Skip to content

৩০শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বুধবার | ১৪ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বর্তমান সময়ে নারী শ্রমিকের অবস্থা

১৮৮৬ সালের পহেলা মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে শ্রমজীবী মানুষ তাদের অধিকার আদায়ে জন্য একজোট হয়ে লড়েছিল। অথচ, সময়টি দীর্ঘ হলেও আজ পর্যন্ত শ্রমজীবী মানুষের অধিকার ও কল্যাণ পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বড় বড় ও প্রতিষ্ঠিত কিছু কলকারখানা ও শিল্প-প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে উদ্যোগ গ্রহণ করলেও অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, মালিক বা শ্রমিক, কেউই তাদের দায়-দায়িত্ব ও অধিকার সম্পর্কে সচেতন নন।

 

বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নারী শ্রমিকদের অবদান অতি গুরুত্বপূর্ণ। কর্মক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের নারীরা এখন- সব জায়গায় নারীর অংশগ্রহণ চোখে পড়ে। মোট কথা, সমগ্র অর্থনীতিতে নারীর অবদান দৃশ্যমান। অথচ, প্রায় অনেক কর্মক্ষেত্রে নারী এখনও অনিরাপদ। পুরুষ সহকর্মী ও কর্মক্ষেত্রের মালিকপক্ষ হতে প্রায় নারী শ্রমিকদের যে যৌন হয়রানির শিকার হতে হয় তাকে। 

 

বাংলাদেশে সরকারি বেসরকারি চাকরি তথা আনুষ্ঠানিক খাতে নারী পুরুষের বেতন বৈষম্য অনেকটা কম হলেও অনানুষ্ঠানিক খাতে বৈষম্য এখনো অনেক বেশি।  আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থা আইএলও'র গ্লোবাল ওয়েজ রিপোর্টে দেখা যায় বিশ্বে গড়ে নারী পুরুষের আয় বৈষম্য ২২ শতাংশের মতো। কিন্তু বাংলাদেশে এটি মাত্র ২.২ শতাংশ যা সর্বনিম্ন।

 

জেনেভাভিত্তিক বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম ‘বিশ্ব লিঙ্গ বৈষম্য প্রতিবেদন – ২০১৫' এ বলা হয়েছে, বিশ্বের ১৪৫টি দেশে নারী-পুরুষের সমতা নিয়ে করা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৬৪তম৷ তবে লিঙ্গ বৈষম্য কমিয়ে আনা বা নারী-পুরুষের অসমতা দূর করার কাজে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় সবার থেকে এগিয়ে৷ 

 

শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণও উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণের হার ৩৮ শতাংশ, যা পাকিস্তানে ২৩ শতাংশ। সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৪ সালে দেশে কর্মক্ষেত্রে নারী ছিল মাত্র ৪ শতাংশ। এই হার ১৯৮০ সালের দিকে ৮ শতাংশ ও ২০০০ সালে ২৩ দশমিক ৯ শতাংশে ওঠে। তবে শ্রমবাজারে অংশগ্রহণের হার ২০১০ সালে বেড়ে ৩৬ শতাংশ হয়। ২০১৩ সালে অবশ্য কিছু কমে ৩৩ দশমিক ৫ শতাংশে নামে। বিবিএসের সর্বশেষ ২০১৬-১৭ সালের শ্রমশক্তি জরিপে নারী হিস্যা ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশের কথা বলা হয়েছে। ওই জরিপ অনুযায়ী, দেশে শ্রমশক্তির আকার ৬ কোটি ৩৫ লাখ। এর মধ্যে ৬ কোটি ৮ লাখ মজুরির বিনিময়ে কাজ করেন। মোট শ্রমশক্তিতে ৪ কোটি ২২ লাখ পুরুষ আর নারী ১ কোটি ৮৭ লাখ। দেশের শ্রমবাজারে ধীরে ধীরে বেড়েছে নারীর অংশগ্রহণ।

 

বর্তমানে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) পোশাক খাতের অবদান ১১ দশমিক ১৭ শতাংশ। মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৩ শতাংশই আসে পোশাক খাত থেকে। এশিয়ান সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্টের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে এই খাতে কাজ করা ৪০ লাখ শ্রমিকের ৫৯ দশমিক ১২ শতাংশ নারী। গত ৫০ বছরে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ অনেক বেড়েছে।

 

দেশের অর্থনীতির গতিময়তা বজায় রাখতে হলে নারীদের কর্মসংস্থানের হার আরও বাড়াতে হবে। এই বিপুল সংখ্যক নারী শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হলে তাদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য নতুন আইন প্রণয়নের পাশাপাশি তা শ্রম আইনে যুক্ত করা প্রয়োজন।

 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ