Skip to content

২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শনিবার | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুড়াপাড়া জমিদার বাড়িতে একদিন

 আজকের ভ্রমণের উদ্দেশ্য কোনো এক জমিদার বাড়ি। নেই কোনো এক জমিদার বাড়ি  হলে, নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি। আজকে দুপুরটা শুরুই হবে সেখানে সারাদিন ঘুরে ফিরে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যাটা শেষ হবে সেই জমিদার বাড়িতে। 
মুড়াপাড়া ভ্রমণের পাশাপাশি এর ইতিহাস সূচনা বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে অনেক ছোট ছোট বিষয় জানবো আজকে। তাহলে শুরু করা যাক। 

এখনো টিকে থাকা জমিদার বাড়িগুলোর মধ্যে মুড়াপাড়া জমিদার বাড়িটি অন্যতম ঢাকার আশেপাশে। অনেক জমিদার বাড়ির মতো এটিও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যাচ্ছে। তবে আমাদের দেশের বেশিরভাগ জমিদার বাড়ির চেয়ে তুলনামূলক ভালো অবস্থায় রয়েছে এই জমিদার বাড়িটি। মূল ভবনের পেছন দিকে চলে গেলে দেখা যাবে  ক্ষয়ের চিহ্ন। 

১৮৮৯ সালে জমিদার প্রতাপ চন্দ্র ব্যানার্জী ৪০ হেক্টর জমির ওপর নির্মাণ শুরু করেন এই জমিদার বাড়িটি। ১৮৯৯ সালে তার ছেলে বিজয় চন্দ্র এর প্রাথমিক পর্যায়ের নির্মাণ কাজ শেষ করেন। বিশাল এই জমিদার বাড়িতে প্রায় একশত’র ওপরে কক্ষ রয়েছে, যার প্রায় সবকিছু পাবেন কারুকার্যের ছোঁয়া। এই জমিদার বাড়িতে রয়েছে কাছারিঘর, অতিথিশালা, নাচঘর, পুজামণ্ডপ, বৈঠকখানা, ভাঁড়ারসহ বিভিন্নভাবে ভাগ করা অংশ। 

ইতিহাস দেখলে  জানা যায়, জমিদার বাবু রাম রতন ব্যানার্জী তৎকালীন মুড়াপাড়া জমিদার বংশের প্রতিষ্ঠাতা এবং জমিদারদের ঊর্ধ্বতন ষষ্ঠ পুরুষ। তিনি ছিলেন নাটোরের রাজার এক বিশ্বস্ত কর্মচারী। তার সততার পুরস্কার হিসেবে তিনি মুড়াপাড়া এলাকায় বেশকিছু  সম্পত্তি লাভ করেন। বাবু রাম রতন ব্যানার্জী মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তন করেন। রাম রতন ব্যানার্জীর পুত্র পিতাম্বর ব্যানার্জী এবং তৎপুত্র প্রতাপ চন্দ্র ব্যানার্জী শাহজাদপুরের জমিদারি ক্রয় করে জমিদারি বর্ধন করেন।

কথিত আছে, জমিদারি ক্রয় সূত্রে প্রতাপ ব্যানার্জীর সঙ্গে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঠাকুরদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের প্রগাঢ় বন্ধুত্ব ছিল। ১৮৮৯ সালে প্রতাপ চন্দ্র ব্যানার্জীর পৈতৃক এজমালি পুরনো বাড়ি ত্যাগ করে আলোচ্য এ প্রাসাদের পেছনের অংশ নির্মাণ করে বসবাস শুরু করেন। প্রতাপ চন্দ্র ব্যানার্জীর পুত্র বিজয় চন্দ্র ব্যানার্জী ১৮৯৯ সালে প্রাসাদের সম্মুখ অংশের একতলা ভবন নির্মাণ ও সেখানে ২টি পুকুর খনন করার পর হৃদরোগে মারা যান। তিনি ছিলেন এ অঞ্চলের প্রথম গ্র্যাজুয়েট। বিজয় চন্দ্র ব্যানার্জীর দুই সুযোগ্য পুত্র জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জী ও আশুতোষ চন্দ্র ব্যানার্জী ১৯০৯ সালে প্রাসাদটির দোতলার কাজ সম্পন্ন করেন। 

এই অঞ্চলে জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জীর নাম সমধিক প্রসিদ্ধ। ১৯৪৭ সালে তৎকালীন জমিদার জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জী সপরিবারে কলকাতায় চলে যান। ফলে জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জীর প্রতাপশালী সেই রাজবাড়িটি বিরান হয়ে যায়। 

এরপর ১৯৪৮ সালে এই ঐতিহ্যবাহী বাড়িটি সরকারের দখলে চলে আসে। ১৯৬৬ সালে এখানে হাইস্কুল ও কলেজ স্থাপিত হয়। বর্তমানে এই জমিদার বাড়িটি মুড়াপাড়া ডিগ্রি কলেজ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। 
বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে জেলা উপজেলা নানা জায়গায় শত শত জমিদার বাড়ি রয়েছে। তবে সে জমিদার বাড়িগুলো অযত্নে পড়ে থাকার কারণে হয়ে যাচ্ছে নষ্ট। আমাদের প্রাচীন সভ্যতার সাক্ষীগুলো। হয়তোবা প্রজন্মের পর প্রজন্মে এই জমিদার বাড়িগুলো একদম ধসে পড়বে। সাক্ষী হিসেবে থাকবে না তাদের জন্য আর কিছুই। তবে এই জমিদার বাড়িগুলো যত্ন নিয়ে সংরক্ষণ করা উচিত।

যাওয়ার উপায় 

রাজধানী ঢাকার সায়েদাবাদ, গুলিস্তান অথবা যাত্রাবাড়ী থেকে মেঘলা, গ্লোরি, আসিয়ান পরিবহন অথবা নরসিংদী ভৈরবগামী যে-কোনো বাসে চেপে রূপসী বাসস্ট্যান্ড অথবা ভুলতা। তারপরে রিকশাযোগে জমিদার বাড়ি। রূপসী বাসস্টেশন থেকে সিএনজি করে (২০ টাকা জন প্রতি ভাড়া ) মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি।
খাওয়া দাওয়া করার জন্য সেখানে আশেপাশে অনেক হোটেল রয়েছে বাজেট অনুযায়ী পছন্দ অনুযায়ী সেখানে খাওয়া দাওয়া করা যেতে পারে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ