শীতে শিশুর প্রয়োজন বাড়তি যত্ন
শীতের সময়টায় শিশুর দরকার বরাবর এর চেয়ে একটু বেশিই যত্ন। আপনার সোনামনির যত্নের জন্য জেনে রাখুন কিছু টিপস,
ঘরের তাপমাত্রা ঠিক রাখুন
পুরো বাড়িতে সম্ভব না হলেও শিশু যে ঘরটিতে বেশিরভাগ সময় কাটায় সে ঘরটিকে উষ্ণ রাখার চেষ্টা করুন। অনেক সময় দেখা যায় বাড়ির মধ্যকার কিছু ঘরের তাপমাত্রা গরম থাকে শিশুকে সেই ঘরেই রাখার চেষ্টা করুন। সম্ভব হলে হিটার, হিউমিডিফায়ার এবং গিজারের মতো সমস্ত গরম করার সরঞ্জামগুলির ব্যবস্থা করে রাখুন। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা পরলে জানালা বন্ধ রাখুন এবং হিটার ব্যবহার করুন। তবে অবশ্যই ঘরটি বায়ুচলাচল এর উপযুক্ত কিনা তার দিকে খেয়াল রাখবেন।
আরামদায়ক শীতের পোশাক পরান
ঠাণ্ডার হাত থেকে বাঁচার প্রধান অবলম্বন গরম ও আরামদায়ক পোশাক নির্বাচন করা। এক্ষেত্রে হালকা ঠাণ্ডা পরলে শিশুকে ফুলহাতার গেঞ্জি, পাতলা সোয়েটার, মোটা কাপড়ের ফুল প্যান্ট পড়াতে পারেন। তবে ভারী শীতে মোটা সোয়েটার, দস্তানা, মোজা ব্যবহার করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন ঠাণ্ডার তুলনায় অতিরিক্ত উষ্ণ কাপড় শিশুর জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। খালি পায়ে শিশুকে মেঝেতে হাঁটতে দিবেননা। এক্ষেত্রে তাকে মোজা পরিয়ে রাখার চেষ্টা করবেন যতটা সম্ভব।
নিয়মিত ম্যাসাজ করুন
শীতের সময় শিশুর শরীরে নিয়মিত ম্যাসাজ করা তার ত্বক এবং স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। যথাযথ বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য তাই প্রতিদিন শিশুকে ম্যাসাজ করা জরুরি। এছাড়াও নিয়মিত ম্যাসাজ তার দেহে রক্ত প্রবাহকে উদ্দীপিত করতে এবং তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে। আর ম্যাসাজ করার সময় কোনো ভালো ব্রান্ডের তেল ব্যবহার করুন যা শিশুর ত্বকে কোনো ক্ষতি করবেনা।
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন
শীতে ছোটবড় সবার ত্বকেরই অনেক বেশি যত্নের প্রয়োজন হয়। আর শিশুর ত্বক তো একটু বেশিই সংবেদনশীল। তাই সহজেই শীতের রুক্ষ পরিবেশ শিশুর ত্বক শুষ্ক করে তুলতে পারে। আর শুষ্কতা দূর করে ত্বককে নরম এবং কোমল রাখতে চাইলে তার ত্বকে নিয়মিত ভাল ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। এক্ষেত্রে অবশ্যই শিশুর ত্বকের জন্য তৈরি এমন কোনো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
ভারী কম্বল ব্যবহার করবেন না
কনকনে শীতে আপনার মনে হতেই পারে আপনার শিশুকে উষ্ণ রাখতে ভারী কম্বল খুব উপকারী । তবে এ ধারনা একদমই ঠিক নয়। যদি শিশুকে উষ্ণ রাখার জন্য ভারী কম্বল ব্যবহার করেন তবে সে তার হাত পা ঠিকভাবে নাড়াচাড়া করতে পারবেনা। এবং এটি করার চেষ্টা করার সময়, সে কম্বলটি নিজের মুখের উপরে টানতে পারে, যা এসআইডিএসের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলবে। আপনার শিশুর জন্য হালকা কম্বল ব্যবহার করুন এবং ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখুন।
যাতে সহজেই রোগ আক্রান্ত না হয়, খেয়াল রাখুন
শীতে শিশুরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। যেমন, সর্দি, কাশি, গলাব্যথা, জ্বর, নিউমোনিয়ায় ইত্যাদি। শীতে আবহাওয়া শুষ্ক ও ধুলাবালি থাকার কারণে মূলত শিশুরা এসব রোগে আক্রান্ত হয়। তাই এই সময়টায় অভিভাবকদের অনেকটা সচেতন থাকতে হবে যাতে শিশু এসব রোগে আক্রান্ত হতে না পারে। শিশুদের বাইরের ঠাণ্ডা বাতাস এবং ধুলাবালি থেকে দূরে রাখতে হবে। এজন্য এসময় শিশুদের বাইরে খুব বেশি না বের করাই ভালো, বিশেষ করে খুব সকাল বা রাতের দিকে। যতটা সম্ভব জনসমাগমপূর্ণ এড়িয়ে চলুন। শিশুদের গামছা, রুমাল, তোয়ালে প্রভৃতি আলাদা রাখুন ।
নিয়ম করে গোসল করান
শীতে শিশুদের গোসল এর ব্যাপার নিয়ে অনেকেই নানা দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকেন। অনেকে আবার একধরনের ভয়েই থাকনে ছোট্ট শিশুর গোসল নিয়ে। এসময় একাধারে প্রত্যেকদিন নয় বরং বিরতি দিয়ে দিয়ে গোসল করানো উচিত। হালকা গরম পানি ব্যবহার করে শিশুকে গোসল করাবেন। গোসল শেষে শিশুকে একটি তোয়ালেতে জড়িয়ে নিন এবং ভালোভাবে মুছে চটপট পোশাক পড়িয়ে ফেলুন। আর যেদিন খুব বেশি ঠাণ্ডা আবহাওয়া থাকবে সেদিন কোনোমতেই গোসল করানো উচিত নয়। কিন্তু একনাগাড়ে অনেক দিন গোসল না করিয়ে রাখবেন না।
পর্যাপ্ত খাবার নিশ্চিত করুন
শীতকালে বাচ্চাদের শরীর সুস্থ এবং সতেজ রাখতে ওদের এমন সব খাবারদাবার খাওয়ানো উচিত যাতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি এবং মিনারেল। দুধ, ডিম, বাদাম, ডাল শীতকালীন শাক-সবজি ও ফলমূল। ফলের ক্ষেত্রে লেবু, কমলা, মাল্টা, আমলকী এসব ফল খাওয়ানো ভালো। যেসব শিশু চিবিয়ে খেতে পারে না, তাদেরকে ফলের রস করে খাওয়াতে পারেন। এগুলো শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে। এছাড়াও সুপ, বিভিন্ন ধরনের শীতের সবজি দিয়ে খিচুড়ি রান্না করে খাওয়াতে পারেন। শিশুরা এ সময় যেন কোনো ধরনের ঠাণ্ডা খাবার না খায় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
তাহলে এবার শীতে দুশ্চিন্তা না করে এখন থেকেই আপনার সোনামনির যত্নের ব্যাপারে একটু বেশিই সচেতন হোন।