Skip to content

২২শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | মঙ্গলবার | ৬ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মার্শাল আর্টকন্যা সান্তনা

লালমনিরহাটের নিভৃত পল্লির কাঁদামাটির সাথে বেড়ে ওঠা অনন্যউদাহারণ সৃষ্টিকারী একমুখ সান্তনা। তিনি মার্শাল আর্টে পেয়েছেন দেশ-বিদেশের স্বর্ণ, রৌপ্য, ব্রোঞ্জের অনেক পুরস্কার, পেয়েছেন অনেক খ্যাতিও। এখনও তিনি নিজে তায়কোয়নদো প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন, নানাবয়েসি নারী ও শিশুদের শারীরিক মানসিকশক্তি ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য দিচ্ছেন প্রশিক্ষণ। তার কাছে শিখে শিক্ষার্থীরাও পাচ্ছে নানাপুরস্কার। এজন্য লালমনিরহাটে গড়ে তুলেছেন তায়কোয়নদো এসোসিয়েশন (এলটিএ)।  

তাঁর পুরোনাম সান্তনা রানী রায়। তিনি লালমনিরহাটের আদিতমারীর সারপুকুর ইউনিয়নের হরিদাস গ্রামের প্রান্তিক কৃষক সুবাস চন্দ্র রায়ের সন্তান। শৈশবে দরিদ্রতা ছিল তার প্রধান শত্রু। কৈশোরে শুধু মেয়ে হওয়ার কারণে তাকে সামাজিক নানাপ্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছে, যা ঠেকানোর সাধ্য তার ছোট্ট শরীরে ছিল না। পরে ২০০৫ সালে রংপুরে অনার্স পড়ার সময় তার সুযোগ আসে কারাতে-দো শেখার। পরে ২০১০ সালে রাজশাহীতে পড়ার সময় শুরু হয় মার্শাল আর্ট (তায়কোয়নদো) শেখা। আরও পরে ২০১১ সালে ঢাকা তায়কোয়নদোতে তার প্রশিক্ষণ শুরু হয়। সে-বছরই জাতীয় পর্যায়ে পান রৌপ্যপদক। তারপর আর পিছন ফিরে তাকাননি। একে একে সাফল্যের ঝুড়িতে নিয়েছেন দেশ-বিদেশের আটটি স্বর্ণ, দুটি রৌপ্য ও দুটি ব্রোঞ্জ পদক। তিনি লালমনিরহাট তায়কোয়নদো অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক হিসাবে অর্জন করেছেন সি.আর.আই ইয়ং বাংলার জয়বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড ২০১৮।

মার্শাল  আর্টকন্যা  সান্তনা              সান্তনা বাংলাদেশের দশজন ব্ল্যাকবেল্টধারী (মার্শাল আর্ট- তায়কোয়নদোতে) নারীদের মধ্যে একজন। তিনি ২০১১ সালে এই ব্ল্যাকবেল্ট অর্জন করেন। ২০১৮ সালে তিনি অর্জন করেছেন ব্ল্যাক বেল্ট দ্বিতীয় ড্যান। তাছাড়া সান্তনা জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় নানা পদক পাওয়ার পরও ২০১৪ সালে নেপালের কাঠমন্ডুতে সপ্তম এশিয়ান তায়কোয়নদো চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণপদক, ২০১৫ সালে উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ং ইয়ংয়ে  অনুষ্ঠিত বিশতম বিশ্ব তায়কোয়নদো প্রতিযোগিতায় ব্রোঞ্জপদক, ২০১৮ সালে আবারো নেপালের রাজধানী কাঠমন্ডুতে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ সাউথ এশিয়ান তায়কোয়নদো প্রতিযোগিতায় রৌপ্যপদক, ২০১৯ সালে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত তৃতীয় ওপেন সাউথ এশিয়ান তায়কোয়নদো আইটিএফে ব্রোঞ্জপদক অর্জন করেন।
সাফল্য শুধু যে, সান্তনা রানী রায় নিজেই পেয়েছেন এমন নয়, বরং তার প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত লালমনিরহাট তায়কোয়নদো অ্যাসেসিয়েশনের (এলটিএ) প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী শিক্ষার্থীরাও পেয়েছেন স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জপদক। এখন সান্তনার শিক্ষার্থীরাই সান্তনার সাথে প্রতিযোগিতা করছে। ক্রমে তার    শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। 
সান্তনা লালমনিরহাট তায়কোয়নদো অ্যাসোসিয়েশন (এলটিএ) এ কর্মকান্ডের জন্য স্পোর্টস এবং ফিটনেস বিভাগের শরীরচর্চা ও আত্মরক্ষা শ্রেণিতে সিআরআই ইয়ং বাংলার জয়বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড ২০১৮ লাভ করেন। ঢাকার সাভারে অবস্থিত শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইন্সটিটিউটে ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় লালমনিরহাট তায়কোয়নদো অ্যাসোশিয়েশনের (এলটিএ) প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক সান্তনা রানী রায়ের হাতে পদক তুলে দেন। বর্তমানে সান্তনা ঢাকার বিএসবি ক্যামিব্রিয়ান এডুকেশন গ্রুপের (স্কুল শাখা) মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণ বিভাগের প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন।

মার্শাল  আর্টকন্যা  সান্তনা
সান্তনা বলেন, দরিদ্রতা ও সামাজিক বৈষম্যের শিকার হয়ে আমি আমার শৈশব, কৈশোর, তারুণ্য আর যৌবনের উচ্ছ্বাসের কোনোটাই উপভোগ করতে পারিনি। আমি চাই মেয়েরা স্বাবলম্বী  হোক শিক্ষা ও সামর্থ্য।  বাংলাদেশের ঘরে ঘরে আমার মতো মার্শাল আর্ট কন্যা তৈরি হোক। এ-লক্ষ্যেই লালমনিরহাট তায়কোয়নদো অ্যাসিয়েশন (এলটিএ) কাজ করে যাবে।
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক তায়কোয়নদো অ্যাসোসিয়েশন (বিআইটিএ)-এর সেক্রেটারি জেনারেল মাস্টার সোলায়মান সিকদার বলেন, লালমনিরহাটের আদিতমারীর অজপাড়াগাঁ থেকে উঠেআসা অদম্য মেধাবী ও সাহসী এক যুবা নারী মার্শাল আর্ট কন্যা সান্তনা রানী রায়। আমি তাকে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিয়েছি, তার প্রশিক্ষণ গ্রহণের আন্তরিকতা ও যে-কোনো প্রতিযোগিতায় বিজয় লাভের  আত্মিক অনুভূতি দেখেছি।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর লালমনিরহাটের প্রমিলা ক্রীড়াজগতের যাদের নিয়ে আমরা গর্ব করি ও যাদের মাঝে উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখতে পাই তেমন একজন যুবানারী সান্তনা রানী রায়। তার হাত ধরে আগামীর নারীরা এগিয়ে যাবেন।
 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ