Skip to content

৬ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | সোমবার | ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হেডব্যান্ড ও মাথাঠাণ্ডা রহস্য!

জীবনের নানা মোড়ে রয়েছে নানা বিপত্তি। মানব জীবনে যেন একটু আনন্দের কোন ঠাই নেই। নিজ নিজ ব্যস্ততাকে ঘিরে রয়েছে শত চিন্তা। ব্যস্ততার চাপে অনেকের জীবনে নেমে আসে এক বিষদ অস্বস্তি। সম্প্রতি এসকল সমস্যার একটি সমাধান করার চেষ্টা করা হয়েছে।

 

অনেকেই গরম মাথা ঠাণ্ডা রাখতে তেল ব্যবহার করে থাকেন। তাছাড়া অনেক আয়ুর্বেদিক উপাদানের ব্যবহারও রয়েছে শুধুমাত্র মাথা ঠাণ্ডা রাখার জন্য। কেউ কেউ তো একেবারে মাথায় বরফ নিয়ে বসে থাকেন। কিন্তু তারপরও কি আসলেই মাথা ঠাণ্ডা থাকে? মানুষ কি ফিরে পায় শান্তি? তাইতো এখানকার টিভিসি এমনকি বিলবোর্ডে জায়গা নেয় মাথা ঠাণ্ডা রাখার তেলের বিজ্ঞাপন। আর সেসব বিজ্ঞাপনে বড় বড় তারকাদেরও অংশ নিতে দেখা যায়। এখন মাথা ঠাণ্ডা রাখতে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে হেডব্যান্ড। যা আপনার মস্তিষ্কের তরঙ্গ মেপে আপনার মাথাকে ঠাণ্ডা রাখার ব্যবস্থা করবে।

 

ইউরোপ আমেরিকার অনেক অ্যাথলেটও এখন চাপ কমাতে এসব ব্যান্ড ব্যবহার করছে। তবে এটা নিয়ে আছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ বলছেন এগুলো আসলেই চাপ কমাতে সক্ষম। আবার কারও কারও মতে এগুলো মস্তিষ্কে কোনো প্রভাবই রাখতে পারেনা। বাউমার্ট নামের একজন অ্যাথলেট এবং ওয়েটলিফটিং কোচ বছর দুয়েক আগে ফোকাসকাম নামের একটি হেডব্যান্ড ব্যবহার করেন। প্রথম অবস্থায় তিনি এটা থেকে তেমন কোনো ফল পাননি। তাই তিনি এই হেডব্যান্ড নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ব্রেইনকোতে গবেষণার জন্য আবেদন করেন। ব্রেইনকো তাকে গবেষণার সুযোগ দেয়। তিনি ফোকাসকামের সঙ্গে কাজ করে নিশ্চিত হয়েছেন আসলেই এটা কাজ করে। অর্থাৎ হেডব্যান্ড মানুষের মস্তিষ্কের উদ্বেগ এবং চাপ কমাতে সক্ষম।

 

হেডব্যান্ড আসলে মানুষের মস্তিষ্কের সিগন্যাল কাউন্ট করে। শূন্য থেকে ১০০ পর্যন্ত একটা নম্বর দিয়ে থাকে। মোবাইল অ্যাপের সঙ্গে যুক্ত এই হেডব্যান্ড আপনার মস্তিষ্কের তরঙ্গ মেপে শূন্য থেকে ১০০ পর্যন্ত নম্বরের মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করে এটা কি অবস্থায় আছে। তারপর এটা আপনার মেডিটেশন বা ধ্যানে সহায়তা করে মস্তিষ্কের চাপ কমাতে সাহায্য করে। অনেক সময় এটা মস্তিষ্কের জন্য আরামদায়ক সুর বাজিয়ে মস্তিষ্ককে ঠাণ্ডা রাখে। গড়ে একটি স্বাভাবিক মস্তিষ্ক ৫০ নম্বর পাবে। আর সবচেয়ে ঠাণ্ডা মস্তক থাকবে ১০০ নম্বরে। এভাবেই কাজ করে এসব নিউরোফিডব্যাক বা ইইজি (ইলেক্ট্রোয়েন্সফ্যালোগ্রাম) ডিভাইস।

 

তবে প্রফেসর স্যান্ড্রা ওয়াচটার, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির একজন শীর্ষ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বিশেষজ্ঞ, তিনি বলেন, "আসলে মানুষের ধ্যান বা মস্তিষ্ক নিয়ে কাজ করার মতো জায়গা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের খুব কমই আছে"। তার মতে, বৌদ্ধরা বা হিন্দুরা যে ধ্যান করে তুলনামূলকভাবে মেডিটেশন বা মাথা ঠাণ্ডা রাখার জন্য সেগুলো ভালো উপায়।

 

একেকজন মানুষ একেকভাবে শান্তি পেয়ে থাকে। তাই একটি সার্বজনীন শান্তির পথ বলা কঠিন। কেউ রবীন্দ্রসংগীত শুনে শান্তি পায় তো কেউ ব্যান্ডের গানে শান্তি পায়। আবার কেউ যেটাকে চাপ মনে করে, অন্য কেউ সেটাকে মজা মনে করতে পারে। সুতরাং সবার জন্য একই অ্যালগরিদমে কাজ করাটা সত্যিকার অর্থেই কঠিন। তারপরও এটা কাজ করতে পারে এটা ভেবেও অনেকে শান্তি পায়! কেননা অনেক সময় আমরা ভণ্ড ফকির বা কবিরাজদের ঝাড়-ফুঁকে অনেককে শান্তি পেতে দেখি। এর পুরোটাই তাদের মানসিকভাবে সাহস যোগায় যে, ফকির বাবা কিছু না কিছু করেছে। ফলে মস্তিষ্কে একটা পজিটিভ সিগন্যাল যায়, যার দরুন আমরা শান্তি পেয়ে থাকি।

 

তেলের কারণও অনেকটা সেরকমই। শুধু মাঝে মাঝে মেন্থল বা সুগন্ধি জাতীয় কিছু দিয়ে একটি কৃত্রিম ক্রিয়া সৃষ্টি করে শান্তির একটা পরিবেশ সৃষ্টি করা যায়। আসলে মানুষের শান্তি তার বিশ্বাসের ওপরেই যে, সে শান্তিতে আছে। অন্তত বিশেষজ্ঞদের মতামত সেরকমই ইঙ্গিত বহন করে। শান্তি বিষয়টি একান্ত এই নিজের অভ্যন্তরীণ। শান্তি উপলব্ধি যেমন খালি চোখে বোঝা যায় নাহ তেমনি কোন ব্যক্তির অশান্তিও বোঝা তুলনামূলক দুষ্কর।

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ