Skip to content

৫ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শীতের পিঠা

বাংলাদেশে শীতকালের সঙ্গে পিঠার সম্পর্ক শুধু গভীরই নয়, অনেক পুরনোও। শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যায় পিঠা বানানোর ধুম। সাধ্য কম থাক আর বেশি থাক, বসবাস হোক গ্রামে কিংবা শহরে বাংলাদেশে প্রতিটি পরিবারে শুরু হয় পিঠা বানানোর প্রস্তুতি। আয়োজন চলে খাওয়া এবং খাওয়ানোর। 

 

শুধু বাড়িতে নয় শহরের ফুটপাথ গুলোতেও চলে মহাসমারোহে। সারা শীত জুড়ে চলে পিঠা বিক্রির ধুম। শীতের পিঠার রকম যেমন অনেক, খাওয়ার স্বাদও তেমনি ভিন্ন। একই পিঠা সব পরিবারে বানানো হয় না। পিঠা রয়েছে হরেক রকমের। রয়েছে অঞ্চল ভিত্তিক পিঠা। বাহারি সব নাম সেগুলোর। স্বাদে আর সৌন্দর্যেও রয়েছে ভিন্নতা। কিছু পিঠা তৈরির নিয়ম জানিয়ে দেয়া হলো- 

  
ভাপা পিঠা: 

 

শীতের পিঠা

সিদ্ধ চালের গুড়ো ১কেজি, পাটালি গুড় ১ কেজি, নারকেল কোরা ৩ কাপ, লবণ রুচিমতো।  

 

চালের গুড়োতে লবণ ও অল্প পানি মিশিয়ে চালুনে চেলে নিন। এবার উনানে ভাপা পিঠার হাড়িতে পানি ভরে বসান। এবার বাটিতে প্রথমে চালের গুড়ো ছড়িয়ে দিন, এরপর দিন ছোট ছোট টুকরো করা পাটালিগুড় আর নারকেল কোড়া। আবার চালের গুড়ো পাটালি গুড় আর নারকেল কোড়া এভাবে দু-প্রস্থ দেয়ার পর বাটির মুখ পাতলা পরিষ্কার সুতির কাপড় দিয়ে জড়িয়ে নিন ভালো করে, যাতে বাতাস না ঢোকে। এবার কাপড়ে জড়ানো বাটিটি পিঠার হাড়ির মুখে বসান খুব সাবধানে। যাতে গুড়ো ছড়িয়ে না যায়। ঢাকনি দিয়ে ঢেকে রাখুন। ৫/৭ মিনিট পর ঢাকনি তুলে পিঠা বের করে নামিয়ে নিন কাপড়সহ। ব্যাস ভাপা পিঠা তৈরি। এই পিঠায় বৈচিত্র্য আনতে নারকেল গুড়ের বদলে পনির কুচি, মাংসের কিমা, কুচো চিংড়ি দিতে পারেন।

 

দুধ-চিতই: 

 

শীতের পিঠা

চালের গুড়ো ৩ কাপ, পাটালি গুড় ৭০০ গ্রাম, ঘন করা দুধ ১ লিটার, লবণ অল্প। 
 
যেভাবে করবেন- 
প্রথমে ঝাল-মশলাহীন একটি হাড়িতে ২ কাপ পানি আর পাটালি গুড় মিশিয়ে উনানে জ্বাল দিয়ে ছেকে আবার উনানেই রাখুন মৃদু আচে। এবার চালের গুড়োয় লবণ ও দেড় কাপ পানি দিয়ে মসৃণ করে মিশিয়ে নিন। খেয়াল রাখুন মিশ্রণ যেনো খুব পাতলা বা ঘন না হয়। তবে গোলাটা একটু পাতলা হলে সে পিঠা ভিজে নরম হয়।  

 

এবার চিতই পিঠার হাড়ি অথবা খোলায় সামান্য তেল মাখিয়ে নিন। খোলা গরম হলে ২ টেবিল চামচ গোলা দিয়ে ঢেকে দিন। ঢাকনির চারপাশে পানি ছিটিয়ে মৃদু আচে রাখুন। ৩/৪ মিনিট পর পিঠা তুলে গরম সিরায় ছেড়ে দিন এভাবে বানানো সব পিঠা। ৩/৪ মিনিট জ্বাল করে নামান। ঠাণ্ডা হলে এতে ঘনকরা দুধ মিশিয়ে দিন। ঘন্ট২ পর এই পিঠা খাওয়ার উপযোগী হবে। চিতই পিঠা দুধে না ভিজিয়ে মুরগীর মাংস, গরুর মাংস, কলিজা ভুনা, শুটকি মাছের ভর্তা, সরিষা ভর্তা, ধনেপাতা, কালোজিরা, শুকনো মরিচের ভর্তা দিয়ে গরম গরম চিতই পিঠার স্বাদই আলাদা।  

পাটিসাপটা পিঠা: 

 

শীতের পিঠা

 

আতপ চালের  গুড়ো ৫০০ গ্রাম, পাটালিগুড় ৭০০ গ্রাম, দুধের খিরসা ২৫০ গ্রাম, বেকিং পাউডার ২ চা চামচ, সয়াবিন অথবা সর্ষের তেল ২ টেবিল চামচ, লবণ সামান্য।

 
যেভাবে করবেন- 
চালের গুড়োতে গুড়, লবণ ও বেকিং পাউডার মিশিয়ে ময়ান করার পর এতে কুসুম গরম পানি দিয়ে গুলে নিন। খেয়াল রাখুন মিশ্রণ যেনো খুব বেশি পাতলা বা ঘন না হয়। এবার উনানে ফ্রাইপ্যান অথবা তাওয়া গরম করে এতে অল্প তেল দিয়ে পরিষ্কার ন্যাকড়ার সাহায্যে ঘষে ঘষে লাগিয়ে নিন। যাতে ফ্রাইপ্যান তেলতেলে হয়। এরপর চালের গুড়োর মিশ্রণ থেকে গোল আকারের বড় চামচে করে নিয়ে ফ্রাইপ্যানে  ছড়িয়ে ঢাকনি দিয়ে ঢেকে মৃদু আচে রাখুন। উপরিভাগ শুকিয়ে গেলে এতে ৩ চা চামচ দুধের খিরসা পিঠার একপাশে লম্বা করে দিয়ে মুড়িয়ে নিন পাটির মতো করে। চামচ দিয়ে একটু চ্যাপ্টা করে পিঠা নামিয়ে নিন।

দুধ পুলি: 

 

শীতের পিঠা

আতপ চালের গুড়ো ৫০০ গ্রাম, পাটালি গুড় ১ কেজি, চিনি ২৫০ গ্রাম, নারকেল কোড়া ৩ কাপ, দুধের খিরসা ২ কাপ, ঘন করা দুধ ২ লিটার, এলাচ ৪/৫টি, দারুচিনি ২/৩টুকরো, পানি ৩কাপ, লবণ সামান্য। 

একটি ঝালশুন্য হাড়িতে নারকেল কোড়া, চিনি ও দুধের ক্ষীরসা মিশিয়ে জ্বাল করে পুর তৈরি করে রাখুন। অপর একটি হাড়িতে ৩ কাপ পানি ও সামান্য লবণ দিয়ে জ্বাল করুন। বলক এলে চালের গুড়ো ছেড়ে পাঁচ মিনিট ঢেকে রাখুন মৃদু আচে। এরপর নামিয়ে আটা মাখার মতো করে মেখে মণ্ড তৈরি করে রাখুন। এবার এই শক্ত মণ্ড থেকে ছোট ছোট গোলা তৈরি করে একেকটা গোল বাটির মতো বানিয়ে এর ভেতর নারকেল খিরসার পুর অল্প অল্প করে দিয়ে বাটির মুখ আটকে চারপাশ মুড়ি মেরে দিন।  সৌন্দর্য বাড়াতে আঙ্গুলের সাহায্যে পিঠার চার ধারে ডিজাইন করে নিন। এর আকৃতি হবে অর্ধচন্দ্রের মতো। আগেই আলাদা  হাড়িতে দেড়-কাপ পানিতে পাটালি গুড়ের সিরা জ্বাল করে রাখবেন। এই সিরায় এলাচ, দারুচিনিও দেবেন। অপর একটি হাড়িতে দুধ  মাঝামাঝি ঘন করে রাখুন। এবার গুড়ের সিরায় পিঠাগুলো ছাড়ুন একটি এক কটি করে। যাতে ভেঙ্গে না যায়, জোড়া না লাগে। ১০/১৫মিনিট পর পিঠা নামিয়ে একটু ঠাণ্ডা করে এতে ঘন করা দুধ  মিশিয়ে নিন। এই পিঠা গরম-ঠাণ্ডা দুভাবেই খাওয়া গেলেও ঠাণ্ডা পিঠার স্বাদ অমৃতসর।

 

পাকওয়ান পিঠা: 

 

শীতের পিঠা

ময়দা ৫০০ গ্রাম, চিনি ৭০০ গ্রাম, পোস্ত-দানা আধা কাপ, মৌরি ১ তরকারি চামচ, বেকিং পাউডার ১চা চামচ, সয়াবিন তেল ২৫০ মিলি লিটার, লবণ সামান্য। 

 

ময়দা ছেকে এতে লবণ, বেকিং পাউডার মৌরি ও চিনি মেশান। এরপর পানি দিয়ে মাঝামাঝি ঘণস আকারের গোলা তৈরি করে নিন। মিশ্রণটি এভাবেই রেখে দিন ৭/৮ ঘণ্টা। এবার কড়াইতে বেশি করে তেল দিয়ে উনানে বসান। তেল গরম হলে এই মিশ্রণ থেকে গোল বড়ো চামচে করে ছাড়ুন এবং সাথে সাথেই এতে অল্প পোস্তদানা ছড়িয়ে দিন। পিঠা ফুলে উঠলে উলটে দিন। লালচে করে ভেজে তুলুন এভাবেই সবগুলো পিঠা। পিঠাগুলো পাতলা এবং মুচমুচে আর সুস্বাদু হবে। একদিকে মৌরির সুঘ্রাণ অপরদিকে পিঠার মাঝখানে পোস্তদানার ছড়াছড়ি পিঠাকে করে তুলবে বৈচিত্র্যময়, সুগন্ধি যুক্ত আর মজাদার। 

 

সুন্দরী পাকন: 

 

শীতের পিঠা

 

আতপ চাল ১ কেজি, চিনি ১ কেজি, গম দেড়-কাপ, মুগ ডাল ৫০০গ্রাম, ডিম ২টি, সয়াবিন তেল আধা লিটার। 

আতপ চাল, মুগ ডাল গম ঝেড়ে বেছে একসাথে মিশিয়ে ব্লেন্ডারে গুড়ো করে ছেকে নিন। এবার একটি হাড়িতে ২ কাপ পানিতে চিনি মিশিয়ে উনানে জ্বাল করে সিরা তৈরি করে রাখুন। আলাদা হাড়িতে ২ কাপ দিয়ে  উনানে বসান। ফুটে উঠলে এতে ৪ কাপ গুড়ো সিদ্ধ করে নিন। একটু ঠাণ্ডা হলে এতে ২ তরকারি চামচ তেল ও ২টি ডিম মিশিয়ে ভালোকরে মেখে নিন। এবার এই মিশ্রণটি রুটি বেলার পিড়িতে আধা সেন্টিমিটার পুরু রেখে রুটি বেলে নিন এবার খেজুর কাটা, মোটা সুচ কিংবা বিস্কুট কাটার নকশা দিয়ে নানা আকারের পিঠা কেটে নিন। পিঠার উপরে এবং কিনারায় কাটা বা মোটা সুচের আগার সাহায্যে ঝিরি ঝিরি করে নকশা করে নিয়ে ডুবো তেলে সোনালি করে ভেজে তুলুন। সব পিঠা এবার চিনির সিরায় ছাড়ুন একটা একটা করে। ১৫/ ২০ মিনিট পরে এই পিঠা পরিবেশনের উপযোগী হবে।

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ