Skip to content

২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শনিবার | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এক সফরে সিলেটের পাঁচ

সফরের জন্য কোথাও যেতে চাচ্ছেন। তাহলে সিলেটের এই পাঁচটি জায়গা অন্যতম। এই তিনটি জায়গায় খুঁজে পাবেন ভ্রমণের পাশাপাশি শান্তি ও যান্ত্রিক জীবনে একটুখানি স্বস্তি। পাহাড়, কর্ণা, চা বাগান বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি ভ্রমণপিপাসুদের পছন্দের শীর্ষে। অনেকে এক দিনের ছুটিতে সিলেটে আসেন। কিন্তু কোথায় ঘুরবেন, তা নিয়ে সময়ের হিসাব কষতে থাকেন। তাই একদিনে শান্তি আনন্দ সবই মিলবে সিলেটের এই পাঁচটি জায়গায় চলুন জেনে নেই:

ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন বা ব্যক্তিগত বাহনে রাতে রওনা দিয়ে ভোরে পৌঁছে যাবেন সিলেট। সকালের নাশতা সেরে দিনভর ঘুরে দেখতে পারেন সিলেটের দুই উপজেলার পাঁচটি পর্যটনকেন্দ্র। ব্যক্তিগত বাহন না থাকলে সারা দিনের জন্য ভাড়া নিতে পারেন সিএনজি অটোরিকশা বা মাইক্রোবাস। খরচ পড়বে আড়াই থেকে চার হাজার।

সংগ্রামপুঞ্জি ও জাফলং
সংগ্রামপুঞ্জি বা সেনগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা বা মায়াবী ঝর্ণা এবং আরেকটি হলো উৎমাছড়া। জাফলং জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ১৫-২০ মিনিটের হাঁটা দূরত্বে অবস্থিত এ ঝর্ণাটি ভারতের সীমান্তে পড়েছে। তবে বিএসএফের প্রহরায় চাইলেই বাংলাদেশীরা এ কর্নার চূড়া পর্যন্ত উঠতে পারে। কয়েক ধাপবিশিষ্ট এমন ঝর্না কমই দেখতে পাওয়া যায়। ঝর্ণার খানিকটা দূর থেকেই এর মেঘালয়ের পাহাড় বেয়ে বয়ে যাওয়ার গর্জন কানে আসবে। সামনে যেতেই চোখে পড়বে গাছ, পাথর আর পানির অপূর্ব মেলবন্ধন। পাহাড়ের গা বেয়ে বেশ কয়েকটি ধারায় নেমে আসছে দুগ্ধ সাদা পানির স্রোত। সাথে হয়ে গেলো জাফলং ভ্রমণ। কারণ জাফলং একদম কাছাকাছি। মনোরম পরিবেশ। ঝর্নার পানির আওয়াজে মিলে মনে শান্তি।
সংগ্রামপুঞ্জির ভ্রমণ শেষ করে নৌকা না নিয়ে সংগ্রামপুঞ্জির সোনা টিলা হয়ে পায়ে হেঁটে পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ পানিতে হরেকরঙা পাথর ও ঝুলন্ত ডাউকি ব্রিজ দেখতে যেতে হবে জিরোপয়েন্ট। বলে রাখা ভালো, শুকনো মৌসুমে ঝরনায় পানি থাকে না। ডাউকি নদীর পাশেই রয়েছে খাসিয়াপল্লি ওপানপুঞ্জি। সময় থাকলে যাওয়া যেতে পারে সেখানেও। এর আগে জাফলংয়ে সেরে নিতে পারেন দুপুরের খাবার। খাবারের জন্য জাফলংয়ে বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁ রয়েছে। জনপ্রতি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে সেরে নিতে পারেন দুপুরের খাবার।

রাতারগুল ও বিছনাকান্দি
আপনি যদি একদিনে রাতারগুল এবং বিছনাকান্দি ভ্রমণ করতে চান, তাহলে আপনাকে মিনিমাম সকাল ৮ টার আগে শহর থেকে বের হতে হবে। যেমন সকাল ৮ টয়ে শাহজালাল। র. মাজার থেকে ২ মিনিট হেটে আম্বরখানা থেকে সিএনজি রিজার্ভ করে রওনা হবেন রাতারগুল এর উদ্দেশ্যে। ৯.৩০ টার দিকে রাতারগুল পৌঁছবেন ইনশাআল্লাহ। রাতারগুলে আপনি অবস্থান করবেন ১২ টা পর্যন্ত। এসময়ের মধ্যে আপনি নৌকা ভ্রমণ, বনের মধ্যে হাটাহাটি, জোঁক নিয়ে টানাটানি ইত্যাদি শেষ করতে পারবেন ১২ টার মধ্যে। ১২ টার সময় রাতারগুল থেকে বিছনাকান্দির অভিমুখে রওয়ানা। বিছনাকান্দি পৌঁছাবেন দুপুর ১.৩০ থেকে সর্বোচ্চ ২ টা এর মধ্যে। বিছনাকান্দি অবস্থান করবেন বিকেল ৫ টা পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে ছবি তোলা, গোসল করা, কমদামে ইন্ডিয়ান পণ্য কেনা সবই করতে পারবেন।
বিকেল ৫ টার সময় সিলেট শহর ব্যাক করবেন। সিলেট শহরে পৌঁছাতে পারবেন সন্ধ্যা ৭টার এর দিকে।

সিলেট শহর থেকে সিএনজি অটোরিকশা, মাইক্রোবাস বা ব্যক্তিগত বাহনে প্রথমে যেতে পারেন গোয়াইনঘাট উপজেলার বিখ্যাত জলাবন রাতারগুলে। শহর থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরত্ব। পৌঁছা যাবে এক ঘণ্টারও কম সময়ে। বর্ষা মৌসুমে রাতারগুল গ্রামের ঘাট থেকেই নৌকায় উঠতে পারবেন। শুকনো মৌসুমে খানিকটা হেঁটে বনের ভেতরে যেতে হবে। সেখানে ৭৫০ টাকায় নৌকা ভাড়া করে ঘুরতে পারবেন বনের ভেতরটায়। বর্ষায় সবচেয়ে সুন্দর হিজল-করচের রাতারগুল। তবে শুকনো মৌসুমেও বনটি আপনার চোখে ধরা দেবে ভিন্ন রূপে।

ডিবির হাওর
সিলেটের জৈন্তাপুরে জৈন্তরাজ্যের রাজা রাম সিংহের স্মৃতিবিজড়িত ডিবির হাওর, ইয়াম, হরফকাটা কেন্দ্রী বিলসহ রয়েছে চারটি বিল। বিলগুলোকে কেন্দ্র করেই নাম করা হয়েছে ডিবির হাওর। চারটি বিলের অবস্থান আবার যেখানে-সেখানে নয়া বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে। রাম সিংহের বিলগুলো শাপলার সিজনে শাপলার রাজ্যে রূপ নেয়। সিলেট শহর থেকে ৪২ কিলোমিটারের যাত্রাপথ। শাপলার পূর্ণ রূপ দেখতে ভ্রমণপিপাসুদের পৌঁছাতে হবে ভোরে। সূর্যের আলো ফোটার আগেই ফুটন্ত শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে। বিলের পাশে মেঘালয়, পাহাড়ের নিচে খাসিয়া সম্প্রদায়ের বসবাস। হরফকাটা ও ডিবি বিলের মধ্যে রয়েছে রাজা রাম সিংহের সমাধিস্থল। দূর পাহাড়ে দেখা মিলবে খাসিয়াদের পান- সুপারির বাগান। প্রকৃতির বুকে শিল্পীর তুলিতে আঁকা এ যেন এক নকশিকাঁথা।

যাওয়ার উপায়
সিলেট থেকে সরাসরি সিলেট-তামাবিল সড়কপথে বাস, লেগুনা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা অথবা প্রাইভেট কারে আসতে হবে জৈন্তাপুরে। জৈন্তাপুর বাজার থেকে কিছ দূর গেলেই সড়কের ডান দিকে দেখা যাবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ডিবির হাওর বিশেষ ক্যাম্প। ক্যাম্পের পাশ দিয়ে কাঁচা সড়কে এক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই পৌঁছে যাবেন শাপলা বিলে। নৌকার ভাড়া নেবে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। সারা দিনের জন্য সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া নেবে রেস্টুরেন্ট না থাকায় সঙ্গে শুকনো খাবার রাখতে ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ