আবারও ট্রলের শিকার চিফ হিট অফিসার, কিন্তু কেন
সারাদেশে কয়েকদিন যাবৎ তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে! এই দাবদাহে মানুষের মাঝে চরম অস্থিরতা ও কষ্টের দেখা দিয়েছে। গরমের প্রকোপে মানুষের টিকে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে কষ্ট আছেন শ্রমিকশ্রেণী! যারা প্রখর রোদের মধ্যে কাজ করে চলেছেন! এই তাপপ্রবাহ থেকে বাঁচতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার বিকল্প নেই। যেজন্য প্রত্যেক ব্যক্তিকে গাছ লাগালোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে৷ যাতে আগামী দিনগুলোতে কিছুটা হলেও সংকট কাটিয়ে ওঠা যায়। এই তীব্র তাপপ্রবাহ শুধু এই বছরেই নয় বরং বিগত বছরেরও মানুষকে খুব ভুগিয়েছে!
আর তীব্র দাবদাহের মধ্যেই গত বছর এই পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলামের মেয়ে বুশরা আফরিন। গতবছর তাকে নিয়োগ দেওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কড়া সমালোচনা হয়েছে। তারপর থেকে এতদিন তাকে কেউ মনেও রাখেননি! কিন্তু হঠাৎ তাপপ্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় এ বছরে তার কার্যক্রম শুরু হতে না হতেই সবাই মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে । তিনি এক সাক্ষাৎকারে তীব্র গরম থেকে বাঁচতে কী করা প্রয়োজন, এ বিষয়ে কথা বলেছেন৷ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ঢাকায় বাস করে প্রায় ৪ কোটি ৪২ লাখ মানুষ। তার ওপর গ্রাম থেকে এসে মানুষ প্রতিনিয়তই ঢাকায় ভিড় জমাচ্ছে। একদিকে বাড়ছে মানুষ, অন্যদিকে ঢাকা পরিণত হচ্ছে কংক্রিটের জঙ্গলে। সেই সঙ্গে ঢাকায় কমছে সবুজ।’ বুশরা বলেন, ‘ঢাকা শহরের প্রায় ৮০ শতাংশ গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এর ফলে নানারকম সমস্যার সঙ্গে বাড়ছে তাপমাত্রাও।’
দিন দিন বাড়তে থাকা জনসংখ্যার ঘনত্বের কারণে সংকটে পড়া ঢাকার তাপমাত্রা গ্রামাঞ্চলের চেয়ে বেশি হচ্ছে। এ সমস্যা সব থেকে বেশি হচ্ছে ঢাকার বিভিন্ন বস্তি অঞ্চলে। বুশরার বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে এবং পরিবেশবাদীদের পর্যবেক্ষণ মিলিয়ে দেখলেন, যা দাঁড়ায়, তাহলো: বস্তিগুলোতে পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও খাবার পানির ঘাটতি রয়েছে। সেখানকার ঘরগুলো তৈরি ধাতু বা টিন দিয়ে। গরমে সেগুলো ভয়াবহ আকার ধারণ করে। তার ওপর ওই অঞ্চলে বিদ্যুতের সমস্যাও বেশি। তিনি বলেন, গরমের কারণে শারীরিক নানা সমস্যা বাড়ছে। শুধু তাই নয়, গরমের কারণে বাড়ছে নানা গার্হস্থ্য সমস্যাও। এর সঙ্গে ঢাকার বাতাসের মান কমে যাওয়ার সঙ্গে নানারকম দূষণও বাড়ছে।
এ অবস্থা থেকে সবাইকে বাঁচানোর জন্য সিটি করপোরেশন নিয়মিত ‘হিট অ্যাওয়ারনেস ক্যাম্পেন’ চালাচ্ছে। ঢাকা এবং আশপাশের এলাকায় তাপমাত্রা কমাতে আরও বেশি গাছ লাগানো জরুরি। এই প্রসঙ্গে বুশরার অভিমত হলো: নগরীর রাস্তার ধারে ২ লাখ গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করা হয়। শুধু গাছ লাগালেই হবে না, সেগুলোর উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণও করতে হবে। নগরে বনায়ন করা খুব জরুরি। এখানে যে ফাঁকা এবং পরিত্যক্ত জায়গাগুলো আগে সেখানে সবুজায়ন করার দিকেও আমরা নজর দিয়েছি। আমাদের এখানে আরও অনেক পার্ক এবং সবুজে ঘেরা জায়গা দরকার। তাতে তাপমাত্রা যেমন কমবে, তেমনই পাখিসহ নানা প্রাণীও ফিরে আসবে।
ব্যক্তি উদ্যোগেও নগরবাসীকে পরিস্থিতি মোকাবিলার আহ্বান জানিয়েছেন চিপ হিট অফিসার। তীব্র দাবদাহে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে ব্যাগে একটা পানির বোতল, টুপি, ফ্যান, ছাতার মতো জিনিসপত্র সঙ্গে রাখতে হবে। তাহলে কিন্তু অনেকটাই নিরাপত্তা পাওয়া যেতে পারে।
বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করেছি, তাপদাহ মোকাবিলায় চিফ হিট অফিসারের পরামর্শের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে! সুরক্ষার জন্য তিনি পানির বোতল, টুপি, ফ্যান, ছাতা নিতে বলেছেন৷ সবাই আঁটকে গেছেন ছাতা শব্দে। এতেই মানুষের ইতিবাচক চিন্তা কতটা কমেছে সেটা বোঝা যায়। এখন আধুনিক যুগ। ছোট্ট কুলিং ফ্যানগুলো যে এখন পাওয়া যায় এটার ধারণা থাকলেও কেউ হয়তো স্বীকার করতে চান না বা সমালোচনা করার উদ্দেশ্যই তা মানতে না চান না। একটু বিবেচনা করলে বোঝা যায় তিনি কী বলেছেন! কথা হলো, বুশরা তো নগরবাসীকে তাপদাহ মোকাবিলায় বৈজ্ঞানিক ও পরিবেশসম্মতভাবে চলাফেরার পরামর্শ দিয়েছেন, তাহলে ফেসবুকে লোকজন তাকে নিয়ে ট্রল করছে কেন?