Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মেনোপজের পর হাড় ক্ষয় রোধে যা করণীয়

৪০-৪৫ বছর বয়সে যখন একজন নারী মেনোপজের সময় অতিক্রম করেন। মেনোপজ হচ্ছে, একটি নারীদেহের অনেক স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। মূলত ইস্ট্রোজেন হরমোন কমে যাবার কারণেই মেনোপজ হয়। যে সময় নারীর মাসিক আস্তে আে বন্ধ হয়ে যাবার সময় হয় সে সময়কেই মেনোপজের সময় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
এসময় নারীরা শারিরীক জটিলতায় তো ভোগেনই। সাথে মানসিক অশান্তিতে ভোগার সম্ভাবনা অনেক অনেক অংশে বেড়ে যায়। এ সময় নারীদেহে সন্তান ধারণ করার মত ডিম্বানুর জন্ম নেয় না। অনেকেরই বাহ্যিক সৌন্দর্য আস্তেধীরে কমে যেতে থাকে। তাই ডিপ্রেশন, মুডসুইং, মেজাজ খিটখিটে হওয়ার পাশাপাশি আত্মহত্যা প্রবণতাও দেখা যায় অনেকের মাঝে।

মেনোপজের তিনটি ধাপ রয়েছে। সেগুলো হলো, প্রি-মেনোপজ,মেনোপজ, পোস্ট মেনোপজ। যেহেতু নারীদেহে হরমোনের উঠানামা পুরুষদেহের তুলনায় দ্রুতগতিতে হয়, সেহেতু নারীরা অনেকেই স্পর্শকাতর হয়ে থাকেন। তাতে বিচলিত হবার কিছু নেই। মেনোপজও যেহেতু শরীরের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, সেহেতু হরমোন পরিবর্তনের জন্য অনেক লক্ষণই দেখা দিতে পারে। যেমন,

চুল পড়ে যাওয়া: বয়সের সঙ্গে সঙ্গে চুল পড়া খুবই স্বাভাবিক একটা বিষয়। মেনোপজের কারণে ইসট্রোজেন এবং প্রজেসটেরন হরমোন এর উৎপাদন কমে যায়। যার কারণে চুল পাতলা হওয়া শুরু হয়। তবে এ বিষয়টি স্থায়ী নয়।

হট সুরাশ: যখন তখন হঠাত করে অতিরিক্ত গরম লাগা শুরু হয়। সেটা গরমকাল থাকুক কিংবা শীতকাল। তবে এক্ষেত্রে ঘাবড়ে যাওয়া যাবে না। ঠান্ডা পানি আর সুতির পোশাক এক্ষেত্রে সহায় ভূমিকা রাখে।

মুড সুইং: মেনোপজের সময় সেরেটোনিন এবং ডোপামিন হরমোন এর ইমব্যালান্স দেখা দেয় শরীরে। এর ফলে মুড সুইং হয়। মেজাজ ও খিটখিটে থাকে। স্ট্রেস ও থাকে প্রচুর এই পরিবর্তশীল আচরণের জন্য হতাশায় ভোগেন অনেক নারী। এ সময় পরিবারের সদস্য আর মন ভালো করা কাজের প্রতি সময় ব্যয় করলে মন ও শরীর দুটোই ভালো থাকবে।

জয়েন্ট পেইন: শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা হতে পারে। যেমন হাঁটু, কুনুই, আঙুল, পিঠ। এছাড়া আগের কোন ব্যথা থাকলেও সেটাও এসময়ে ফিরে আসতে পারে। ফিজিওথেরাপি এই সময়ের জন্য অনেক উপকারী।

অনিদ্রা: বয়স বাড়ার সাথে সাথে অনিদ্রা প্রায় অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। তবে মেনোপজের সময় এই প্রবণতা আরো বাড়তে পারে। আবার ঘুম হলেও শরীরে ক্লান্তি ভাব থাকা, প্রচণ্ড যেমে যাওয়া এবং ঘুম হলেও, দিনের বেলায় বার বার ঘুম আসার মত সমস্যা দেখা দেয়।

এসব ছাড়াও মেনোগোজের নারীদের হাড় ক্ষয় বা অস্টিওপোরোসিস হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। এটি এমন একটি শারীরিক অবস্থা যে প্রভাব পড়ে হাড়ের ওপর। এই রোগে আক্রান্ত হলে ক্ষয় হতে শুরু করে হাড়, ভঙ্গুর হয়ে যায় হাড় যার ফলে সহজেই ভেঙে যায় বা ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই রোগ থেকে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব হয় না। অন্যদিকে, প্রাথমিক ভাবে মেরুদণ্ড বা কজির মত জায়গায় ফ্যাকচার হলে তখনই এই রোগ নির্ণয় করা যায়। যতক্ষন না হাড় ভেঙে যায়, মহিলারা এই রোগ সম্পর্কে অবগত হন না। বিশেষত মেনোপজের সময় হাডের এই ক্ষয় বেশি লক্ষ্য করা যায়। হাড়ের ঘনত্ব বেশি থাকলে ক্যান্সারের মত রোগের ঝুঁকিও কমে যায়। তাই এটা ভীষণ জরুরি জানা যে মেনোপজের সময় আপনার শরীরে কী কী পরিবর্তন হচ্ছে এবং এই সময় আপনার হাড় কতটা ভাল আছে। এতে আপনি ৫০ এর পর ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমিয়ে ফেলতে পারবেন।
মেনোপজকে কোনও ভাবেই আপনি প্রতিরোধ করতে পারবেন না, এটা একটি শারীরিক প্রক্রিয়া। কিন্তু আপনি অস্টিওপোরোসিসকে প্রতিরোধ করতে পারবেন, হাড়কে মজবুত ও শক্তিশালী করতে ভুলতে পারবেন।

হাড় ক্ষয় এড়াতে যা করবেন

একটু সতর্ক থেকে জীবনযাপন করলেই হাড় ক্ষয় এড়ানো সম্ভব। এজন্য প্রথমেই পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খেতে হবে। এক্ষেত্রে দুধ, পনির, চিজ বা অন্যান্য দুগ্ধজাত খাবার, বাদাম, ব্রকলি, সবুজ শাক-সবজি ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।

নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। দীর্ঘ সময় শুয়ে-বসে থাকা যাবে না। প্রেগনেন্সি এবং ল্যাস্ট্রেশনের সময় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিদিন প্রয়োজনীয় ওষুধ খেতে হবে। প্রেগনেন্সি এবং ল্যাস্ট্রেশনের সময় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিদিন প্রয়োজনীয় ওষুধ খেতে হবে।

দুধ খাওয়ার প্রয়োজন। নারীদের দুধ খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। ছোট মাছ, ফল খেতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। বয়স্ক লোক, অবসরে সারাদিন ঘরে বসে না থেকে একটু হাঁটাহাঁটি করতে হবে। যারা হাঁটতে চলতে পারেন না তারা ঘরেই হালকা ব্যায়াম করতে পারেন। যেমন একটি লোক বিছানায় সারাদিন শুয়ে থাকেন। তিনি যদি শুয়ে না থেকে কিছুক্ষণ বসে থাকেন তাহলে ভালো। বয়স্কদের সব সময় সতর্ক থাকতে হবে। চোখে যদি ঝাপসা দেখেন। তাহলে পড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। কাজেই চশমা ব্যবহার করতে হবে।

মেনোপজ এর অভিজ্ঞতা সব নারীকেই পার করতে হয়। কিন্তু জীবনে এত শারীরিক এবং মানসিক বাধাধরা সহ্য করেও নারীরা শুধু নিজেকেই না, তাঁর পরিবারকেও সর্বদা গুছিয়ে রাখেন। এই গুছিয়ে রাখাটা আমরা প্রায়ই অবহেলার চোখে দেখি।

যেসকল নারীরা এখন মেনোপজের সময় অতিক্রম করছে তাঁরা এখন কারো মা, কারো স্ত্রী। কাজেই পরিবারের মানুষ দের উচিত মেনোপজের সময় তাঁর মা এবং স্ত্রীকে হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করা। এতে মেনোপজের সময় পার কর নারীটি মানসিক অসহায়ত্বে ভুগবেন না। হাসিখুশি থেকে নিজের স্বাস্থ্য সচেতন হবেন এবং অন্যদেরও হাসিখুশি রাখবেন।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ