সন্তানের বিয়ে নিয়ে ভাবনা
জন্মের পর থেকেই সন্তানের এটা সেটা নিয়ে ভাবতে হয় মা-বাবাকে। এই ভাবনার যেন কোনো শেষই নেই। সন্তানদের নিয়ে তাদের এই ভাবনার স্থায়িত্ব থাকে জীবনভর। সেই নবজাতক থেকে সন্তান যতো বড়ই হোক না কেন তার চিন্তা মা-বাবার মাথা থেকে যায় না। বাংলায় একটা কথা আছে ‘সন্তান যতো বড়ই হোক না কেন মা-বাবার কাছে তারা সবসময় ছোটোই থাকে।’ ঠিক সেরকমই সন্তানের বয়স যতোই হোক তাদের ভাবনা থেকে যেন মা-বাবা কখনোই মুক্ত থাকতে পারেন না।
সন্তানের জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হচ্ছে তার বিয়ে। কৈশোর থেকে যৌবনে পা রাখতেই শুরু হয় সন্তানের বিয়ে নিয়ে ভাবনা। ছেলে হোক বা মেয়ে সন্তানের বিয়ে দেয়াটাকে বড় একটা বোঝার সামিল ভাবা হয় বাঙালি পরিবারের কাছে। বিয়ে দিয়ে যেন বড় এক বোঝা থেকে মুক্তি পান তারা। মেয়েদের তো কুড়ির কোটা পার হতে না হতেই মা-বাবার মাথায় মেয়ের বিয়ের চিন্তা ঘুরপাক খায়।
ছেলেদের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। ছেলেদের ক্ষেত্রে গ্রাজুয়েশন শেষ করে চাকরি নিতেই বাসায় ঝড় ওঠে বিয়ের। অনেক মা-বাবার তো গভীর চিন্তায় পড়ে যান সন্তানের বিয়ে নিয়ে। আবার সন্তানের জীবনসঙ্গী নিয়ে ভাবনায় পড়েন তারা। সন্তানের জীবনসঙ্গী ভালো হবে তো? সন্তান সুখে থাকবে তো? এসব হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খায় তাদের মাথায়। আবার যদি মধ্যবিত্ত পরিবার হয় তাহলে তো বিয়ের খরচ নিয়েও ভাবতে হয় তাদের। বিয়ের খরচ, বরযাত্রীর খরচ এসব হিসেব করতে করতে মাথায় হাত দিতে হয় অনেকের। অনেকে আবার সন্তানের বিয়ের বিরাট পরিকল্পনা সেই ছোট থেকেই করে রাখে।
আবার অনেকেই আছে বয়স হলেও বিয়ে করতে চান না। বিয়ে করতে ভয় পাওয়ার বিষয়টিকে বলে ‘গ্যাসোফোবিয়া’। সন্তান যদি এমন হয় তাহলে তো মা-বাবার চিন্তার শেষ নেই। সন্তান কবে বিয়ে করবে? কেমন জীবনসঙ্গী চায়? আদৌ বিয়ে করবে কি না? এসব চিন্তায় পড়ে যান তারা। আসলে সব মা-বাবাই চান তাদের সন্তান যেন একজন ভালো ছেলে/মেয়েকে বিয়ে করে সুখী হয়। তারা তাদের সন্তানের বিয়ে নিজের জীবদ্দশায় দেখে যেতে চান। তাই সন্তানকে বিয়ের জন্য বলতে থাকেন।
আরেকটি চিন্তা তাদের মাথায় ঘুরতে থাকে তা হলো সন্তানের আবার আলাদা কোনো পছন্দ আছে কি না। আমাদের দেশে অনেক ক্ষেত্রেই সন্তানের পছন্দকে প্রাধান্য দেয়া হয় না। মা-বাবার পছন্দেই বিয়ে সেরে ফেলতে হয় সন্তানদের। এজন্য আবার অনেক ক্ষেত্রে সন্তান নিজেই পরিবারের অমতে আলাদা বিয়ে সেরে ফেলে। অনেকসময় সন্তান যেনো আবার না জানিয়ে বিয়ে করে ফেলে এ নিয়েও চিন্তায় থাকতে হয় তাদের।
আবার মেয়েদের ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায়, বয়স একটু বেশি হয়ে গেলে সহজে বিয়ে হতে চায় না। বাংলাদেশে এরকম ঘটনা অহরহ রয়েছে। আবার বয়স বেশি হওয়ায় যৌতুকের পরিমাণ বেশি দিতে হয় পাত্রপক্ষকে। দুঃখের ব্যাপার হলেও এটা সত্য যে আমাদের দেশে এখনো যৌতুকপ্রথা পুরোপুরি নির্মূল হয়নি। গ্রামাঞ্চলে এটি আরও বেশি। ফলে এ ব্যাপারেও ভাবতে হয় মা-বাবাকে।
প্রকৃতপক্ষে, বলতে গেলে সন্তানের বিয়ে নিয়ে কোনোভাবেই মা-বাবা তাদের ভাবনা থেকে মুক্ত থাকতে পারে না। এটি সন্তানের জীবনের বড় একটি সিদ্ধান্ত। অভিভাবকদের উচিত বিয়ে নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা না করা। সন্তানের পছন্দের প্রাধান্যও তাদের দেয়া উচিত। সন্তানদের সাথে খোলামেলা আলাপ করতে হবে তাদের বিয়ে নিয়ে। জীবনসঙ্গী নির্বাচন জীবনের একটি অনেক বড়ো সিদ্ধান্ত। তাই এই সিদ্ধান্তে সন্তান ও অভিভাবকের সম্মিলিত অংশগ্রহণই জীবনকে আরও সুন্দর ও সহজ করে তুলবে। সন্তান ও মা-বাবা উভয়কেই বুঝতে হবে ও বোঝাতে হবে। আর যতটা সম্ভব অতিরিক্ত চিন্তা থেকে মুক্ত থাকতে হবে তাদের।