কেউ বেশি দিন থাকে না!
মানুষের অতি ক্ষুদ্র এক জীবন। আর ক্ষুদ্র এই জীবনটাতেই থাকে হাজারো স্মৃতি। থাকে অনেক গল্প-কথা, অনেক রহস্য, অনেক হাস্যরসিকতা। আর থাকে অনেক অনেক মানুষ। হ্যাঁ, এই মানুষ গুলোকে ঘিরেই তো তৈরি হয় এতো এতো মুহুর্ত। প্রতি দিন, প্রতি মুহূর্তে আমাদের জীবনে ঘটে কত শত ঘটনা। আমাদের জীবনে ঘটে যাওয়া সব কিছুই কি আমাদের স্মৃতিতে থেকে যায়? উত্তরটি হবে 'না'!
মানুষের মস্তিষ্ক বড়ই অদ্ভুত। কিছু মুহুর্ত খুব সহজেই আমরা সরিয়ে দিলেও, কিছু মুহুর্ত খুব যত্ন করে রেখে দেই বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ। সেটা অবশ্য নির্ভর করে আমাদের সম্পর্ক বা কৌতূহলের উপর। কিন্তু প্রকৃতিও যে মাঝেমধ্যে বড্ড বেশি অদ্ভুত আচরণ করে। এই যে এত শত স্মৃতি যাদের সাথে তৈরি হয় তাদের সাথে তৈরি হওয়া এই স্মৃতিগুলো থেকে গেলেও তারা বেশী দিন থাকে না। ঐ একটা প্রবাদ আছে না , “সময় এবং স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না”।
আসলে এতে দোষ মানুষেরই! কেনই সে শুধুমাত্র কিছু মুহুর্ত বা স্মৃতিকে ধরে রাখতে একটা মানুষকে সারা জীবনের জন্য কাছে রেখে দিতে চায়। তার অপর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটির কল্পনায় তো থাকতে পারে অন্য কেউ। এক্ষেত্রে মানুষ বড়ই স্বার্থপর। কিন্তু হ্যাঁ, এই ধরণের মানুষেরা স্বার্থটা অন্যের ক্ষতি করে হাসিল করতে চায় না। তারা যা চায় শুধু ঐ মানুষটা তাদের কাছে থেকে যাক।
যদি মানুষটি থেকে না যায়, জীবন তবে কি থমকে যাবে? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর ভাষায় বলতে হয়, "আমাদের গেছে যে দিন একেবারেই কি গেছে, কিছুই কি নেই বাকি!" যতটুকু সময় থামবো ততোক্ষণে না হয় একটু অন্য স্মৃতিই তৈরি করা যাক। কারণ, জগতে কোন কিছুই যে স্থায়ী নয়। আজ যে বর্তমান, কাল সে থাকবে কেবলই স্মৃতির পাতায়। আজ কেউ আমার স্মৃতিতে আবার পরক্ষণেই ঘুরপাক খাবে অন্য কারো স্মৃতিতে। আবার আমি নিজেও যে কত জনের স্মৃতির অংশ সে হিসেব বরাবরই আমাদের অজানা থাকে।
কাউকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে চাওয়ার কোনো যুক্তি দেখানো দায়৷ তবুও মানুষ আঁকরে ধরেই বেঁচে থাকতে চায়। আর তাদের কাছে যুক্তি কেবল একটি প্রবাদ, "Everything is fair in love and war" অর্থাৎ প্রেম এবং যুদ্ধে সবকিছুই ন্যায়সঙ্গত। তবে এসব বস্তা পচা যুক্তি দেখিয়ে, মাথায় এক গাদা স্মৃতি নিয়ে থেমে যাবেন? আমি তো থামবো না। আমার আরও স্মৃতি তৈরি করতে হবে। আমি জানি যা জানতে হয়, আমি মানি যা আমার পালন করা দরকার , আমি বুঝি যা আমার বোঝা প্রয়োজন । কিন্তু আপনি দুর্বল, কেন জানেন? কারণ আপনি জেনে বুঝেও মানতে নারাজ – “কেউ বেশি দিন থাকে না”।