Skip to content

২রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বৃহস্পতিবার | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যেখানে যেমন পোশাক

পোশাক পরিধানে সচেতন নয় এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যায় না। সবাই চায় তার পোশাক যেন প্রতিটি অনুষ্ঠানের জন্য মানানসই ও পছন্দসই হয়। বর্তমানে নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মেয়েদের ভূমিকা, অংশগ্রহণ ও গুরুত্ব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে ফ্যাশন সচেতনতাও। এখন কোনো অনুষ্ঠানের দাওয়াত এলে প্রথমে অনুষ্ঠানের ধরন, সময় ও তাৎপর্য বিবেচনা করে পোশাকের ধরন, উপাদান, রং, সাজ ও অনুষঙ্গ বাছাই করা হয়।

পোশাক পরার সময় যে বিষয় বেশি গুরুত্ব পায়, তা হলো অনুষ্ঠানটি ফরমাল, না ক্যাজুয়াল। এরপর নিজের পছন্দ, চলতি ধারা বুঝে পোশাক নির্বাচন। পৃথিবীর সব জায়গায় এখন স্থান,কাল,পাত্র বুঝে পোশাক পরা হয়। আর পোশাক তো ব্যক্তিত্ব প্রকাশেরও মাধ্যম। তাই যা পরছি, তা ফ্যাশনেবল কি না দেখার পাশাপাশি ওই অনুষ্ঠান বা জায়গার জন্য উপযোগী কি না, সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখা উচিত। লক্ষ্য না রাখলে দেখা যাবে যে জায়গায় যাওয়া হয় সে জায়গার সঙ্গে পোশাকের কোন মিল পাওয়া যায় না। সেটি দেখতে কি ভালো লাগবে?

দেশ–বিদেশের বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও অন্যান্য নিদর্শন দেখার আগ্রহ ও প্রবণতা দিন দিন অনেক বেড়েছে। তাই বেড়াতে যাওয়ার আগে আপনাকে ওই জায়গার ধরন অনুযায়ী পোশাক নিয়ে যেতে হবে। সমুদ্রতীরে বেড়াতে বা পানিতে নামার সময় মেয়েদের শাড়ি বা ঢিলেঢালা পোশাক না পরাই বাঞ্ছনীয়। এ ক্ষেত্রে টি-শার্ট, টিউনিক, টপের সঙ্গে থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট, লেগিংস পরা সুবিধাজনক হবে। পাহাড়ি এলাকায় যেতে মেয়েদের ট্র্যাকিং স্যুট, টি–শার্ট, ট্রাউজার ইত্যাদি পরা ভালো। সাথে কেডস নিতে ভুলবেন না। হিলওয়ালা জুতা পরিহার করতে হবে। শীতল এলাকায় বেড়াতে যেতে প্রয়োজনীয় উলের বা পশমি পোশাক নিয়ে যেতে হবে।

বিয়ে হলো এমন একটি অনুষ্ঠান, যেখানে বাঙালি মেয়েরা সবচেয়ে বেশি আনন্দ করে থাকে। বিয়ের অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেলেই প্রথমে চলে আসে, কী পরব? একটা সময় ছিল, বিয়ে মানেই শাড়ি পরতে হবে। তবে এখন পরিবর্তন এসেছে অনেকটাই। বিয়েতে এখন অনেকে কামিজ, লেহেঙ্গা, সারারা ইত্যাদি পরে থাকে। তবে যা–ই পরুন না কেন, সবকিছুতেই চাই গর্জিয়াস লুক। এ ক্ষেত্রে কারচুপির কাজ করা শাড়ি বা পোশাকের কদর বেশি থাকে। শাড়ি পরলে ব্লাউজের কাপড় ও কাটে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। ইদানীং অধিকাংশ বিয়ে রাতে হয়, তাই মেয়েদের গাঢ় রঙের পোশাক পরতে বেশি দেখা যায়। বিয়ে হলে গায়ে হলুদ হবে না, তা তো হতে পারে না। গায়ে হলুদে হলুদ রঙের শাড়িকে প্রাধান্য দেওয়া হলেও এখন অন্য রঙের চলও রয়েছে। গায়ে হলুদে মেয়েরা ফুলের গয়না পরতে বেশি পছন্দ করে।

ঈদ, পূজা ও বড়দিন বড় ধর্মীয় উৎসব। এই আনন্দের দিনগুলোতে সবাই নতুন পোশাক পরে থাকেন। ঈদে পোশাক পরার ক্ষেত্রে সবাই ব্যক্তিগত পছন্দকেই গুরুত্ব দেন। ঈদে কামিজ, শাড়ি, লেহেঙ্গা, সারারা ইত্যাদি পরতে দেখা যায়। অনেকে বর্ণিল ও গর্জিয়াস পোশাক পরে থাকেন। ঈদ এখন গরমের সময় হওয়ায় অনেকে আরামদায়ক সুতির পোশাককে প্রাধান্য দিচ্ছে। পূজায় লাল–সাদা শাড়িতে ঐতিহ্যবাহী নকশার প্রিন্ট বেশি গুরুত্ব পায়। তবে বর্তমানে কামিজ, টিউনিক, লেহেঙ্গা ইত্যাদি অনেকেই পরে থাকেন। বড়দিনে পশ্চিমা সংস্কৃতির ছাপ থাকায় পোশাকেও এর প্রভাব থাকে। পছন্দমতো রঙের শাড়ি, কামিজ বা টিউনিক, টপ, ব্লেজার, স্কার্ট ইত্যাদির সঙ্গে মেয়েরা প্যান্ট পরে থাকে। জন্মদিন বা বিবাহবার্ষিকীর মতো অনুষ্ঠানে এখন প্রায়ই যেতে হয়। জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মেয়েরা তাঁদের নিজস্ব পছন্দকে গুরুত্ব দিতে পারেন। তবে বিবাহবার্ষিকীতে গর্জিয়াস শাড়ি পরা যায়। সেদিকে ঝোঁকটা এখন বেশিই দেখা যাচ্ছে।

কর্মজীবী মেয়েদের অফিসের কাজে কিংবা মিটিং, সম্মেলন, সেমিনার ইত্যাদি জায়গায় আনুষ্ঠানিক বা ফরমাল পোশাক পরতে হয়। এ ধরনের আয়োজনে শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজ যা–ই পরুন না কেন, সেটা এক রঙের হলে ভালো হয়। অর্থাৎ এসব অনুষ্ঠানে প্রিন্টের কাপড় না পরাই ভালো। পোশাকের রঙের ক্ষেত্রেও সচেতন হতে হবে। উজ্জ্বল বা শকিং কোনো রঙের পোশাক না পরাই উত্তম। শাড়ি পরলে ব্লাউজের কাটের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। বিশেষ ক্ষেত্রে শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজের ওপর ব্লেজার পরতে পারেন, যা স্মার্টনেস বাড়িয়ে দেয়।

চাকরির সাক্ষাৎকার দিতে যাওয়ার সময়ও আনুষ্ঠানিক পোশাক পরা প্রয়োজন। পেশাদার কাজে কারও সঙ্গে দেখা করতে গেলেও এ ধরনের পোশাক পরা ভালো। বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক দিবসে মেয়েদের বিশেষ পোশাক পরতে দেখা যায়। বিশ্ব নারী দিবস মেয়েরা বেগুনি কিংবা গোলাপি রঙের শাড়ি, কামিজ পরে উদযাপন করে থাকেন। বিজয় দিবসে লাল-সবুজ, ভাষা দিবসে সাদা-কালো, আর ভালোবাসা দিবসে লাল রঙের পোশাক—এ তো মোটামুটি আবশ্যকই। বাংলা বর্ষবরণ বা পয়লা বৈশাখ বাঙালি জাতির ঐতিহ্যবাহী উৎসব। আগে সাদা রঙের কাপড়ের ওপর লাল রঙের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী নকশা করা শাড়ি পরার প্রচলন ছিল। এখন অবশ্য মেয়েরা নিজেদের পছন্দমতো রঙের কামিজ বা শাড়ি ও ফুলের গয়না পরতে ভালোবাসে। এ ছাড়া পয়লা ফাল্গুনে বাসন্তী রঙের শাড়িই প্রাধান্য পায়।

মেয়েদের ফ্যাশনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো পোশাক। আর সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পাল্টে যায় মেয়েদের পোশাকের ফ্যাশন এবং স্টাইল। তবে কর্মজীবী নারীদের যেহেতু সময়ের অভাব সবচেয়ে বেশি হয়, তাই তাদের পোশাক এমন হওয়া উচিত যা আরামদায়ক, কাজের পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। শুধু পোশাকের ম্যাটেরিয়ালের ক্ষেত্রে নয়, সম্পূর্ণই পোশাকটাই এমন হওয়া উচিত যেটা সহজেই সামলানো যায়। এ কারণেই কর্মজীবী নারীরা আজকাল শাড়ির চেয়ে সালোয়ার-কামিজ ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তাছাড়া হালকা রঙের সুতি, তাঁত বা কোটার শাড়ি কিংবা পাতলা কাজের সিল্ক বা জর্জেট শাড়ি ও কর্মক্ষেত্রে বেশ মানানসই।

নিজের মানানসই লুক ও নিজের পছন্দের দিকে একটু সচেতন থাকলেই আপনি সহজে অফিসের সাজের জন্য নিজেকে পারফেক্ট হিসেবে উপস্থাপন করতে পারবেন। অফিসের কাজের পাশাপাশি যেকোনো পরিস্থিতিতেই নিজের পছন্দসই পোশাকে নিজেকে সাজিয়ে তুলতে পারবেন। তাই যত ব্যস্তই থাকুন না কেন প্রতিদিন নিজের জন্য কিছুটা সময় বের করে নিজের যত্ন নিন।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ