নারীর কাজের মূল্য দাও
পরিবারের অধিকাংশ কাজই নারীকে করতে হয়। বলা চলে শতভাগই নারীরাই করে থাকেন। সন্তান লালন-পালন থেকে শুরু করে সবার দেখভাল পর্যন্ত নারীকে করতে হয়। কিন্তু দিনশেষে নারীর কাজের কোনোই মূল্যায়ন নেই। গৃহস্থালির কাজে নারী কোনোদিন অর্থমূল্য পায় না। এমনকি নারীরা তা আশাও করেন না। কিন্তু যা আশা করেন তা হচ্ছে মানসিক সাপোর্ট। কাজের স্বীকৃতি। তবু এ সমাজে অধিকাংশ পুরুষই নারীর কর্মকে কাজের মধ্যেই ধরেন না। এমনকি নানা অনুযোগ-অভিযোগে কান ভারী করে তোলে!
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে আজও নারীর কাজের কোনোই মূল্যায়ন নেই। নারীকে তার যোগ্য সম্মান ও মূল্যায়ন কোনটাই করা হয় না। বরং নারীর ওপর অভিযোগ ছুড়ে দেওয়া হয় ঘরে বসে সারাদিন করেটা কী! নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে একজন নারী তার পরিবারের জন্য সবটা বিসর্জন দেন। আমাদের সমাজে এমন অনেক মায়ের দেখা মিলবে যারা শুধু সন্তানের জন্য নিজের চাকরি ছেড়ে ঘরে বাচ্চা ও পরিবারকে সময় দেন। কিন্তু সেই নারীরাও তার মূল্যায়ন পান না। পরিবারের কেউই তার স্রেক্রিফাইজের জায়গাটা বোঝেন না। বোঝার কিঞ্চিৎ চেষ্টাও করেন না অধিকাংশ সময়।
আমাদের সমাজে শৈশব থেকেই মেয়েদের প্রতি যে ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা হয় তারা সেটাকেই ধারণ করে। ফলে মেয়ে ও ছেলের মধ্যে যে পার্থক্য ছোট থেকে মস্তিষ্কে গেঁথে যায় তা আজীবন থাকে। নারীরা যে ঘরের কাজের জন্যই জন্মগ্রহণ করেছে এমন ভাবে আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ। এমনকি পুরুষতান্ত্রিক সমাজে অনেক নারী তাদের আজ্ঞাবহ থাকতেই পছন্দ করেন। এই ছত্রছায়ার বাইরে তার নিজস্ব জগৎ সম্পর্কে তাদের ধারণা নেই।
নারীদের কাজের মূল্যায়ন না হওয়ার ফলে সংসারে নানাবিধ সংকট দেখা দিচ্ছে। পরিবারের সবার মধ্যে সৌহার্দ্য কমছে। নারীর কাজের মূল্যায়ন হওয়া জরুরি। ঘরে নারীরা যে কাজগুলো করেন সেখানে যতোটা সম্ভব পুরুষের সহোযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। যদি সবসময় সম্ভব নাও হয় তবু নারীর কাজের প্রতি শ্রদ্ধাপরায়ণ হওয়া উচিত। সহমর্মি হওয়া আবশ্যক।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে দেখা যায় যে, অধিকাংশ সময় পুরুষ বাইরেটা সামলান। এবং নারী যদি চাকরি করেন তবে তাকে একা হাতে ঘরে-বাইরে উভয়টা সামাল দিতে হয়। এতে করে একসময় মানসিকভাবে তারা ভেঙে পড়েন। সবাইকে যথেষ্ট সময় দিতে পারছেন কিনা, বাচ্চাদের ঠিক মতো মানুষ করতে পারছেন কিনা এ সম্পর্কে নানা প্রশ্নে নারীরা তলিয়ে যেতে থাকেন। কিন্তু তাদের কাজের যোগ্য মূল্যায়ন করলে, পুরুষ যদি পাশে থাকে তবে নারীরা কিছুটা হলেও স্বস্তি অনুভব করেন।
আমরা জানি, কাজের যোগ্য মূল্যায়ন পেতে কার না ভালো লাগে! পুরুষ সারাদিন কাজ করে আসার পর তার দেখভাল করার জন্য নারী থাকেন। কিন্তু একজন নারীকে দেখভাল করার জন্য কখনও পুরুষ তার হাতটা বাড়িয়ে দেন না। এমনকি ছুটির দিনটাও পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে সময় কাটান না অধিকাংশ ক্ষেত্রে। দেখা যায়, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা দিয়েই পার করেন। তবে নারীরা কখনোই সংসারকে তুচ্ছ করে বাইরের জগতে বিচরণ করেন না। বরং তারা সবটা গুছিয়ে রাখতে চেষ্টা করেন।
কিন্তু এই কাজগুলো নারীর জন্য বাধ্যতামূলক করেছে এই সমাজ। পুরুষের জন্য নয়। তারা বাইরে সামলে আসলেই সাত খুন মাফ। তবু নারীর কাজের কোনো মূল্যায়ন নেই এ সমাজে। সবার দৃষ্টিভঙ্গি এমন যে, নারীরা মানুষ নয়। তাদের ক্লান্তি নেই। দুঃখ নেই। তারা পৃথিবীতে সবটা বিসর্জন দিতেই এসেছেন৷ দিন পাল্টাচ্ছে। এখনও যদি নারীকে তার প্রাপ্য মূল্যায়ন করা হয় তবে সমাজ এগিয়ে যাবে। নারীরাও মুক্তি পাবে।
ন নেই কেন ।