাকি এবং আমাদের চারপাশে খেয়াল করি না৷ কিন্তু বাইরে যাওয়া, প্রকৃতি এবং কীটপতঙ্গ দেখা, গাছপালা পর্যবেক্ষণ করা এবং আমাদের ইকোসিস্টেমে বড় ভূমিকা পালন সম্ভব৷”
স্বেচ্ছাসেবী ইনগ্রিড শ্যল বলেন, ‘‘আমাদের দল কোনো গুবরে পোকা খুঁজে পায়নি৷ আজকে গুবরে পোকা খুব একটা দেখা যায়নি৷ তবে ওখানে ফুলের উপরে একটা বন্য মৌমাছি দেখেছি আমরা৷ দুই বছর আগে যখন এখানে কোনো বাগান ছিল না, তখন আমরা হয়ত কোনো বন্য মৌমাছি খুঁজে পেতাম না৷”
তাপ, আওয়াজ, দূষণ, রাতের বেলা কৃত্রিম আলোর কারণে এবং সবুজ স্থানের অভাবে পোকামাকড়ের জীবন কঠিন হয়ে পড়ছে৷ বিশেষ করে শহরাঞ্চলে সেগুলোর বংশবৃদ্ধি জটিল হয়ে উঠেছে৷
দ্য ন্যাচার অ্যান্ড বায়োডাইভারসিটি কনজারভেশন ইউনিয়নের ড. গুদরুন ম্যাক্সাম বলেন, ‘‘পরাগায়নকারী ছাড়া উদ্ভিদের বৃদ্ধি এবং পুনরুৎপাদন সম্ভব নয়৷ এজন্য সেগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ৷ অন্যদিকে, কীটপতঙ্গ বাদুর, পাখি এবং অন্যান্য প্রাণীর খাদ্য৷ এজন্য শহরেও কীটপতঙ্গ থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷”
ক্রেফেল্ডের কীটতত্ত্ব সমিতির এক প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ১৯৮৯ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে জার্মানির সংরক্ষিত এলাকাগুলোতে বায়ুবাহিত পোকামাকড়ের বায়োমাসের ৭৬% মৌসুমি পতন ঘটেছে৷
তথ্য সংগ্রহের এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে কোন প্রজাতিগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে ভালোভাবে মানিয়ে নিয়েছে এবং কোনগুলো সংখ্যায় কমে গেছে, সহজ করে বললে পরিবেশ এবং কীটপতঙ্গ ভালোর জন্যই এই গণনা করা হচ্ছে৷
অনন্যা/এআই