শীতের সাজগোজ
শীতকালে মেকআপ স্থায়ী হয়। কারণ এই মৌসুমে ঘাম বা অতিরিক্ত তেলের কারণে মেকআপ নষ্ট হওয়ার ভয় থাকে না। কিন্তু শীতকালে মুখের মেকআপ করার সময় একটু বেশি যত্নশীল হতে হয়। শীতকালে ত্বকে খড়ি ওঠা, শুকনো টান ধরা হাত-পা, ঠোঁট ফাটার মতো সমস্যা দেখা যায়। এ সব সমস্যার কারণে মেকআপ করাটাও বেশ মুশকিলের হয়ে পড়ে। তাই এমন কিছু মেকআপ সামগ্রী ব্যবহার করতে হবে যার মধ্যে অন্তত একটি হাইড্রেটিং উপাদান রয়েছে, যা আপনার ত্বককে আর্দ্র, নিখুঁত আর উজ্জ্বল রাখবে সারা শীত জুড়ে।
মেকআপের আগে মুখ ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে। যাদের ত্বক শুষ্ক তাদের মুখ পরিষ্কারের জন্য ক্লিনজিং মিল্ক ব্যবহার করাই উত্তম। আর যাদের ত্বক সাধারণ থেকে অয়েলি তারা তাদের পছন্দ অনুযায়ী ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতে পারেন।
অনেকের ধারণা সানস্ক্রিন শুধু মাত্র গরমকালে ব্যবহার করতে হয়, কিন্তু ধারনাটি একদম সঠিক নয়। গরমকালে যেমন বাইরে যাওয়ার আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত ঠিক তেমনি শীতের শুষ্ক আবহাওয়ার রোদে পোড়া থেকে রক্ষা পেতে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত।
শীতকালে ত্বক রক্ষা করার মূল উপাদানই হচ্ছে ময়েশ্চারাইজার। ত্বকে অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন। শুষ্ক ত্বকে অয়েল বেসড ময়েশ্চারাইজার, তৈলাক্ত ত্বকে অয়েল ফ্রি ময়েশ্চারাইজার এবং কম্বিনেশন ত্বকের টি জোনে অয়েল ফ্রি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। এ ছাড়া বাকি অংশে অয়েল বেসড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন।
গরমে প্রাইমার লাগালে তা আপনার মেকআপ ঘামে গলে যেতে দেয় না। আবার ওই একই প্রাইমারই কিন্তু শীতে আপনার রুক্ষ ত্বক কোমল করে তুলতে পারে। সঙ্গে বাড়তি পাওনা, মেকআপ করার মসৃণ বেস। তাই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করার পর প্রাইমার ব্যবহার করবেন।
শীতকালে ফাউন্ডেশন সহজে বেন্ড হতে চায় না, হালকা বেজ মেকআপের ক্ষেত্রে বিবি ক্রিম লাগিয়ে নিতে পারেন। তবে ভারী মেকআপে তো অবশ্যই ফাউন্ডেশন ব্যবহার করতে হবে। এ ছাড়াও শীতে ম্যাট ফিনিশের বদলে শাইন ফিনিশ এমন ফাউন্ডেশন বেশি কার্যকরী। অনেকের আবার শীতকালে গায়ের রঙ ১-২ টোন উজ্জ্বল দেখায়। ফলে গরমকালের ব্যবহৃত ফাউন্ডেশনের শেড ম্যাচ করে না এবং ডার্ক দেখায়। তাই শীতে স্কিন টোনের সঙ্গে শেড মিলিয়ে নেওয়া জরুরি। ডার্ক সার্কেল, ব্রণের দাগ ও ডার্ক স্পট ঢাকতে বেছে নিন লিকুইড বা ক্রিম কন্সিলার। শীতে একটু ভারী ধরনের ক্রিম কমপ্যাক্ট পাউডার বেছে নিবেন, যাতে অয়েল কন্টেন্ট বেশি থাকে। এটি ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
শীতকালে ফ্যাকাসে ত্বককে রঙিন করে তুলে ব্লাশঅন। যাদের রং ফর্সা তারা যে কোনো রঙের ব্লাশ লাগাতে পারেন আর যাদের একটু চাপা রং তাদের পিচ,টেরাকোটা শেড ভালো মানাবে। পাউডার ব্লাশঅনের বদলে বেছে নিন ক্রিম ব্লাশ। চাইলে পাউডার ব্লাশঅনের পরিবর্তে লিকুইড ব্লাশও ব্যবহার করতে পারেন। দিনের বেলা হাইলাইটার ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই কিন্তু রাতের সাজে হাইলাইটার ব্যবহার করতে কখনোই ভুলবেন না।
শীতকালে চোখের পাশ ভালো করে ময়েশ্চারাইজড করে নেবেন। ভ্রু যদি ঘন না হয়, তা হলে চুলের রঙের চেয়ে তিন শেড হালকা রঙের আই ব্রো পেনসিল ভ্রুতে বুলিয়ে নিতে পারেন অথবা কালচে খয়েরি রঙের আইশ্যাডোও ভ্রুতে লাগাতে পারেন।শীতেও চোখের ওপর কয়েকটি রঙের আইশ্যাডো ব্লেন্ড করা হবে। তবে সেখানে বরাবরের মতো থাকবে ‘স্মোকি আই’, পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে ধূসর, রুপালি, তামাটে, গোলাপির নানা শেডই প্রাধান্য পাবে। চোখের পাতার ওপরে আর নীচে দেওয়া হবে আইশ্যাডে। চোখের চারপাশের কোমল ত্বক খুব স্পর্শকাতর এবং শীতের দিনে তা আরও শুষ্ক হয়ে যায়। কিছু আইলাইনার চোখের চারপাশের ত্বক আরও শুকনো করে দিতে পারে। চোখের পাতা যাতে শুকনো বা লাল হয়ে না যায়, হাইড্রেটিং উপাদান আছে এমন আইলাইনার ব্যবহার করুন।
মেকআপের সময় ঠোঁট ফাটা থাকলে, কিন্তু কোনও মেকআপ ভালো দেখাবে না। লিপস্টিক সাজগোজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। লিপস্টিক বাদ দেওয়া যায় না কিছুতেই, তবে শীতের শুষ্কতার কথা মাথায় রেখে এসময়ে ক্রিম বা সেমি-ম্যাট লিপস্টিক ব্যবহার করবেন। খুব বেশি ম্যাট লিপস্টিক ব্যবহার না করাই ভালো, আর যদি ম্যাট লিপস্টিক ব্যবহার করতেই চান তাহলে লাগানোর আগে অবশ্যই লিপ বাম লাগিয়ে নিবেন। এখন বাজারে ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার যুক্ত লিপস্টিক পাওয়া যায় সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন।