যৌতুক রূপ নিচ্ছে উপহারে!
যৌতুক আমাদের সমাজের বহু পুরনো একটি কালো প্রথা। যুগের পর যুগ ধরে এই প্রথার বিরুদ্ধে নানামুখী লড়াই হলেও আজও ঘাটি গেঁড়ে বসে আছে এই প্রথা। আজকাল যৌতুকপ্রথা সুশীল সমাজে আবার ভিন্ন মুখোশে দেখা যাচ্ছে।
কাঁড়ি-কাঁড়ি সার্টিফিকেটধারী ব্যক্তি যৌতুক নেন না, তাদের ভাষায় তারা উপহার গ্রহণ করেন। আর মেয়ের বাড়ি থেকে সেই উপহার দিতে অসম্মতি জানালে মেয়েকে কখনো মানসিকভাবে আবার কখনো শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে মেয়ের পরিবারও কম যান না। আভিজাত্য প্রকাশ করতে মেয়েকে ব্যাগভর্তি গয়না, টাকা-পয়সা তুলে দিতে যেন মরিয়া তারা। তবে দিন শেষে এই ব্যাগের ভারে মেয়ের অবস্থা ঠিক কী দাঁড়ায়, সেটা নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপপরিষদের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে একটি কন্যাশিশুসহ যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৩৮ জন। এর মধ্যে ৪৫ জনকে যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয়েছে। এ-ছাড়া, বিভিন্ন পরিসংখ্যানের বাইরে যে আরো বিশাল অঙ্কের সংখ্যা রয়েছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
সমাজে এ নিয়ে কথা উঠলে, জামাইকে ১০ লাখ টাকা দিয়ে গাড়ি উপহার দেওয়া লোকটিও যৌতুকের বিরুদ্ধে কথা বলবেন। হয়তো এ-ও বলবেন, তিনি তো জামাইকে উপহার দিয়েছেন, যৌতুক নয়। এর মাস দুয়েক পর জামাই যখন একটি ফ্ল্যাট উপহারের নামে যৌতুক চাইবেন, তখন বাবা হয়ে যাবেন নিরুপায়।
অনেকের ধারণা, হয়তো-বা গ্রামাঞ্চলে, তুলনামূলক কম শিক্ষিত পরিবারগুলো এখনো যৌতুকের জালে আটকে আছে। আধুনিক ও শিক্ষিত সমাজ অনেকটাই বেরিয়ে এসেছে যৌতুকের কবল থেকে বিষয়টি কিছুটা সত্যি হলেও এ সংখ্যা খুবই নগণ্য। 'উপহার'-এর নামে এখনো আধুনিক ও শিক্ষিত সমাজে টিকে আছে যৌতুক নামক এই কালো প্রথা।