Skip to content

২রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বৃহস্পতিবার | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিরিয়ানি বনাম তাজমহল

উৎসব পার্বণ কিংবা বিয়ে বাড়ির আতিথেয়তায় বাঙ্গালী রসনায় 'বিরিয়ানি' এক অপরিহার্য নাম। 'বিরিয়ানি' শব্দটি আদতে বাঙ্গালি না হলেও বাঙ্গালির মনে এর অবস্থান পাকাপোক্ত।

সুগন্ধি চালের ভাজে, ভেজে রাখা আলু কিশমিশে আর মোলায়েম নরম মাংসের মিশ্রণে, বাঙালির মন আটকে আছে গত ৪০০ বছর ধরে। এতগুলো বছর পেরিয়ে মোঘল আমল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত এতো টুকু কমেনি বিরিয়ানির জনপ্রিয়তা।

মূলত ফারসি শব্দ 'বিরিয়ান' থেকে আগত বিরিয়ানি'র রয়েছে হরেক রকম বৈচিত্র্য, বৈচিত্র্য রয়েছে হরেক রকম মশলার ব্যবহারে, সময়ের অদল বদলে, স্থান কাল পাত্রের পরিবর্তনে কিছু কিছু বদলেছে এর রন্ধন-প্রকৃতি। তাই তো পূর্বে বাংলা থেকে পশ্চিমে পেশোয়ার পর্যন্ত বিরিয়ানির এতো বৈচিত্র্য, বৈচিত্র্য রয়েছে গালভরা বাহারি নামকরণেও। বিরিয়ানির রকমফের: কাচ্চি বিরিয়ানি, তেহারি, হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানি, আম্বুর বিরিয়ানি, কোলকাতা বিরিয়ানি, থালাশ্বেরী বিরিয়ানি, রাওথের বিরিয়ানি, কল্যাণী বিরিয়ানি, দিন্দিগুল বিরিয়ানি, ভাটকালি বিরিয়ানি, ছেট্টিনাদ বিরিয়ানি।

উত্তর ভারতীয় কিছু বিরিয়ানি হচ্ছে: লক্ষ্ণৌ বিরিয়ানি, মুঘলাই বিরিয়ানি। পশ্চিম ভারতীয় কিছু বিরিয়ানি: মেমোনি বিরিয়ানি, বোম্বে বিরিয়ানি, সিন্ধি বিরিয়ানি, বোহরি বিরিয়ানি। 

অভারতীয় কিছু বিরিয়ানিঃ কাশ্মীরী বিরিয়ানি, লাহোরি বিরিয়ানি, আফগান বিরিয়ানি, ইস্পাহানী বিরিয়ানি, দুবাই বিরিয়ানি, ইরাকি/আরবীয় বিরিয়ানি, তুর্কি বিরিয়ানি, বার্মিজ বিরিয়ানি, নাসি কেবুলি বিরিয়ানি, কাপাংপাংগাম বিরিয়ানি ইত্যাদি।

বিখ্যাত গ্রন্থ 'আইন-এ-আকবর’ থেকে  শুরু করে বিখ্যাত পরিব্রাজক আল বারুণীর বর্ণনায় মোঘল আমলে বিরিয়ানির উল্লেখ পাওয়া যায়। বিরিয়ানি সুঘ্রাণে জিভে জল চলে আসেনা এমন বাঙ্গালি খুঁজে পাওয়া মুশকিল,আচ্ছা কখনো ভেবেছেন এই অতি জনপ্রিয় খাবারটির উৎপত্তিস্থল কোথায়?

ফরাসি শব্দ 'বিরিয়ান' থেকে আগত বলে নিশ্চয়ই ভাবছেন পারস্যেই এই খাবারটির আদিরূপ উৎপত্তিলাভ করেছিলো!
কিন্তু না, মোঘল সম্রাজ্ঞী মুমতাজ মহল নামটি শুনলেই চোখে কি ভেসে ওঠে?

নিশ্চয়ই,তাজমহল। কিন্তু শুধু তাজমহলই নয় বিরিয়ানির ইতিহাসের পাতা জুড়ে রয়েছে মোঘল সম্রাজ্ঞী মুমতাজ মহল'র নাম। শোনা যায়, এই সম্রাজ্ঞী একবার সৈন্য ব্যারাক পরিদর্শন করতে গিয়ে দেখেন সৈন্যদের শারীরিক অবস্থা খুবই শোচনীয়। তখন তিনি বাবুর্চি কে নির্দেশ দেন এমন কিছু তৈরি করতে যেটা শারীরিক ঘাটতি মেটাতে সক্ষম। তারপর বাবুর্চি চালে গোশতে মিলিয়ে যে খাদ্য তৈরি করেন সেটিই বিরিয়ানি হিসেবে পরবর্তীতে সৈন্য ব্যারাক ছাড়িয়ে মোঘলদের খাবার টেবিলের সুদৃঢ় জায়গা করে নেয়। বাঙ্গালীর মনে তাজমহলের থেকে কোন অংশেই এই সুখাদ্যের অবস্থান কম নয়। পরবর্তীতে পুরো ভারতবর্ষে ৪০০ বছর ধরে বিরিয়ানির স্বাদ গন্ধ মিশে আছে প্রতিটা ঘরে ঘরে, উৎসবে, আনন্দে কখনো বা বেদনায়। শুধু পেট কিংবা মন ভরানোই নয় বিরিয়ানির ইন্দ্রজালের মোহ বাঙালির অস্তিত্বে মিশে গেছে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ