Skip to content

২৬শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ | বুধবার | ১২ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ত্বকের যত্নে বিভিন্ন তেলের ব্যবহার

প্রাচীনকাল থেকেই তেল ব্যবহার সৌন্দর্য ও ত্বকের যত্নের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। বিভিন্ন তেলে থাকা ভিটামিন, ফ্যাটি অ্যাসিড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ত্বককে সুস্থ, উজ্জ্বল ও কোমল রাখতে সহায়তা করে। তেল ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে আর্দ্রতা বজায় রাখে, বলিরেখা দূর করে এবং নানা ধরণের ত্বকের সমস্যার সমাধান করে। চলুন জেনে নেয়া যাক ত্বকের যত্নে বহুল ব্যবহৃত কয়েকটি তেল সম্পর্কে।

অলিভ অয়েল (Olive Oil)
অলিভ অয়েল জলপাই থেকে নিষ্কাশিত হয়। এটি ত্বকের জন্য একটি চমৎকার ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বককে সতেজ ও নরম রাখে। এটি ত্বকের শুষ্কতা দূর করে এবং প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। এটি বলিরেখা প্রতিরোধ করে এবং বয়সের ছাপ কমায়।

প্রতিদিন গোসলের পর কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল হাতে নিয়ে সারা শরীরে ম্যাসাজ করুন। রাতে ঘুমানোর আগে মুখে অলিভ অয়েল ম্যাসাজ করলে ত্বক সজীব থাকবে। ঠোঁট শুষ্ক হলে হালকা করে অলিভ অয়েল লাগিয়ে রাখলে ঠোঁট ফাটার সমস্যা কমে যাবে।

নারকেল তেল (Coconut Oil)
নারকেল তেল বহুবিধ উপকারিতার জন্য পরিচিত। এটি ত্বকের গভীরে পুষ্টি জোগায় এবং অনেক স্কিন প্রবলেম সমাধান করে। এটি ত্বকের ময়লা দূর করে এবং ব্লিচিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। এটি ব্রণ প্রতিরোধ করে ও ব্রণের দাগ হালকা করতে সাহায্য করে। এটি র‌্যাশ, চুলকানি বা অ্যালার্জির সমস্যা দূর করতে কার্যকর। নিয়মিত নারকেল তেল ব্যবহার ত্বককে আর্দ্র রাখে ও নরম করে।

রাতে ঘুমানোর আগে মুখে ও শরীরে নারকেল তেল লাগিয়ে ম্যাসাজ করুন। ঠান্ডা আবহাওয়ায় মুখ ও হাত-পায়ে লাগালে শুষ্কতা দূর হবে। মেকআপ রিমুভ করতে নারকেল তেল ব্যবহার করা যায়।

ল্যাভেন্ডার তেল (Lavender Oil)
ল্যাভেন্ডার ফুল থেকে তৈরি এই তেল ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। বিশেষ করে সংবেদনশীল ত্বকের যত্নে এটা অত্যন্ত কার্যকর। এই তেলে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে। এটি ব্রণ ও ত্বকের ইনফ্লেমেশন কমায়। ক্ষত বা কাটা জায়গায় এটি ব্যবহার করলে দ্রুত নিরাময় ঘটে। মুখের বয়সের ছাপ কমিয়ে ত্বক টানটান রাখতে সাহায্য করে।

ল্যাভেন্ডার তেল ও নারকেল তেল মিশিয়ে স্কিনে লাগালে ইনফ্লেমেশন ও ব্রণ দূর হয়। ২-৩ ফোঁটা ল্যাভেন্ডার তেল ময়েশ্চারাইজারের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। রাতে ঘুমানোর আগে হাতে বা পায়ের তালুতে লাগালে ভালো ঘুম হয়।

আমন্ড তেল (Almond Oil)
আমন্ড বা বাদাম তেল ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। বিশেষত শুষ্ক ত্বকের জন্য এটি বহুল ব্যবহৃত। এতে ওমেগা-৯ ও ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা ত্বককে সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখে। বলিরেখা দূর করে এবং বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না। ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে আর্দ্রতা ধরে রাখে। চোখের নিচের কালো দাগ কমায়।

রাতে ঘুমানোর আগে কয়েক ফোঁটা আমন্ড তেল মুখে ম্যাসাজ করুন। চোখের নিচের ডার্ক সার্কেল কমাতে প্রতিদিন এক ফোঁটা করে ব্যবহার করুন। লিপ বাম হিসেবে শুষ্ক ঠোঁটে ব্যবহার করা যায়।

তিলের তেল (Sesame Oil)
তিলের তেল শীতকালে ত্বকের যত্নে দারুণ উপকারী। কারণ এটি সহজেই ত্বকে শোষিত হয় এবং আর্দ্রতা ধরে রাখে। এটি শুষ্ক ত্বকের জন্য আদর্শ ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। এটি মুখের রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে ত্বককে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করে। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বক রক্ষা করে। ত্বকের দাগ ও কালো ছোপ কমাতে সাহায্য করে।

প্রতিদিন সকালে বা রাতে ত্বকে ম্যাসাজ করলে ত্বক নরম ও মসৃণ হবে। হালকা গরম করে লাগালে শীতের শুষ্কতা দূর হয়। স্ক্যাল্প ম্যাসাজের জন্যও ব্যবহার করা যায়।

আর্গান তেল (Argan Oil)
আর্গান তেল ত্বকের জন্য একটি প্রাকৃতিক টনিক হিসেবে কাজ করে। এতে ভিটামিন ই ও ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে যা ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে। বলিরেখা ও বয়সের ছাপ প্রতিরোধ করে। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য উপযুক্ত কারণ এটি ত্বককে আর্দ্র রাখলেও অতিরিক্ত তেলতেলে করে না। ব্রণ ও ব্রণের দাগ কমায়।

প্রতিদিন সকালে ও রাতে ২-৩ ফোঁটা আর্গান তেল মুখে ম্যাসাজ করুন। মেকআপের আগে স্কিনে লাগালে স্কিন হাইড্রেটেড থাকবে। শীতকালে লিপ বাম হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

ত্বকের যত্নে তেল ব্যবহার খুবই কার্যকর। তবে ত্বকের ধরন অনুযায়ী সঠিক তেল নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনার ত্বক শুষ্ক হয় তবে অলিভ অয়েল, নারকেল তেল বা আমন্ড তেল ব্যবহার করতে পারেন। সংবেদনশীল বা ব্রণপ্রবণ ত্বকের জন্য ল্যাভেন্ডার তেল ও আর্গান তেল ভালো বিকল্প। নিয়মিত ও সঠিক পদ্ধতিতে তেল ব্যবহারের মাধ্যমে ত্বকের উজ্জ্বলতা ও সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলা সম্ভব।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ