Skip to content

৮ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বুধবার | ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মায়ের পা ধুইয়ে শ্রদ্ধা: নারীর মর্যাদা-স্বীকৃতি চিরস্থায়ী হোক

কিছু কার্যক্রম মনে আশা জাগাই। অন্তরে প্রশান্তি আনে। বর্তমান অস্থিতিশীল সময়টাকে বাঁধতে হলে নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা জরুরি। নারীরা সমাজের অটুট বন্ধনে সহায়ক ভূমিকা রাখে। ফলে নারীকে শ্রদ্ধা জানানোর অর্থই হলো সামাজিক সম্পর্কের প্রতি সম্মান প্রদান। সর্বোপরি মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও মমত্ববোধের বহিঃপ্রকাশ।

সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আল-হেরা ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষার্থীরা মায়েদের প্রতি সম্মান জাননোর জন্য তাদের পা ধুইয়ে দেন। এটি নিঃসন্দেহে স্কুল কর্তৃপক্ষের প্রশংসনীয় উদ্যোগ। সমাজে নারীর প্রতি সম্মান বৃদ্ধি করতে এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সুশীল সমাজ। দেশে বৃদ্ধাশ্রমের প্রয়োজন নেই’ ও ‘মায়ের মতো আপন কেউ নেই’ প্রভৃতি স্লোগানে শিক্ষার্থীরা তাদের মায়ের পা নিজ হাতে ধুয়ে দিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে। পরে প্রত্যেক শিক্ষক ও মায়েদের হাতে স্কুলের পক্ষ থেকে শীতকালীন উপহার তুলে দেওয়া হয়।

মায়েদের প্রতি এমন শ্রদ্ধা নিবেদনের কার্যক্রম আরও সুপ্রসারিত হোক। শুধু মা’কেই নয় বরং নারী জাতিকে যেন শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, সহমর্মিতায় গ্রহণ করতে পারে সে বিষয়ে শৈশব থেকেই সন্তানদের মধ্যে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গঠন করতে হবে। নারীর প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধা, সম্মান যেন সমাজ থেকে দিনে দিনে উঠে যাচ্ছে। পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার বদৌলতে সন্তান মাকে সম্মান করছে না। স্ত্রীকে কটুকথা বলতে দ্বিধা করছে না। মেয়েকে অবহেলা করে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। আর এমন চর্চা সমাজিক বন্ধনগুলো শিথিল করে দিচ্ছে ক্রমাগতই। দিনে দিনে আত্মকেন্দ্রিক করে তুলছে মানুষকে।

নারীর প্রতি সহমর্মী মনোভাব সৃষ্টিতে স্কুলে-কলেজে, পরিবারে নারীকে তার যোগ্য মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে হবে। আর মূল্যায়ন যদি নিশ্চিত করা যায় দেখা যাবে অনেক সমস্যা অচিরেই সমাধান হয়ে যাবে।

আমাদের সমাজে নারীর অবস্থান নিশ্চিত করতে পরিবার, সমাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে একযোগে কাজ করতে হবে। নারীরা একজন স্বয়ংসম্পূর্ণ মানুষ। তার নিজস্ব ভালো লাগা-মন্দ লাগা আছে। ফলে একজন মানুষের স্বাধীনতা, জীবনযাপনের ওপর অন্যরা কালো ছায়া যেন না ফেলতে পারে, সে বিষয়ে আমাদের মানসিকতা বদলাতে হবে। নারীর প্রতি ইতিবাচক মানসিকতা গঠন করতে হবে।

পরিবার শিশুর প্রথম শিক্ষালয়। ফলে সন্তানকে যেভাবে শিক্ষা দেওয়া হয় সে ধীরে ধীরে মস্তিষ্কে তাই ধারণ-লালন করে। বাবা- মা যদি পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হন তবে সন্তানও তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে থাকে। কিন্তু যদি সবসময় পুরুষের ছড়ি ঘুরিয়ে বাড়ির নারী সদস্যদের ওপর অবহেলা, অত্যাচার করা হয় তবে নিশ্চিতভাবেই সন্তানও তা রপ্ত করবে। ফলে একটি পরিবারের পবিত্রতা রক্ষা করাও আমাদের সুন্দর সমাজ গড়ে তোলার অন্যতম শর্ত। এই শিক্ষার্থীরা মায়েদের প্রতি সম্মান জানাতে পা ধুইয়ে দিয়েছেন। সেটি স্কুলের উদ্যোগেই সংঘটিত হয়েছে। তবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সত্যিকার মানুষ করে তুলতে মন থেকে নিবেদিত হওয়ার শিক্ষা দিতে হবে।

একজন মানুষ প্রকৃত শিক্ষা লাভ করে পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সাহচর্যে থাকা মানুষদের কাছ থেকে। ফলে আজকাল সমাজে এত অনৈতিক, অমানবিক, হিংস্র ঘটনাগুলোকে প্রতিহত করতে শিক্ষার্থীদের মাঝে এ ধরনের নৈতিক শিক্ষা সত্যি তাদের মানস গঠনে সহায়ক হবে। তবে শিক্ষার্থীদের আরও ব্যাপক পরিসরে নৈতিকতা চর্চার শিক্ষা দিতে হবে। প্রত্যেক নারীর প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হওয়া উচিত, সে বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। নারীরা যে পুরুষের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, সে সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে। এছাড়া নারীর প্রতি সহমর্মী মনোভাব সৃষ্টিতে স্কুলে-কলেজে, পরিবারে নারীকে তার যোগ্য মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে হবে। আর মূল্যায়ন যদি নিশ্চিত করা যায় দেখা যাবে অনেক সমস্যা অচিরেই সমাধান হয়ে যাবে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ