Skip to content

১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শুক্রবার | ২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডিভোর্স কি সবসময় খারাপ ফল বয়ে আনে?

একজন নারী সংসার করতেই বিয়ে করে। অথচ সেখানে তার উপযুক্ত পরিবেশ দিতে অধিকাংশ স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন ব্যর্থ হয়। সে কারণেই বিচ্ছেদ ঘটছে।

নারী তার বাবার বাড়ির আদর মাখা পরিবেশ ছেড়ে সামাজিক বিধি-বিধানের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। কখনো ভালোবেসে প্রেমিকের হাত ধরে ঘর ছাড়ে। কখনো বাড়ির মানুষদের অভিমতের ভিত্তিতে। কিন্তু বিয়ের পর পরই নারীদের শ্বশুরবাড়ির নানা প্রতিকূল অবস্থার সঙ্গে যুদ্ধ করে চলতে হয়। কখনো শারীরিক নির্যাতনও সহ্য করতে হয়। আর মানসিক নির্যাতন তো নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা।

স্বামীর অবহেলা, ঠিকমতো ভরণপোষণের দায়িত্ব না দেওয়া, চাকরিজীবী নারীদের পরিবার থেকে সহযোগিতা না করা, সন্দেহ, মানসিকভাবে মিল না হওয়া, শারীরিক সম্পর্কে অতৃপ্তি, স্বামী তার নিজের পরিবারের মানুষগুলোর গুরুত্ব বেশি দিতে গিয়ে স্ত্রীকে ডোমিনেট করা, সন্তান লালন-পালনের জন্য দোষত্রুটি ধরা, সন্তানের পড়াশোনার ব্যাপারে দোষারোপ করা, সন্তান না হওয়া, স্বামী বা স্ত্রীর রোজগারের টাকা হাতিয়ে নেওয়া, চাকরি করতে না দেওয়া, আত্মীয় স্বজনদের গুরুত্ব না দেওয়া, মাদকাসক্তি, পুরুষত্বহীনতা ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে মনোমালিন্যের ঘটনা ঘটতে থাকে। নারীরা এত কিছুর মধ্যে দিয়ে চলতে চলতে এক সময় হাঁপিয়ে ওঠে। তখন সংসারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। মনে হয় এই গণ্ডি থেকে বের হতে পারলেই শান্তি!

কিছু পুরুষ মনে করে, চাকরিজীবী স্ত্রী ঘরে থাকলে তার কোনো দায়দায়িত্ব নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না ৷ নারীটির কিছু চাহিদা সে নিজেই বহন করে; উপরন্তু সংসারে সন্তানদের মুখের দিকে চেয়ে তাদের পড়াশোনা আর অন্য চাহিদাগুলো পূরণ করে যায় ৷ একজন চাকরিজীবি স্ত্রীরও শখ হয়, স্বামী তার প্রতি খেয়াল রাখুক ৷ তার সামান্য প্রয়োজনগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে সমাধান করুক ৷ বিয়ের পর এই ধরনের পুরুষগুলো মনে করে স্ত্রী তার সম্পত্তি ৷ তার কাছ থেকে যতটা টাকা আদায় করে সংসারে ঢালতে পারে, ততটাই লাভ ৷ ভালোবাসা বলেও তো কিছু থাকতে হয় স্বামী স্ত্রীর মাঝে, সেটাই তারা অস্বীকার করে,না হয় ভুলে যায়৷

পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা পরিবর্তন করে সহযোগিতা ও সমঝোতার ভিত্তিতে সংসারের উন্নয়নের পথে হাঁটলে থেমে যেতে পারে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ডিভোর্স।

ডিভোর্স নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অনেকেই বলেন। কেউ কেউ ডিভোর্সের জন্য নারীবাদকে দোষ দেন। তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, নারীবাদী ছাড়া কি অন্য কারও ডিভোর্স হচ্ছে না? কেউ কেউ বলছেন, দেশে কিছু কিছু পত্রিকা পুরুষদের বিরুদ্ধে লেখে। এসব পড়েই নারীরা ডিভোর্স দিচ্ছে। এখন প্রশ্ন উঠছে, ডিভোর্সের আসল কারণ কি এইগুলো?

অথচ কে না জানে, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতা, নারীকে দমন করার মানসিকতার কারণে ডিভোর্স হচ্ছে। নারীরা সেই দাদি-নানির আমলের মতো এখন এতটা অসহায় নয় যে, তারা নির্যাতন সহ্য করে সংসার করে যাবে। নারীরা এখন স্বাবলম্বী হচ্ছে, তাদের নিজের আয়ে চলতে পারছে। তাই তারা তাদের জীবনের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোকে মেনে নিতে পারছে না। তাই তারা আলাদা হওয়ার মানসিক শক্তি পাচ্ছে। কিন্তু শুধু স্বাবলম্বীতাকেই ডিভোর্সের মূল কারণ ভাবা যাবে না।

আমরা আতঙ্কিত হচ্ছি এই সংখ্যাটা দেখে। দিনে দিনে ডিভোর্সের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। মানুষের মধ্যে সমঝোতার অভাব, সহনশীলতার অভাব ডিভোর্সকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। শুধু কি স্বাবলম্বী নারীরাই ডিভোর্স দিচ্ছে না যারা স্বাবলম্বী নয় তারাও। যার প্রভাব পড়ছে সন্তানদের ওপর। সামাজিক বন্ধনগুলো ধীরে ধীরে হালকা হয়ে যাচ্ছে। মানুষের মধ্যে আরেকটা অপশনের পথ খুলে যাচ্ছে খুব সহজেই। এখানে ফেসবুকের প্রভাবটাই সবচেয়ে বেশি।

নারী-পুরুষ পরিবারের অশান্তি থেকে রক্ষার জন্য অন্য কারও সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে, তারপর বিচ্ছেদ ঘটছে। আর যদি এক ছাদের নিচে থাকাটা অসম্ভব হয়ে যায়, তাহলে জোর করে কেন সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হবে? অসুস্থ সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসাটাই সঠিক সিদ্ধান্ত। সবকিছুতে নারীবাদের তকমা লাগিয়ে নারীবাদীদের অবমাননা করা উচিত নয়। নারীবাদ মানে নারী পুরুষের সম অধিকারের লড়াই, সংসার ত্যাগ নয়। পারিবারিক বন্ধনগুলোকে দৃঢ় করতে না পারলে এভাবে ডিভোর্সের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। আর ডিভোর্স এড়িয়ে চলতে চাইলে, পরিবারকে সময় দিতে হবে। না হলে নিজের সঙ্গে-সঙ্গে সন্তানের জীবনও অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হবে।

পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা পরিবর্তন করে সহযোগিতা ও সমঝোতার ভিত্তিতে সংসারের উন্নয়নের পথে হাঁটলে থেমে যেতে পারে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ডিভোর্স।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ