Skip to content

২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | মঙ্গলবার | ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ব্যাকটেরিয়াও কি ভাবের আদানপ্রদান করতে পারে?

মানুষ, প্রাণী ও উদ্ভিদজগতের ওপর ব্যাকটেরিয়ার প্রভাব নিয়ে অনেক গবেষণা হচ্ছে৷ কিন্তু ব্যাকটেরিয়ার নিজস্ব জগত, পরস্পরের মধ্যে ভাবের আদানপ্রদান সম্পর্কে এতকাল বেশি কিছু জানা ছিল না৷ নতুন এক গবেষণায় বিস্ময়কর তথ্য উঠে আসছে৷

এখনো পর্যন্ত যা জানা গেছে, সেই জ্ঞান অনুযায়ী ব্যাকটেরিয়ার এমন কোনো ইন্দ্রিয় নেই যা দিয়ে সে এই আলোর সংকেত গ্রহণ করতে পারে৷ ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির বায়োকেমিস্ট মার্গারেট ম্যাকফল-নাই বলেন, ‘‘একটি তত্ত্ব অনুযায়ী, গোষ্ঠী হিসেবে দৃশ্যমান হওয়ার জন্যই ব্যাকটেরিয়া উজ্জ্বল হয়ে ওঠে৷ অতি ক্ষুদ্র আকারের কারণে একটিমাত্র ব্যাকটেরিয়ার কিন্তু সেই ক্ষমতা নেই৷ সে কারণে অনুমান করা হচ্ছে, যে ব্যাকটেরিয়া সেই মুহূর্তে উজ্জ্বল হতে শুরু করেছে, যখন তাকে দেখার মতো জটিল চোখ ছিল৷”

কিন্তু আরো বড় কোনো প্রাণীর চোখে ব্যাকটেরিয়া নিজেকে দৃশ্যমান করে তুলতে চায় কেন?

বিজ্ঞানীরা বহুকাল সন্ধান চালিয়েও সেই কারণ বুঝতে পারেন নি৷ তারপর হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের উপকূলে ক্ষুদ্র এক প্রাণী সেই রহস্য বুঝতে সাহায্য করলো৷ প্রতি সন্ধ্যায় হাওয়াইয়ান ববটেইল স্কুইড নামের ক্ষুদ্র অক্টোপাস জাতীয় প্রাণী তার গোপন আস্তানা থেকে বেরিয়ে এসে অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে ক্ষুদ্র কাঁকড়া ও চিংড়ি শিকার করে৷

চাঁদ ও তারার আলোয় নিজেই অন্য প্রাণীর শিকার হওয়ার ঝুঁকি এড়াতে সেই স্কুইড এক চতুর কৌশল প্রয়োগ করে৷ সেই প্রাণী তখন জ্বলজ্বল করতে থাকে৷ নিজের উজ্জ্বল হওয়ার ক্ষমতা না থাকায় সেই প্রাণী আসলে অ্যালিভিব্রিও ফিশেরি ব্যাকটেরিয়া কাজে লাগায়৷ স্কুইড তার বিশেষ লুমিনিয়াস অরগ্যানের মধ্যে সেগুলি পুষে রাখে৷ ব্যাকটেরিয়া স্কুইডের গোটা ত্বকের উপর ছড়িয়ে পড়ে৷

প্রায় পাঁচ সেন্টিমিটার বড় সেই প্রাণী এভাবে নিজের ছায়া উজ্জ্বল করে অন্য শিকারি প্রাণীর চোখে কার্যত অদৃশ্য হয়ে ওঠে৷ সেই প্রাণী গবেষকদের চোখেও এভাবে ধুলো দিয়ে এসেছে৷ তবে একটা উপায় পাওয়া গেছে৷ সিআইটি-র সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী ব়্যন্ডাল স্কারবরো জানান, ‘‘আমরা এমন এক প্রাণী সংগ্রহ করেছি৷ সেটি একটি পূর্ণবয়স্ক মাদি হাওয়াইয়ান ববটেল স্কুইড৷ আমরা সেটিকে ভোরবেলা পাঠিয়ে দিলে পরের দিন সকালে সেটি গন্তব্যে পৌঁছবে৷ পরিবহণের সময় সেটি প্রায় ২০ ঘণ্টা পথেই থাকে৷ সাধারণত যাত্রার ধকল ভালোই সামলে নিয়ে খুশিই থাকে৷”

বিমানে প্রায় ৪,০০০ কিলোমিটার ভ্রমণ করার পর ছোট স্কুইড প্যাসিডিনা শহরের গবেষণাগারে নতুন বাসায় পৌঁছেছে৷ আরো নয়টি নর ও মাদি প্রাণীর সঙ্গে সেটিকে বিশেষ পরিবেশে যত্ন করে রাখা হয়েছে, যাতে সেগুলি নিশ্চিন্ত মনে অনেক বংশবৃদ্ধি করতে পারে৷

এর আগের বহু গবেষণায় বিজ্ঞানীরা অক্টোপাস জাতীয় প্রাণীর সঙ্গে ব্যাকটেরিয়ার সিম্বায়োসিস বা সহাবস্থান সম্পর্কে অনেক জ্ঞান অর্জন করেছেন৷

যেমন জ্বলজ্বল করে ওঠার বায়োলুমিনেসেন্স প্রক্রিয়ার সময় দুই জীবের মধ্যে ভাবের আদানপ্রদানের লক্ষণ দেখা যায়৷ সিআইটি-র আণবিক জীববিজ্ঞানী এডওয়ার্ড রুবি বলেন, ‘‘এই সব ব্যাকটেরিয়া নিজস্ব ক্ষমতায় বায়োলুমিনেসেন্স সৃষ্টি করে, এমন কোনো বিশেষ কারণের কথা আমরা জানি না৷ একমাত্র সিম্বায়োটিক সংযোগের ক্ষেত্রে কোনো হোস্ট প্রাণীর জন্য আলো সৃষ্টি করে, যা সেই প্রাণী নিজস্ব আচরণে কাজে লাগাতে পারে৷ আমরা খুবই বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, যে ব্যাকটেরিয়া নির্দিষ্ট ঘনত্বে একত্রিত হলে আলোর মাত্রা আচমকা বেড়ে যায়৷ সেই ঘটনার কারণে আমাদের ধারণা হচ্ছে, যে ব্যাকটেরিয়া পরস্পরের মধ্যে ভাবের আদানপ্রদান করে৷ প্রাণী ও উদ্ভিদের মতো ব্যাকটিরিয়ারও নানা আচরণ রয়েছে৷ খুব ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলে সেগুলি স্পষ্ট হয়৷”

ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে ভাবের আদানপ্রদানের প্রক্রিয়াকে ‘কোরাম সেন্সিং’ বলা হয়৷ সে ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়া নানা ‘সিগন্যাল মলিকিউল’ ব্যবহার করে, যার ঘনত্ব তারা নিখুঁতভাবে পরিমাপ করতে পারে৷ যেমন আশেপাশে কোন প্রজাতি রয়েছে, একটি ‘সিগন্যাল মলিকিউল’-এর মাধ্যমে তারা সেটা টের পায়৷ অন্য একটির সাহায্যে সেটি বাকি ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বুঝতে পারে৷ ঘনত্ব যথেষ্ট বেশি হলে সব ব্যাকটেরিয়া একইসঙ্গে আলো জ্বালিয়ে দেয়৷

অনন্যা/এআই

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ