Skip to content

৫ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পুরুষের সেবায় নারী, নারীর কে

আধুনিক যুগে নারী-পুরুষ উভয়ের জীবনযাত্রার ধরন পাল্টেছে। পুরুষের মতো নারীও কর্মজীবী হয়ে উঠেছে। কর্মময় জীবন পালন করলেও সামাজিকভাবে নারীর প্রতি সম্মান বা তার কাজের প্রতি সম্মান কতটা বেড়েছে? বরং জটিলতা ভিন্ন রূপ নিয়েছে। সমাজে ঘটে চলা নানামুখী সমস্যার বিশ্লেষণ করলে তা সহজেই অনুমেয়।

বর্তমানে নারী-পুরুষ উভয়ই স্বাধীন জীবনযাপন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। ফলে একে অন্যের বাঁধা শেকলে আবদ্ধ থাকতে চায় না। তবে আবহমানকাল ধরেই পরিবারে-সমাজে নারীকে পুরুষের জন্য জীবন উৎসর্গ করতে দেখা যায়। অর্থাৎ একজন নারী সংসারের সমস্ত দায়-দায়িত্ব একাই সামলায়। কিন্তু অনেকক্ষেত্রেই পুরুষটি জানেনও না কয়েকটি টাকা গছিয়ে দেওয়া ছাড়া তিনি কী কর্তব্য পালন করেছেন। আর যিনি ভিন্নভাবে স্ত্রীর সহোযোগিতায় হাত বাড়াচ্ছেন তাকে পরিবার-সমাজের কাছ থেকে নানারকম কটুকথা শুনতে হচ্ছে। কিন্তু নারী যদি পুরুষের জন্য এবং সংসারের জন্য জীবনের সবটা দিতে পারে, তাহলে পুরুষ কেন নারীর সহোযোগিতায় হাত বাড়িয়ে দেবে না? পুরুষের সেবায় নারী সর্বদা তটস্থ থাকলে পুরুষটিকে কি দায়িত্ব নিতে নেই?

যুগের পরিবর্তনে নারী-পুরুষ উভয়ই বাইরে কাজ করছে। অনেক নারীই কর্মজীবী ফলে ভোর থেকে তার রুটিন ওয়ার্ক শুরু হয়। সংসারের সবার জন্য খাবার তৈরি থেকে শুরু করে বাচ্চা থাকলে তাকে পরিপূর্ণ খেয়াল রাখার জন্য যতটা করতে হয় সবটা মায়েরা করতে চেষ্টা করেন। এর বাইরে সন্তান স্কুলগামী হলে সেখানেও মায়ের বাড়তি খাটুনি। স্কুলে পৌঁছে দেওয়া, টিফিনের নাস্তা দেওয়াসহ নানারকম কাজে নারীটিকে সময় দিতে হয়। আবার যেই নারী কর্মজীবী সেখানেও তার কোনো ছাড় কি আছে? না নেই। সেখানেও চাকরি টিকিয়ে রাখতে একজন পুরুষের পাশাপাশি সমানতালে কাজে অংশগ্রহণ করতে হচ্ছে। দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করতে হচ্ছে। কিন্তু বিষয়টাকে একটু উল্টে দেখলে কিন্তু নারীর কাজ অনেকটা সহজ হয়ে যায়।

যুগের যেহেতু পরিবর্তন ঘটেছে, মানুষ হয়েছে আধুনিক চিন্তাসম্পন্ন; সেহেতু তার আচরণেও পরিবর্তন আনতে হবে। নারীকে সেবাদাসী ভাবলে চলবে না।

আধুনিক জীবনযাপনের চিত্র অনেক পরিবারের চিত্র পাল্টালেও বেশিরভাগই পরিবর্তন হয়নি। নারীকে সেবাদাসী না ভেবে বা পুরুষের সেবায়ই নারীকে নিয়োজিত থাকতে হবে, এই ধারণার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। নারীর কাজে সহোযোগিতা করতে হবে পুরুষকেই। সেক্ষেত্রে পরিবার-পরিজন-সমাজের মানুষ অনেকেই হয়তো বিষয়কে দৃষ্টিকটু বলে সমালোচনা করবেন। কিন্তু পুরুষদের নিজেদের মানসিকভাবে দৃঢ় করে তোলা উচিত। কারণ পরিবার বা সংসার দুজনের। দায় দুজনের। নারী বা পুরুষের কারও একার নয়। সেক্ষেত্রে কাজ যদি ভাগাভাগি করে নেওয়া যায়, তবে পরিবারটা সুখী হতে বাধ্য। একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকাও জরুরি। তবে শ্রদ্ধা-সম্মান-ভালোবাসা অর্জিত বিষয়। তাই নিজ যোগ্যতায় অর্জন করাই শ্রেয়। পুরুষের সেবাদাসী নারী আর নারীর জন্য শুধু সংসার বা সব দায় তার, এই মানসিকতার পরিবর্তন খুব জরুরি।

এখনকার দিনে অনেকেই অবশ্য ধীরে ধীরে সমাজের বাইরে গিয়ে স্ত্রীর কাজে সহোযোগিতা করেন। কিন্তু বিষয়টি সমাজের বা ওই পরিবারের ভিন্ন সদস্যরা ভালো চোখে দেখে না। কিন্তু আমাদের একবার কি ভেবে দেখা উচিত নয়, নারীরও একটা সামর্থ্য আছে। একহাতে সবটা সামাল দিতে গিয়ে তার নাভিশ্বাস ওঠে। যদি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসাই স্বামী-স্ত্রীর পরম চাওয়া পাওয়া হয়, তবে দুজনকেই কাজের মাধ্যমেও নিজেদের এক রাখা উচিত।

যুগের যেহেতু পরিবর্তন ঘটেছে, মানুষ হয়েছে আধুনিক চিন্তাসম্পন্ন; সেহেতু তার আচরণেও পরিবর্তন আনতে হবে। নারীকে সেবাদাসী ভাবলে চলবে না। নারী হয়েছেন বলে সবটা দায় তার; এমন ধারণা থেকে আমাদের পুরুষ জাতির সরে আসতে হবে। দুজনের কাজ সমানভাগে পরিচালনা করলে কারোর ওপরই বোঝার মতো চেপে বসবে না। অতি সহজেই একটি সুখী দাম্পত্য জীবনের স্বাদ গ্রহণ করা যাবে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ