Skip to content

৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শনিবার | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘দ্যা স্টারি নাইট’ স্রষ্টার মৃত্যুবার্ষিকী আজ

পৃথিবী বিখ্যাত চিত্রশিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যান গঘের নাম শোনেনি এমন মানুষ হয়তো খুব কমই আছে। চিত্রকলায় অভাবনীয় প্রতিভার প্রতিশব্দ ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ। পুরো পৃথিবী যার তৈরি চিত্রকলায় মুগ্ধ, সেই চিত্রশিল্পীর ১৩১ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৮৯০ সালের এই তারিখে রাত একটায় মারা গেলেন ভ‍্যান গঘ।

 

২৭ বছর বয়সে ঘরছাড়া হয়ে পুরোপুরি মনোনিবেশ করেছিলেন ছবি আঁকায়। সাঁইত্রিশ বছর জীবনের শেষ দশ বছরই তাঁর হাতে তুলি–রং–ইজেল–ক্যানভাস মুখরিত হয়েছিল। মাত্র ১০ বছরের ছোট্ট সময়েই প্রায় ২১০০ ছবি এঁকেছেন ভ্যান গঘ। যার মধ্যে অধিকাংশ জীবনের শেষ দু-তিন বছরে। এগুলোর মধ্যে ছিল ড্রইং, পেইন্টিং, জলরঙে আঁকা ছবি এবং নানা ধরনের স্কেচ। মৃত্যুর আগে শেষ দুই মাসে তাঁর ছবি আঁকা আরও বেড়ে গিয়েছিল। আগে আর্ট ডিলার হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেছিলেন ভ্যান গঘ। তবে কাজকর্মে খুব বেশি মনোযোগ ছিল না গঘের। ফলে কিছুদিন পরেই সেখান থেকে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। এরপর কিছুদিন শিক্ষকতা এবং তারপর ধর্মপ্রচারক হতে চেয়েছিলেন ভ্যান গঘ। কিন্তু দুইয়ে দুইয়ে চার হয়নি কিছুতেই। শেষে সব ছেড়ে দিয়ে শিল্পের জগতেই মনোনিবেশ করেন তিনি। 

 

তিনি বেতের তৈরি একটি হ্যাট পরতেন। রাতের অন্ধকারে কাজ করার জন্য সেই হ্যাটের ওপরে কয়েকটি মোম জ্বালিয়ে নিতেন। কারও কাছে আঁকা শেখেননি তিনি। নিজে নিজেই ক্যানভাসে তুলি বুলিয়ে একের পর এক কালজয়ী সব ছবি এঁকে গেছেন। 

 

যখন তিনি সূর্যের প্রতিকৃতি আঁকেন, তখন মানুষকে তিনি বোঝাতে চান সূর্য প্রবলগতিতে তার কক্ষপথ আবর্তন করছে। যখন ফসলের মাঠ আঁকেন তখন আসলে শস্যের বীজ উদ্‌গিরণের দৃশ্যকে আঁকতে চান। সাইপ্রাস গাছ তাঁর ভেতরে রক্তক্ষরণ ঘটায়। সবকিছু জ্বলেপুড়ে যেতে থাকে। তাঁর জীবন ছিল বড়ই বৈচিত্র। হতাশা, দুঃখ, কষ্ট এসবের মধ্যেই পার করেছেন তার ছোট এই জীবন।

 

একাকীত্ব ছিল তাঁর সব সময়ের সঙ্গী। ছোটো থেকেই একের পর এক ঘটনায় তাঁর ভেতরে বাসা বেঁধে ছিল ডিপ্রেশন। কোন সিদ্ধান্তে মনস্থির করতে পারতেন না ভিনসেন্ট। আর যার জেরে বারবার উপার্জনের ঠিকানা বদলাতে হয়েছে তাঁকে। অদ্ভুত আচরণের জন্য পড়তে হয়েছে মানুষের রোষে, শিকার হতে হয়েছে পীড়নের। একরোখা, জেদি ভিনসেন্টের সঙ্গে তাই সেভাবে অন্তরঙ্গতা তৈরি হয়নি কারোরই। আধুনিক মনোবিদদের অনেকের মতেই তিনি স্ক্রিৎজোফ্রেনিয়া, সিফিলিস, হাইপার-গ্রাফিয়া, ম্যানিক-ডিপ্রেশন, টেম্পোরাল লোব এপিলেপ্সির মত মানসিক রোগে আক্রান্ত ছিলেন।

 

জানা যায়, ১৯৮৮ সালের ডিসেম্বরে এক সন্ধ্যায় ভ্যান গঘ নিজেই নিজের কান কেটেছিলেন। এর সঠিক কারণ আজও  জানা যায়নি। ইতিহাসবিদদের মধ্যে এ নিয়ে বেশ ধোঁয়াশা রয়েছে। অনেকে বলেন নিজে পাগলামো করেই এ কাজ করেছিলেন, আবার অনেকে বলেন তার বিশ্বস্ত ও আদরের ভাই থিও- য়ের বিয়ের খবর শুনে তিনি এ কাজ করেছিলেন, আবার অনেকে বলেন যে আর্থিক ও মানসিকভাবে তিনি ভেঙ্গে পড়েছিলেন, তাই হতাশায় তিনি নিজের কান কেটেছিলেন।

 

 

ভ্যান গঘের আঁকা বিখ্যাত ছবিগুলোর একটি হল ‘দ্য স্টারি নাইট’। সম্ভবত এটিই তাঁর আঁকা সবচেয়ে বিখ্যাত ছবি। অনেকেই আছেন যারা তার এই ‘স্টারি নাইটে’র মাধ্যমে তাকে চিনে। অনেক চিত্র সমালোচকের মতে, ছবিটি গঘের আঁকা সবচেয়ে বিখ্যাত ছবি। ১৮৮৯ সালে ‘দ্য স্টারি নাইট’ এঁকেছিলেন তিনি। ছবিটি গঘ এঁকেছিলেন দক্ষিণ ফ্রান্সের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে। ব্যক্তিগত জীবনে তখন টালমাটাল সময় পার করছিলেন তিনি। নিজেই গিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন ওই আশ্রয়কেন্দ্রে। সেখানেই সৃষ্টি হয় ‘দ্য স্টারি নাইট’।

 

১৮৯০ সালের ২৯ জুলাই মারা যান তিনি। এর দুইদিন আগে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। তার মৃত্যু নিয়েও রয়েছে দ্বিমত। তবে সর্বোচ্চ স্বীকৃত হল- চিলেকোঠার একটু দূরেই গমক্ষেতের রাস্তার পাশে নিজেই নিজের বুকে গুলি ছুঁড়েছিলেন তিনি। বুকে হাত চেপে ছুটতে ছুটতে নিজের ঘরে চলে এসেছিলেন ভিনসেন্ট। প্যারিস থেকে ছুটে এসেছিলেন তাঁর ভাই থিও। এরপর ২৯ ঘণ্টা যন্ত্রণায় কাতরানোর পর মৃত্যুবরণ করেন তিনি। থিও হাতে হাত রেখে বসে ছিলেন শেষ মুহূর্ত অবধি। জিজ্ঞেস করার পর তিনি জবাব দিয়েছিলেন, ‘আমার দেহ, আমি যা ইচ্ছা করতে পারি’।

 

প্যারিস থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার দূরে 'ওভে সুর ওয়াজ’-এ চিরঘুমে শায়িত আছেন ভিনসেন্ট। পাশেই প্রিয় ভাই থিও'র সমাধি। জীবনের শেষ দিনগুলো এই ছোট্ট উপশহরেই কাটিয়েছেন ভিনসেন্ট। 

 

ইতিহাসে আমরা দেখি এমন চিত্রশিল্পী খুব কমই আছেন, যারা জীবনদশায় তাদের অমর সৃষ্টির স্বীকৃতি পেয়েছেন। জীবনদশায় অবহেলিত হয়েছেন সবার কাছে। ভিনসেন্ট ভ্যান গঘও তাদের ব্যতিক্রম নন। বেঁচে থাকতে শিল্পী হিসেবে সম্মানও পাননি বিন্দুমাত্র। ছবির মূল্য তো দূরের কথা তার এই ছবিকে অনেকে পাগলও বলেছিলেন। মৃত্যুর বছরেই তাঁর আঁকা ছবি ‘দ্য রেড ভাইনইয়ার্ড’ চারশো ফ্র্যাঙ্কে বিক্রি হওয়ায় খুশি হয়েছিলেন ভিনসেন্ট। ভাই থিওকে চিঠিতে উচ্ছ্বসিত হয়ে লিখেছিলেন স্বপ্নের কথা। ‘আমি আশাবাদী প্যারিসের ছোট্ট এক কফিশপে একদিন আমার ছবির একক প্রদর্শনী হবে’। তা হয়েছে তবে তার মৃত্যুর অনেক পরে। এখন গঘের ছবি মানেই লক্ষ লক্ষ ডলার। তার একটি পিস্তল ছিল। সেটি কিছুদিন আগে বিক্রি হয়েছিল প্রায় ১ কোটি ২৭ লক্ষ টাকায়। অথচ বেঁচে থাকতে তিনি এর কিছুই পাননি।

 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ