Skip to content

২রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বৃহস্পতিবার | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লড়ে যাওয়া এক যোদ্ধা মাবিয়া

ছোটবেলায় তার ইচ্ছে ছিল বড় হয়ে হবেন বউ। অদ্ভুত এই ইচ্ছে মনে জন্মেছিল তার বড় বোনদের বিয়ে দেখে। অঙ্গে থাকবে লাল শাড়ি আর গা ভর্তি সোনার গয়না। তবে, সোনার গয়না পরতে না পারলেও তার গলায় উঠেছে সোনার মেডেল। বলছি ভারোত্তোলক মাবিয়া আক্তার সীমান্ত  এর কথা৷ যার মাধ্যমে ক্রিকেট, ফুটবলের ভিড়ে ভারোত্তোলনকে নতুন করে জেনেছিল বাংলাদেশের মানুষ।

 

সালটা ২০১৬ ভারতের শিলং -গোহাটিতে চলছিল ১২ তম এসএ গেমস। গেমস চলাকালীন দ্বিতীয় পর্যন্ত স্বর্ণ শূন্য বাংলাদেশের প্রাপ্তির খাতায়। গেমসের তৃতীয় দিনে মেয়েদের ভারোত্তোলনে ৬৩ কেজি ওজন শ্রেনীতে স্বর্ণ জয় করেন মাবিয়া। আর তার হাত ধরেই প্রথম স্বর্ণের দেখা পায় বাংলাদেশ। স্বর্ণ জয়ের পর পুরষ্কার মঞ্চে যখন বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত বেজে ওঠে উড়তে থাকে জাতীয় পতাকা তখন মঞ্চে দাঁড়িয়ে অঝোরে কাঁদতে থাকে মাবিয়া। আর এই মুহূর্তটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হয় ভাইরাল। তার কান্না ছুঁয়ে গিয়েছিল কোটি মানুষের হৃদয়ে।

 

তবে, ভারোত্তোলনে তার পথ চলা মোটেই সহজ ছিল না। রাজধানীর খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ বস্তিতে বসবাস ছিল তার। অভাব অনটনের সংসারে টাকার অভাবে সপ্তম শ্রেণীতে বন্ধ হয়ে যায় তার লেখাপড়া। তবে, তার মামা বক্সিং কোচ শাহদাত কাজীর মাধ্যমে ২০১০ সালে ভারোত্তোলন খেলার সাথে পরিচয়। এক প্রকার জোর করেই ভারোত্তোলন খেলায় নাম লিখান তার মামা। এরপর শুরু করেন খেলা। খেলার মধ্যেও আসে বাঁধা। ২০১১ সালে ভারোত্তোলন করতে গিয়ে মাথা ফেটে যায় তার। আর তাই পরিবার থেকেই আসে বাঁধা। আর এতেই উল্টো জেদ চেপে বসে তার। মনে মনে ঠিক করেন যেই খেলা খেলতে গিয়ে রক্ত ঝরেছে সেখান থেকে খালি হাতে ফিরবেন না। এরপর আর খালি হাতে ফিরতে হয়নি তাকে।

 

২০১২ সালের দক্ষিণ এশীয় ভারোত্তোলন প্রতিযোগিতায় ব্রোন্জ পদক জয় করেন। এছাড়াও ২০১৩ সালের কমনওয়েলথ ভারোত্তোলন প্রতিযোগিতায় রৌপ্য পদক জয় করেন৷ এরপর ২০১৫ সালে ভারতের পুনেতে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ যুব ভারোত্তোলন চ্যাম্পিয়নশিপে ৬৩ কেজি ওজন শ্রেণীতে স্বর্ণ পদক জয় করেন। তবে, ২০১৬ এর এসএ গেমসে স্বর্ণ পদক জয় তার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। এই জয়ের মাধ্যমে তিনি দেশের মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন।

 

মাবিয়া আক্তারের জন্ম ১৯৯৯ সালের ৭ অক্টোবর মাদারীপুর জেলায়। তার বাবা হারুন অর রশীদ।  যিনি পেশায় একজন মুূদি দোকানী। তিন ভাইবোনের অভাব অনটনের সংসারে একসময় মাবিয়ার লেখাপড়া বন্ধ হলেও বর্তমানে তিনি খেলার পাশাপাশি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন।

 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ