বিয়ের আয়োজনে প্রতিযোগিতা বন্ধ করুন
বিয়ে মানেই একগাদা আনন্দ অনুষ্ঠান। ধুমধাম করে মেহেদি, গায়ে হলুদ, বিয়ে, বৌভাত জমকালোভাবে আয়োজন করা হয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের। বর্তমানে বিয়ের অনুষ্ঠান নিয়ে এক ধরনের প্রতিযোগিতা চলে বলা যায়। বর্তমানে এ যেনো মানুষের মর্যাদার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবার চেষ্টা, কে কত বেশি জমকালো আয়োজন করতে পারে, অর্থ ব্যয় করতে পারে। তবে এত জমকালো আয়োজন, অর্থ ব্যয় এর মধ্যে আসলে কতটুকু আনন্দ নিহিত?
কালের বিবর্তনে আমরা আধুনিক সংস্কৃতিতে মজে যেতে শিখেছি। সবক্ষেত্রে আধুনিকতাকে অনুসরণ করতে শিখেছি। আজকালকার বিয়ে মানে বড় একটি কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করতে হবে। মেহেন্দি নাইট, হলদি নাইট, সঙ্গীত এ জমকালো আয়োজন। প্রচুর খরচ করে ডিজে আনতে হবে, রাতভর আধুনিক গানের সাথে নাচানাচি, ডিজিটাল অগ্রগতির কারণে এই সংস্কৃতি শহর থেকে গ্রামেও ছড়িয়ে যাচ্ছে। এই জমকালো আয়োজনের ফাঁকফোকরে প্রায়ই বাদ পরে আত্মীয়স্বজনসহ অনেক কাছের মানুষজন।
পার্লারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় ব্যয় করা, একের পর এক ছবি তোলা সব ঝাঁক জমকের মধ্যে সবার আনন্দ ভাগ করে নেয়া কি হয়? আভিজাত্যের প্রকাশ করতে গিয়ে মানুষ সবার সাথে আনন্দ ভাগ করে নেওয়াই ভুলে যাচ্ছে।
চলুন তবে ঘুরে আসি ৮০ বা ৯০ এর দশকের থেকে। সেসময় বিয়েতে প্রধান অতিথি হতেন আত্মীয়স্বজন, এরপর পাড়া-প্রতিবেশী ও বন্ধু-বান্ধব৷ নিজেদের বাড়িতেই হতো অনুষ্ঠান৷ বাড়ির ছাদ বা উঠোনেই আয়োজন করা হতো অনুষ্ঠানের। আজকের মতো হলুদের আয়োজন তখন হতো না। কাঁচা হলুদ বাঁটা হতো, সঙ্গে হত গীত – ‘হলুদ বাটো, মেহেদি বাটো’৷ একদিকে গান চলছে, অন্যদিকে কাঁচা হলুদ ও মেহেদি পাতা বাটা হচ্ছে৷ চারপাশে আনন্দের জোয়ারে ভাসছে৷ আর হলুদে হতো রং খেলা৷ একে অপরকে রাঙিয়ে আনন্দ হতো দ্বিগুণ৷ এরপর ছাদে বা পাশের বড় কোনো মাঠে সামিয়ানা টাঙিয়ে বিয়ের দিন হতো প্রীতিভোজ৷
তখন সকাল থেকে পার্লারে ছোটাছুটির প্রবণতা ছিলোনা, আত্মীয় বা প্রতিবেশীদের মধ্যে যে ভালো সাজাতে জানেন, তাঁর ওপরই পড়ত কনেকে সাজানোর ভার৷ বিয়েতে এই যে আত্মীয়-প্রতিবেশীদের সমাগম, তাঁরা নিজেরাই কাজ ভাগ করে নিতেন৷ এমনকি খাবার পরিবেশনের জন্য কোনো ওয়েটার ছিলোনা আত্মীয় প্রতিবেশীরাই কোমরে গামছা বেঁধে নেমে পড়তেন খাবার পরিবেশনের কাজে। এমন জমকালো, আধুনিকতাকে অনুসরণ, অর্থের ব্যয়বহুলতা ছিলোনা তখন। তবে আনন্দেরও কোনো কমতি ছিলোনা।
কিন্তু বর্তমানে শুধু জমকালো ও আধুনিকতার ছোঁয়াই রয়েছে। এসব চাকচিক্যের মধ্যে আনন্দটা অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে। মানুষ উপার্জনের একটা বিশাল অর্থ ব্যয় করছে শুধু চাকচিক্যের পেছনে। কিন্তু বিয়ের এই অস্বাভাবিক জাঁকজমক কমিয়ে দিয়ে অনেক সুন্দর করে এবং অন্যভাবেও বিয়ের আয়োজন করা যায় তা ভুলেই যাচ্ছে সবাই। এখন দরকার আমাদের মানসিকতা পরিবর্তনের। জমকালো ভাব কমিয়ে কিভাবে সবার সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেয়া যায় সে বিষয়টাকে রপ্ত করতে হবে যত দ্রুত সম্ভব। তবেই সম্ভব আনন্দময় কিছু অনুষ্ঠান উপভোগ করা। এখন প্রত্যাশা নতুন স্বাভাবিক জীবনে মানুষ অন্যভাবে বিয়ের আনন্দটা ভাগ করে নিক সমাজের সবার সাথে, শুধু জাঁকজমকে নয়, আভিজাত্যের প্রকাশ নয়, বরং আনন্দের প্রকাশ ঘটুক উৎসবে।