ঘুরে আসুন নেপাল
ঘোরাঘুরি করতে যারা ভালোবাসেন, তারা দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে চষে বেড়াতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। যতযাই হোক না কেন, ঘুরতে তারা যাবেনই, ঘুরতে যাওয়ার কথা তারা কখনো ভোলেন না। আবার এমনও অনেকে আছে যাদের মন খারাপের সময়টাতে ঘুরতে যাওয়ার কথাই মাথায় আসে।
এই ঘুরতে যাওয়ার তাগিদ যে শুধু ঘুরতে যাওয়াই হয় এমনটা নাও হতে পারে। এই ঘুরতে যাওয়াটা অনেক সময় নিজ সংস্কৃতিকে জানার তাগিদ থেকেও হতে পারে। বর্তমানে সবার মধ্যে রয়েছে মতভেদ। তাই তারা কেউ ঘুরতে যেতে চান রেসিডেন্সিয়াল এলাকাগুলোতে, কেউবা যান নিজ দেশের ইতিহাসখ্যাত জায়গাগুলোতে। আবার অনেকে ঘুরতে চলে যান দেশের বাইরে।
হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত দক্ষিণ এশিয়ার একটি ছোট দেশ নেপাল। দেশটির চারদিকে চীন ও ভারত। নেপালে জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ভিন্নতা, রাজপ্রাসাদ ও রাজকীয় বিভিন্ন স্থাপনা, শতবর্ষের পুরনো বিভিন্ন হিন্দু ও বৌদ্ধ মন্দিরে নানা ধরনের উৎসব নেপালে আশা পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। এছাড়া দেশটিতে যেতে পর্যটকদের আগে থেকে ভিসা নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। কারণ নেপালে পৌঁছানোর পরে আপনি নিতে পারবেন অন অ্যারাইভাল ভিসা।
নেপালের দর্শনীয় স্থান
কাঠমান্ডু
নেপালের সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান হল নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু। এটি জনসংখ্যা ও আয়তনের দিক দিয়ে নেপালের বৃহত্তম শহর। তবে শহরটি বিশ্বের অন্যান্য শহরের মতো নয়। শহরের কেন্দ্রস্থলে বিলাসবহুল পরিবেশের বিপরীতে রয়েছে বিভিন্ন প্রাচীন প্রাসাদ ও তাদের ধ্বংসস্তূপ। রয়েছে বিভিন্ন বৌদ্ধ ও হিন্দু মন্দির। তাই পর্যটনের পাশাপাশি শহরটি ঐতিহ্যগতভাবে খুবই পরিচিত। আর নেপাল ভ্রমণে উত্তেজনাপূর্ণ অভিজ্ঞতা শুরু হয় এই কাঠমান্ডু থেকে। এখানকার সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান হল দরবার স্কয়ার। এ দরবার স্কয়ারটি পাতান ও ভক্তপুরের দরবার স্কয়ারের তুলনায় বেশ বড়। কাঠমান্ডুর দরবার স্কোয়ারটিং ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃত। তবে এই দরবার স্কয়ারটি ২০১৫ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। যার এখনো মেরামত কাজ চলছে।
অন্নপূর্ণা পর্বত
নেপালের সেরা দ্বিতীয় দর্শনীয় স্থান হলো অন্নপূর্ণা। অন্নপূর্ণা হলো বেশকিছু পর্বতের সমষ্টি। এটি পোখরার পশ্চিমে অবস্থিত। হিমালয়ের কয়েকটি চূড়ার সারি এখানে অবস্থিত। অন্নপূর্ণা সবচেয়ে উঁচু চূড়াটির উচ্চতা প্রায় ৮০০০ মিটার। এ অঞ্চলের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থান হলো অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প ট্র্যাক, যারা ট্র্যাক করেন একবার হলেও সেখানে যাওয়া উচিত। আর তাই পেশাদার পর্বতারোহীদের জন্য নেপালের জনপ্রিয় এই ট্র্যাকিং স্পট। বছরের যেকোনো সময় এখানে ট্র্যাক করা গেলেও অতিরিক্ত বরফের কারণে মাঝে মাঝে ট্র্যাক বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে ট্র্যাকিংয়ের জন্য উপযুক্ত সময় হচ্ছে বসন্তকাল। অন্নপূর্ণা পর্বতসারি ট্র্যাক রাউটগুলোর অন্যতম হলো অন্নপূর্ণা সেঞ্চুরিয়ান ট্র্যাক, অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প ট্র্যাক ও অন্নপূর্ণা সার্কিট ট্র্যাক । ১৯৮৬ সালে একে নেপালের প্রাকৃতিক সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ভক্তপুর
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে ভক্তপুর অবস্থিত । নেপালের প্রাচীন রাজধানীটি ছিল রাজা-রানীদের আবাসস্থল। শহরটি বুধগা ও খোওপা নামে রয়েছে। শহরটি মধ্য যুগে শিল্প-সাহিত্য, কাঠের কারুকার্য , ধাতুর তৈরি মূর্তি ও আসবাবপত্রের জন্য বিখ্যাত। এখানে দেখা মিলবে বৌদ্ধ ও হিন্দু মন্দির অপূর্ব সমন্বয়। তবে ভক্তপুরে দর্শনীয় স্থান হল দরবার স্কয়ার । এখানে রয়েছে প্রাচীন অনেক রাজপ্রাসাদ। এছাড়া রয়েছে বেশ কয়েকটি হিন্দু ও বৌদ্ধ মন্দির। ভক্তপুরের উল্লেখযোগ্য আরও কিছু দর্শনীয় স্থান হলো পোর্টাস স্কয়ার, ভৈরবনাথ মন্দির, ভৈরব মূর্তি, রাজা ভুবতৃনন্দ্র মালার কলাম, ভর্শালা দুর্গা মন্দির, ন্যাশনাল আর্ট গ্যালারি সিদ্ধি লক্ষ্মী মন্দির, দত্ত নারায়ণ মন্দির, হিম সেন মন্দির ইত্যাদি। পুরো শহরটি ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
পোখরা
রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে ২০০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত পোখরা। জনসংখ্যার দিক দিয়ে এটা নেপালে দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর হলেও দেখে তা মনেই হবে না। শহরটি খুবই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। তার সঙ্গে মনোরম জলবায়ু ও নির্মল বাতাস। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর নেপালের এই পোখরা শহরকে বলা হয় নেপাল রানি ও নেপালের ভূস্বর্গ। শহরটি পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ ধৌলাগিড়ি, মানসুলু ও অন্নপূর্ণা ১-দিয়ে ঘিরে রয়েছে। পোখরা দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো নেপালের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক লেক ফেওয়ালেক। লেকের মাঝামাঝি স্থানে বারাহি হিন্দু মন্দির নামে একটি মন্দির রয়েছে। এছাড়া পোখরা আরও কিছু দর্শনীয় স্থান হলো ডেভিস ফল, মহেন্দ্র গুহা, স্মরণ কোড, ইন্টারন্যাশনাল মাউন্টে মিউজিয়াম, বরকা মেমোরিয়াল মিউজিয়াম ইত্যাদি। এছাড়া ট্র্যাকদের জন্য পোখরা হিমালয়ের গেটওয়ে, জমসন ও অন্নপূর্ণা অঞ্চলের ট্র্যাকগুলো শুরু হয় পোখরা থেকে।
পবিত্র লুম্বিনী
নেপালের তীর্থযাত্রীদের কাছে এই লুম্বিনী খুবই জনপ্রিয় একটি স্থান। কারণ ধারণা করা হয়, এটা সম্ভবত গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান। এটি নেপালের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি ছোট্ট শহরে অবস্থিত । প্রত্নতাত্ত্বিকভাবে বেশ গুরুত্ব রয়েছে। কেননা এটি ৫৫০ খ্রিষ্টপূর্বের নির্দেশনা বহন করে। কথিত আছে, গৌতম বুদ্ধের মা মায়া দেবী এখানে একটি গাছের কাছে গৌতম বুদ্ধের জন্ম দিয়েছেন। সেখানে ছোট্ট একটি পার্কের মাঝে মায়াদেবীর নাম অনুসারে মায়া দেবী মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে। সারা বিশ্ব থেকে বৌদ্ধ তীর্থযাত্রীদের এই তীর্থস্থান ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্য, ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট স্বীকৃতি পেয়েছে।
বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতিকে জানার অন্যতম একটি মাধ্যম হতে পারে ভ্রমণ। তাই আপনারা যারা ভ্রমণ, ট্র্যাকিং, কিংবা পর্বতারোহণ করতে ভালোবাসেন চাইলে ঘুরে আসতে পাড়েন নেপালের দর্শনীয় স্থানগুলো থেকে।
অনন্যা/জেএজে