আধুনিকতা ও মানসিক স্বাস্থ্য
কথায় আছে আধুনিক পৃথিবী অনেক ছোট আমাদের হাতে মুঠোতে বন্দি। আধুনিকতা আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করে দিয়েছে ঠিক কিন্তু এর প্রভাব পরছে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর। ব্যস্ত এই জীবনে কারো ফিরে তাকানোর সময়টুকু যেন নেই, সবাই শুধু পাল্লা দিয়ে ছুটছে। আধুনিক পৃথিবীতে আমরা সবাই একসাথে থেকেও একসাথে নেই। এখন আর বন্ধুদের সাথে আড্ডা, হৈ হুল্লোড় নেই! শুধু কে কার আগে যেতে পারে সেই প্রতিযোগিতা। রোবটের চেয়ে কম কি আমরা? সেই সাত সকালে সূর্যের ঘুম ভাঙার আগে আমাদের ঘুম ভাঙতে হয় এরপর শুধুই ছুটে চলা, নিঃশ্বাস নেয়ার সময়টা অব্দি নেই। ইচ্ছে থাকার শর্তেও নিজেকে কিংবা প্রিয়জনদের সময় দেয়া হয়ে উঠে না। এইভাবে চলতে চলতে আমরা একসময় নিজেকেই হারিয়ে ফেলি। বলা হয় মোবাইল, ইন্টারনেট মানুষের যোগাযোগকে সহজ করে তুলছে। কিন্তু গবেষণা তো বলছে অন্য কথা যে বিচ্ছেদ আরো বাড়ছে, মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্কের বাঁধন আরো আলগা হয়ে যাচ্ছে৷
এতে করে আমাদের সম্পর্কে বোঝাপড়া কম হচ্ছে। মানুষ কখনো পুরোপুরি একা বাস করতে পারে না কিন্তু এমন করে চলতে থাকলে একপর্যায়ে একাকীত্ব ভোগ করতে হয়। যা কারণে মনের উপর প্রভাব পরে। ব্যস্ততা কারণে আমাদের খাবারের রুটিনের ঠিক নেই৷ তখন বাইরে বের হয়ে যা পাচ্ছি তাই খাচ্ছি, খাবারের আগে ভাবছি না যে আসলে কি আমাদের দেহকে দিচ্ছি। আমরা অনেকেই জানি না অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস আমাদের মুডের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া অনেকেই স্ট্রেস কিংবা চাপে থাকলে ধূমপান করেন। কিন্তু ধূমপান উল্টো আরো মানসিক চাপ বাড়ায়, গবেষণায় জানা গেছে বেশিরভাগ ধূমপায়ীরা অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত। ধূমপান করার সময় কিছু পরিমাণ ডোপামিন তৈরি হয় যার ফলে সাময়িক ভালো লাগলেও দীর্ঘমেয়াদি ধূমপানের কারণে ডোমামনি তৈরি হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অনেক ধূমপায়ী জীবনে একপর্যায়ে বিষন্নতার শিকার হয়।
ব্যস্ততার কারণে আমাদের পরিশ্রম কমে গিয়েছে যার ফলে আমরা অলস সময় কাটাই। দিনের কিছুটা সময় শারীরিক পরিশ্রম করলে মন ও শরীর দুটোই ভালো থাকে। সৃজনশীল কাজ থেকে দূরে সরে আমরা ইন্টারনেট নিয়ে ব্যস্ত থাকি, সোশ্যাল মিডিয়াতে অন্যদের জীবন দেখে নিজের জীবনের সাথে তুলনা করে ফেলি, এতে আমাদের নিজেদের জীবন নিয়ে নেতিবাচক ধারনা জন্ম নেয়। সারা বিশ্বে ৫ থেকে ১৭ শতাংশ মানুষ বিষণ্নতায় ভুগছে, যার কারণে দায়ী করা হচ্ছে আধুনিক লাইফস্টাইলেকেই। অতিরিক্ত প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের মনকে ক্ষতি করে অজান্তে। অনেকের ক্ষেত্রে এটি এখন আসক্তিতে পরিণত হয়েছে। গবেষণায় জানা গেছে যদি কোনো প্রযুক্তিতে আসক্ত ব্যক্তিকে একদিন তার প্রযুক্তি ছাড়া থাকতে বলা হয় তবে তার মধ্যে অস্থিরতা শুরু হবে, কোনো কাজে সে মনোনিবেশ করতে পারবে না। মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, কম্পিউটার অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে ঘুমের সমস্যা হয় এবং ইনসোমনিয়া দেখা দেয়৷ ছোট ছেলেমেয়েরা এখন বাইরে গিয়ে খেলার চাইতে বেডরুমের পিসি তে ভিডিও গেইম খেলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এতে করে তারা তাদের চোখের সমস্যা থেকে শুরু করে ওবিসিটি সহ সব ধরনের শারীরিক সমস্যা হতে পারে৷
এই যান্ত্রিক জীবন থেকে কখনোই পুরোপুরি মুক্তি তো আমরা পাব না কিন্তু মাঝে মাঝে ব্যস্ত জীবনকে ছুটি দিয়ে আমাদের দীর্ঘ শ্বাস নিতে হবে। সপ্তাহে একদিন পরিবারের সবাইকে নিয়ে কোথাও ঘুরে আসা যেতে পারে কিংবা কাছে বন্ধুর সাথে সময় করে দেখা করে কিছুক্ষণ মনের কথা বলা। প্রিয় শখের কাজ তৈরি করে চর্চা করতে হবে যেমন, বাড়ির ছাদে কিংবা বারান্দায় গাছ লাগানো, গান শোনা, বই পড়ার অভ্যাস করে নেয়া, নতুন কিছু রান্না করার চেষ্টা করা, ডায়েরি লেখার অভ্যাস করা যেতে পারে। দিনের কিছুটা সময় প্রযুক্তি থেকে দূরে থাকার অভ্যাস করতে হবে, ঘুম থেকে উঠেই অনেকে মোবাইল ফোন দেখে কিন্তু এই অভ্যাস বাদ দেয়ার চেষ্টা করতে হবে৷ সকাল শুরু করতে হবে ইতিবাচকভাবে। একটি সুস্থ জীবনধারার জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করতে হবে, নিয়মিত ব্যায়াম করার সময় বের করে নিতে হবে আর না হলে সপ্তাহে পাঁচদিন ৪০ থেকে ৬০ মিনিট হাঁটতে হবে। হাঁটলে মন ও শরীর দুটোই ভালো থাকবে৷ এছাড়া ইয়োগা করা যেতে পারে ইয়োগা মনের অস্থিরতা দূর করে মনকে শান্ত করে।