Skip to content

৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শনিবার | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আপনার সন্তানকে মাসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ে সচেতন করছেন তো? 

রশনি, ঢাকার একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া তরুণী। ঈদের ছুটিতে ঢাকা ছাড়ার পূর্বে সে তার সহপাঠী মুবতাসিম কে সঙ্গে নিয়ে 'বসুন্ধরা সিটি' গেলেন ঈদের কেনাকাটার উদ্দেশ্যে। ঘুরতে ঘুরতে এক দোকানে ঢোকার পর হঠাৎ তার মনে হল- আশপাশের সবকিছু দুলে উঠলো যেন, মাথা চক্কর দিয়ে পরে যাওয়ার আগেই সে নিজেকে সামলে নিল। দোকানের বিক্রয়কর্মী এগিয়ে আসলো তাকে সাহায্য করতে। বসার জন্য চেয়ার দেওয়া হলো এবং রোজা ভেঙে পানি খেতে বলা হলো তাকে। শারীরিক অবস্থার কথা চিন্তা করে পানি খেতে খেতে রশনির মনে হলো- তার মাসিক শুরু হয়েছে। ব্যস্ততায় সে তারিখটি ভুলে গিয়েছিল এবং সাথে করে প্যাড আনা হয়নি। মুহূর্তের প্রচণ্ড আশঙ্কা ও উৎকণ্ঠায় আড়ষ্ট হয়ে গেল সে। নিজেকে দোষারোপ করতে করতে সে ভাবতে লাগলো তার মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেয়ে কীভাবে এই ভুল করে ফেললো। এখন সে এই অবস্থায় কোথায় যাবে, কাকে বলবে! কোনরকম ওড়না দিয়ে নিজেকে ঢেকে সে বের হলো দোকান থেকে। জড়সড় হয়ে হাঁটতে লাগলো। এতক্ষণ দূর থেকে সবকিছুই দেখেছে মুবতাসিম। যা বোঝার তিনি বুঝে ফেলেছে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিজের মুঠোফোনটি রশনির হাতে দিয়ে সে বললো, "তোমার কি ঔষধ লাগবে নামটা এখানে লিখে দাও, রশনি। তুমি দাঁড়াও, আমি ঔষধ এনে দিচ্ছি।" এতক্ষণে আশার আলো দেখতে পেলো রশনি। মুঠোফোন হাতে নিয়ে সে স্যানিটারি প্যাডের নামটি লিখে দিলো। সে নিজেও নিঃসংকোচে কথাটা বলতে পারতো মুবতাসিম কে। তবে মুবতাসিম নিজেই পরিস্থিতি বুঝে নেওয়ায় তার জন্য খুব সহজ হলো ব্যাপার টা সামাল দিতে। ক্ষণিকের মধ্যেই প্যাড কিনে এনে দিল মুবতাসিম। রশনি তাকে ধন্যবাদ জানালে সে আশ্বাসের সুরে জবাব দিল- "এটা কোন ব্যাপার না। আমার মায়ের ও হয়। খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। আমার ভালো লাগলো তোমাকে সাহায্য করতে পেরে।"

 

ওপরের ঘটনার থেকে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দুটো দিকেরই ধারণা পাওয়া যায়। মুবতাসিম এর মা তার ছেলেকে বিষয়টা সম্পর্কে সচেতন করেছিলেন বলেই, মুবতাসিম তার সহপাঠীর এই সময়ে লজ্জা এবং সংকোচ কাটিয়ে তাকে সাহায্য করতে পেরেছিল। অপরদিকে শপিং মলে নারীদের টয়লেট থাকার পাশাপাশি সুরক্ষার জন্য স্যানিটারি প্যাডের ব্যবস্থা থাকলে রশনিকে কোন দুর্ভোগ পোহাতে হতো না। 

 

মাসিক কোন রোগ নয় বরং রিপ্রোডাকটিভ সিস্টেম বা জন্মধারা পদ্ধতির একটি প্রক্রিয়া। এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়াটি সমাজে ট্যাবুতে পরিণত হয়েছে। কোন সমাজে ট্যাবু (taboo) হল একটি অন্তর্নিহিত নিষেধ বা ধর্মীয় বা সামাজিক বেড়াজাল অতিক্রম বা কোন কিছুর বিরুদ্ধে নিরুৎসাহিত সাংস্কৃতিক অনুভূতি, যা খুবই বিপদজনক বা বীভৎস, বা সম্ভবত সাধারণ মানুষের কাছে অত্যন্ত পবিত্র বা অপবিত্র বিবেচনাবোধ। যখন কোন প্রচলিত নিয়ম বা সংস্কার ট্যাবুতে পরিণত হয় তার সঙ্গে কোন না কোন ভুল তথ্য জড়িয়ে যায়। নির্দিষ্ট কোন সূত্র না থাকলে আমরা কখনই নিশ্চিতভাবে বলতে পারব না যে, কোন একটি তথ্য সম্পূর্ণ ভুল। মাসিককে জনস্বাস্থ্যের অন্তর্গত একটি বিষয় হিসেবে আমাদের আলোচনা করতে হবে। মাসিকের অব্যবস্থাপনার জন্য নারীদের প্রজননক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নারীরা নানা রোগে আক্রান্ত হন। তাই মাসিককে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বা কর্মক্ষেত্রসহ সব জায়গায়  স্বাভাবিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। রাস্তাঘাটে পাবলিক টয়লেট গুলোতে যদি নারীদের মাসিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারি ভাবে স্যানিটারি ন্যাপকিন এর ব্যবস্থা রাখা হয়, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, শপিং মল, বা কর্মক্ষেত্রসহ সব জায়গায় যদি প্রশাসনের উদ্যোগে স্যানিটারি ন্যাপকিন এর ব্যবস্থা করা হয় তাহলে জরুরি মুহূর্তে নারীরা উদ্বিগ্ন না হয়ে নির্বিঘ্নে নিজেদের কাজ করতে সক্ষম হবেন। 

 

পরিবার থেকেও এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতনতা বাড়াতে হবে। ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে সন্তানদের সচেতন করতে হবে মাসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ে। মানুষের আচরণ তখনই বদলায় যখন সে নিজে চেষ্টা করে। আর সচেতনতা তার জ্ঞানের মধ্যে আসে শুধু দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের মাধ্যমে। যখন সমাজের সকল স্তরের পরিবার গুলোতে মাসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার লক্ষ্যে  আলাদা বাজেট থাকবে তখন আর নারীদের সমস্যা পোহাতে হবে না। অনেক স্কুল-কলেজে স্যানিটারি ব্যবস্থা থাকলেও তা ব্যবহারের অনুপযুক্ত। তাই সেদিকেও নজর দিতে হবে। 

নিম্নবিত্ত পরিবার এবং প্রতিবন্ধী নারীদের ক্রয়ক্ষমতাকেও গুরুত্ব দেওয়া এখন সময়ের দাবি। অনেক নিম্নবিত্ত পরিবারের নারীরা মাসিকের সময় এখনো অস্বাস্থ্যকর কাপড় ব্যবহার করেন স্যানিটারি ন্যাপকিন ক্রয় করতে পারেন না বলে। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে যেন স্যানিটারি প্যাডের মূল্য নির্ধারণ করা যায় সে বিষয়ে উপযুক্ত মহল থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শুধু সক্ষম নারীদের কথা না ভেবে প্রতিবন্ধী নারীদের সুরক্ষার বিষয়েও কাজ করতে হবে। প্রতিবন্ধীরা নানা ধরনের হয়ে থাকে। তাই তাদের চাহিদাও নানা রকমের। কিন্তু বাস্তবতা খুবই ভয়াবহ। নানাভাবে তারা সমাজে অবহেলিত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কর্মক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদের জন্য উপযোগী কোন টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। অনেক মা ঠিকমতো জানেন না কীভাবে এসব সন্তানকে শিক্ষা দেবেন। তাই শিক্ষকদের সচেতন হতে হবে। নারী সুরক্ষা নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন মহল গুলোও এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে। সর্বোপরি একটি সুস্থ-সুন্দর সমাজ ও দেশ গড়তে চাইলে পরিবার থেকেই সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি, সকল সকল সামাজিক মহল তথা সরকারকে এগিয়ে আসতে নিরাপদ মাতৃত্বের লক্ষ্যে নারীদের মাসিক সুরক্ষা নিশ্চিত করণের বিষয়ে।

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ