গিরিজা দেবীর প্রয়াণ দিবস আজ
গিরিজা দেবী ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতে বেনারস ঘরানার উজ্জ্বল তারকা ছিলেন। তিনি শাস্ত্রীয় সংগীত ও রাগাশ্রয়ী গান পরিবেশনা করতেন এবং ঠুংরি শৈলীটিকে জনপ্রিয় করে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আজ তার প্রয়াণ দিবস।
১৯২৯ সালের ৮ মে বারাণসীতে গিরিজা দেবী জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা রামদেও রাই ছিলেন একজন জমিদার। রামদেও রাই হারমোনিয়াম বাজাতেন ও সংগীত শিক্ষা দিতেন। পাঁচ বছর বয়সে গিরিজা দেবী কণ্ঠশিল্পী ও সারেঙ্গি বাদক সরযূপ্রসাদ মিশ্রের কাছে খেয়াল ও টপ্পা সংগীতে তালিম নিতে শুরু করেন। নয় বছর বয়সে তিনি ইয়াদ রহে ছবিতে অভিনয় করেন এবং পরে শ্রীচন্দ মিশ্রের কাছে বিভিন্ন সংগীত শৈলীতে তালিম নিতে থাকেন।
১৯৪৬ সালে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে গিরিজা দেবীর বিবাহ সম্পন্ন হয়। এরপর ১৯৪৯ সালে এলাহাবাদ অল ইন্ডিয়া রেডিও থেকে তিনি প্রথম বেতার সংগীতনুষ্ঠানে অংশ নেন। গিরিজা দেবীর মা ও ঠাকুরমা মনে করতেন, উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়েরা সর্বসমক্ষে সঙ্গীত পরিবেশন করেন না। তাই তারা অনুষ্ঠানে তার সংগীত পরিবেশনার বিরোধিতা করেন। গিরিজা দেবীও অন্যদের সামনে পৃথকভাবে সংগীত পরিবেশন না করার ব্যাপারে রাজি হন। কিন্তু ১৯৫১ সালে তিনি প্রথম সংগীতনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন।
১৯৬০-এর দশকে শ্রীচন্দ মিশ্রের মৃত্যুর আগে অবধি তিনি তার কাছে তালিম নিয়েছিলেন। ১৯৮০-এর দশকে কলকাতার আইটিসি সংগীত রিসার্চ অ্যাকাডেমিতে অনুষদ সদস্য হিসেবে এবং ১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনাও করেন তিনি। এছাড়াও একাধিক ছাত্রছাত্রীকে নিজের সাংগীতিক ঐতিহ্য রক্ষার জন্য তালিমও দিয়ে যান। ২০০৯ সাল পর্যন্ত দেশবিদেশের বিভিন্ন স্থানে সংগীত পরিবেশনা করেন গিরিজা দেবী।
সংগীতে অসাধারণ অবদানের জন্য তিনি ভারত সরকার কর্তৃক পদ্মশ্রী (১৯৭২), পদ্মভূষণ (১৯৮৯) ও পদ্মবিভূষণ (২০১৬) সম্মাননা এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক ২০১২ সালে সংগীত মহাসম্মান ও ২০১৫ সালে বঙ্গবিভূষণ সম্মাননায় ভূষিত হন। ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর কলকাতার বিএম বিড়লা হার্ট রিসার্চ সেন্টারে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।