Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমরা শ্রমিকদের হাতে মারি, মারি ভাতে

রোজিনা বেগম একজন গার্মেন্টস কর্মী৷ লকডাউনে গার্মেন্ট বন্ধ হওয়ার সুবাদে গত ২০শে জুলাই সাতক্ষীরা জেলার নিজ বাড়িতে যান। স্বামীহারা রোজিনার ঘরে চার সন্তান। স্বামীর অবর্তমানে সন্তানদের ভরণপোষণের দায়িত্ব রোজিনার ঘাড়ে। কাজ করলেই জোটে চারটা ডাল ভাত। লকডাউন ৫ই আগস্ট পর্যন্ত। বন্ধ গণপরিবহন। হঠাৎ ঘোষণা এলো ১লা আগস্ট খুলছে গার্মেন্টস এবং শিল্পকারখানা। কাজ না করলে ভাতে মরতে হবে। ঢাকায় ফেরা ছাড়া যেন আর কোন উপায় নেই৷ বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটে ও পিকআপে করে ভোগান্তি মাথায় নিয়ে ফিরতে হয় ঢাকায়।

নাফিসা আক্তারও একজন গার্মেন্টস কর্মী। বয়স ২৩। বাবা-মায়ের অসুস্থতার কারণে তাকেই ধরতে হয়েছে পরিবারের হাল৷ কর্মস্থলে আসার পরই নিয়মিত তাকে শুনতে হয় বসের নানা কুপ্রস্তাব ৷ আর সে প্রস্তাবের জবাব 'না' হলেই জোটে অকথ্য ভাষায় গালি। সাথে চাকরি হারানোর হুমকি তো আছেই। তবুও তাকে তার পরিবারের কথা ভেবে চাকরিটা চালিয়ে যেতে হচ্ছে। কারণ চাকরি ছাড়লে যে পরিবারের সকলে মিলে না খেয়ে মরবে। 

এমন হাজারো রোজিনা ও নাফিসা রয়েছে যাদেরকে পেটের দায়ে খেটে মরতে হচ্ছে। তবুও তারা পাচ্ছে না পর্যাপ্ত সম্মান ও সম্মানী৷ ক'টাকাই বেতন তাদের? তাও মেলে না সময়মত। বেতন, বোনাসের জন্য গলা ফারতে হয় সড়কে। এই সমাজে তাদের কথা ক'জনই ভাবে? সমাজে তারা অবহেলিত, অত্যাচারিত ও নির্যাতিত। গার্মেন্টসের অধিকাংশ কর্মী নারী। খবরের পাতায় চোখ বুলাতেই চোখে পড়ে রোজিনা ও নাফিসার মত নারীদের ধর্ষিত হওয়ার খবর। এটা কি আসলেই তাদের প্রাপ্য? 

সুখ-দুঃখ, বেদনা-বিষাদ আর উত্থান পতনকে ঘিরেই আমাদের জীবন। অনাদিকাল ব্যাপি চলে আসছে দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার। এটা কি শুধুই অত্যাচার? গোটাবিশ্ব এখন করোনা আতঙ্কে জর্জরিত। দেশে বিদ্যমান রয়েছে কঠোর লকডাউন। আর এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি নাকাল হতে হচ্ছে অসহায় গরিব দুঃখী মানুষদেরই।

আমাদের সমাজে হয়ত উত্থান, অধঃপতন এবং অবক্ষয় শুধুমাত্র দুর্বলদেরই। সবলরা তো সিংহাসনে বসে বেশ নিয়মতান্ত্রিক জীবন-যাপনে অভ্যস্ত। তারা কি করে বুঝবে খেটে-খাওয়া মানুষের দুঃখকষ্ট। তারা তো রাজার হালে দিব্যি দিন কাটিয়ে দিচ্ছেন৷ প্রণোদনা টাকা যায় মালিকদের পকেটে। খাবার না পেয়ে হাত পাতেন শ্রমিকরা। আগুনে পুড়ে কয়লা হন, চাপা পরেন বিল্ডিংয়ের তলে। তবু তাদের কথা ভাবা যেন বারণ। কারণ মালিকরা জানেন এক শ্রমিক মরলে আরেক শ্রমিক মিলবে সহজেই।

চলমান করোনা পরিস্থিতির এই দূরসময়ে সরকার ঘোষিত অসংখ্য প্রণোদনা প্যাকেজ এসেছে। কিন্তু সমাজের নিম্নস্তরের মানুষের নিকট আদৌ কি তা সঠিকভাবে পৌঁছেছে? কখনো কি আমরা তাদের জীবনের দুঃখকষ্টকে উপলব্ধি করতে চেয়েছি? আমরা শুরু ভাবি, তারা শ্রমিক৷ শ্রম দেওয়াই তাদের কাজ। কিন্তু এর বাইরের তাঁদেরও কিছু শখ-আহ্লাদ রয়েছে। রয়েছে জীবনকে উপভোগ করার অধিকার। কিন্তু সবলদের শাসিত সমাজে কে মাথা ঘামাবে তাদের নিয়ে? কার এত সময় আছে? সবাই যেন শুধু আমি, আমার আর আমাদের মধ্যেই আবদ্ধ। আর পহেলা মে সেতো খাতা কলমেই সীমাবদ্ধ।

 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ