নবায়ন যোগ্য জ্বালানিতে নারীর অন্তর্ভুক্তি হতে পারে ক্ষমতায়নের নতুন দিগন্ত
গ্রামীণ কিংবা শহরের নারীর অনেক বড় একটা সময় যায় জ্বালানি ব্যবস্থাপনায়। সঠিক জ্ঞান ও ক্ষমতার অভাবে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পরেন তারা। এ ক্ষেত্রে নবায়ন যোগ্য জ্বালানি হতে পারে তারে জীবন-যাপনের সহজ অনুষঙ্গ। যা তাদের সময়, অর্থ, বাঁচানোর পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করতে পারে-তাই নবায়ন যোগ্য জ্বালানিতে নারীর অন্তর্ভুক্তি হতে পারে ক্ষমতায়নের নতুন দিগন্ত বলে উল্লেখ করেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের (এমজেএফ) প্রকল্প পরিচালক বনশ্রী মিত্র নিয়োগী।
রোববার (৩ মার্চ) মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও পাক্ষিক অনন্যার যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় মূল প্রবন্ধে তিনি এসব কথা বলেন। কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য দেন দৈনিক ইত্তেফাক ও পাক্ষিক অনন্যা সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম।
দেশের প্রথম সারির প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন গণমাধ্যমের ১৫ জন নারী সাংবাদিকের অংশগ্রহণে কর্মশালা পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. তানিয়া হক। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন,মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট ইউনিট কো-অর্ডিনেটর ওয়াসিউর রহমান তন্ময় প্রমূখ।
মূল প্রবন্ধে আরও বলা হয় ২০৪১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য সরকারের। এই খাতে নারীর অংশগ্রহণ জেন্ডার সমতা নিশ্চিতের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। তবে বৈষম্যের কারণে নবায়নযোগ্য জ্বালানিখাতের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নারীরা পৌঁছাতে পারছে না। তিনি বলেন, নারীরা সাধারণত কৃষিকাজ, বাগান করা, রান্নার জন্য জ্বালানি কাঠ সংগ্রহের মতো কাজগুলো করে থাকে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নারীদের জন্য এই কাজগুলো করা আগের চেয়েও অনেক কঠিন হয়ে গেছে। নারীরা শারীরিক ও স্বাস্থ্যগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ নারীদের জন্য এক ধরনের চ্যালেঞ্জ। নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে নারীর অংশগ্রহণ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সহায়ক হতে পারে।
তাসমিমা হোসেন বলেন, বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি আমাদের জীবনে কেমন প্রভাব ফেলছে এটা আমরা সবাই উপলব্ধি করতে পারি। এইক্ষেত্র বিবেচনা করলে ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সামনের দিনগুলোতে জ্বালানি খাত একটা বড় সংকটের জায়গা হয়ে উঠতে পারে। এ অবস্থায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে নারীর অংশগ্রহণ একই সঙ্গে জ্বালানি সংকট মোকাবেলা ও জেন্ডার সমতা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। আমরা নিজেরা যেমন বিষয়টি জানবো এবং গণমাধ্যমের মাধ্যমে বিষয়টি আমরা প্রচার করবো।
শাহীন আনাম বলেন, আমরা জানি আমাদের নারীরা সেবা কাজে কত পরিশ্রম করে। তবে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ও আর্থিক নিয়ন্ত্রণের অভাব নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে নারীর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি সংক্রান্ত সরকারি কোনো নীতিমালা বা কর্মপরিকল্পনাতেও নারীরে অংশগ্রহণের বিষয়টি অনুপস্থিত থাকে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হলে একই সঙ্গে যেমন নারীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমবে, গৃহস্থালি কাজের সময় বাঁচবে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ ও জীবনযাত্রার মান বাড়বে। এ ক্ষেত্রে নারীর প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করা এবং নিরাপদ করার জন্য আমরা গণমাধ্যমকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি।
অধ্যাপক ড. তানিয়া হক বলেন,নারীর উন্নয়ন এবং ক্ষমতায়ন এই দোদুল্যমান জায়গা থেকে বের হয়ে আসা রকার । আমরা উন্নয়নের স্বাদ পাচ্ছি। ক্ষমতায়ন আরো শক্তিশালী একটি জায়গা। এখানে আরো কাজ করার রয়েছে।
ওয়াসিউর রহমান তন্ময় বলেন, আমরা কতগুলো পলিসির কথা বলেছি, এই পলিসিগুলোতে নারীর অংশগ্রহণ ও নারীর কথা নাই বললেই চলে। এই পলিসিগুলোকে আমরা বিশ্লেষণ করেছি। বিশেষ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সুবিধা হওয়ার কথা নারীর। সেক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ সেখানে থাকবে না কেন?
উল্লেখ্য নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে ও জ্বালানি রূপান্তর প্রক্রিয়ার ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট নীতিমালার মূল স্রোতধারায় জেন্ডার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। এই লক্ষ্যে এমজেএফ ‘উইমেন্স এমপাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড এনার্জি’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
অনন্যা/এআই