জিন্স পরা তরুণীর হেনস্তাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই
গত বুধবার (১৮ মে) বেলা ১১ টার দিকে নরসিংদী রেল স্টেশনে অবস্থানরত এক তরুণীর পোশাককে ঘিরে তাকে লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটেছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ওই তরুণীর সঙ্গে দুজন যুবকও ছিল। স্টেশনে অবস্থানকালে মেয়েটির পোশাক নিয়ে নোংরা মন্তব্য করেন একজন নারী। তার সঙ্গে যোগ দেয় আরও কিছু বখাটে। এ সময় ভুক্তভোগী তরুণী ও সঙ্গী দুই যুবকের সঙ্গে উত্ত্যক্তকারীদের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে উত্ত্যক্তকারী নারী ভুক্ত তরুণীর পোশাক ধরে টানাটানি করেন। শেষ পর্যন্ত ওই তরুণী উপায়ন্তর না দেখে স্টেশন মাস্টারের রুমে গিয়ে আত্মরক্ষা করে।
এই ঘটনার সংবাদ ও ভিডিও থেকে কয়েকটি বিষয় বিশেষভাবে মনকে নাড়া দিচ্ছে। প্রথমত, পোশাক কি ব্যক্তি নিজস্ব পছন্দ, রুচি অনুযায়ী পরতে পারবে না? দ্বিতীয়ত, উত্যক্তকারীদের মধ্যে একজন নারীও রয়েছেন। তিনি কেন এমন আচরণ করলেন? তৃতীয়ত, বাকিরা কেবল নীরব দর্শক?
মানুষ স্বাধীন জীব। চলাফেরা থেকে শুরু করে জীবনযাপনের সর্বক্ষেত্রে। তারপরও সমাজের এক শ্রেণির মানুষ নারীর স্বাধীন জীবনযাপনের পথে বাধা সৃষ্টি করে প্রতিনিয়ত। পোশাক নির্বাচন করা নারীর নিজস্ব রুচি-অভিরুচি-স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যাপার। তাহলে কেন নারীর পোশাক নিয়ে কটূক্তি করা হয়? নারীরা পোশাক পরলেই পুরুষ কেন বাজে মন্তব্য-আচরণ করে? নারী নিজস্ব রুচি অনুযায়ী পোশাক পরবে এটাই স্বাভাবিক।
পোশাক কোনো ব্যক্তির ক্ষতির কারণ নয়। আর যা অন্যের ক্ষতি করবে না তা এত কেন মাথাব্যথা!
নরসিংদীতে যে ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে ভুক্তভোগী নারী নিশ্চয়ই নিজের ইচ্ছে-রুচি অনুযায়ী পোশাক পরেছেন। একজন ব্যক্তি কী পোশাক পরাবেন, সেটা কি সমাজ নির্ধারণ করে দেবে! না কি ব্যক্তি তার নিজের রুচিকে প্রাধান্য দেবেন। একজন মানুষ কী খাবে, কী পরবে, কিভাবে চলবে, সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার। সেখানে পরিবার, সমাজ, ধর্মীয়গুরুরা হস্তক্ষেপ করতে পারে না।
সবচেয়ে বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে, নরসিংদীর রেল স্টেশনে তরুণীকে হেনস্তাকারী প্রথমব্যক্তিও একজন নারী। তবে নারী হয়ে কেন আর একজন নারীর প্রতি তিনি ন্যূনতম সম্মান শ্রদ্ধা রাখলেন না! নারী হয়ে কেন অন্য নারীকে লাঞ্ছিত করলেন? উত্ত্যক্তকারী নারী পুরুষতন্ত্রের প্রতিনিধি। এই ধরনের অসামাজিক ও জঘন্য কাজের জন্য উত্ত্যক্তকারী নারীকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত। যেন ভবিষ্যতে অন্যের রুচির ওপর নিজস্ব মত চাপিয়ে দেওয়ার মতো জঘন্য কাজ থেকে বিরত থাকে।
যে জাতি যুক্তি বুদ্ধি, মূল্যবোধের চর্চা করে না, তাদের থেকে এর বেশি আর কী আশা করা যায়! একজন নারী অন্য নারীকে হেনস্তা করছে, এই দৃশ্য একুশ শতকে এসেও দেখতে হচ্ছে! অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, দেশে মানবিকতা, মূল্যবোধ, বিবেক, বুদ্ধি, যুক্তি খুইয়ে মানুষ এখন দিন দিন বর্বর যুগের দিকে ফিরে যাচ্ছে। নারীরা এমনিতেই পুরুষতন্ত্রের কাছে জিম্মি। সেখানে কতিপয় নারীও তাদের দোসর হয়ে উঠেছে।
নরসিংদীর ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এই ঘটনা মূলত পুরুষতন্ত্র ও মোল্লাতন্ত্রের দীর্ঘদিনের রুগ্ণ মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। খবরে প্রকাশ, পুলিশ বলছে, এই ঘটনায় কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। তাই তারা আইনি ব্যবস্থা নেয়নি। যদিও পরবর্তী সময়ে উত্ত্যক্তকারীদের মধ্যে এক যুবককে আটক করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ফৌজদারি অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পরও সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বাদী হয়ে মামলা না করলে মানুষ কোনো বিচার পাবে না?
দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে একটাই দাবি, কেউ মামলা করুক, বা না করুক, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ভিডিও দেখে এই ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে তাদের আইনের মুখোমুখি দাঁড় করাতে হবে। আর এই কাজ পুলিশকে স্বতঃস্ফূর্তভাবেই করতে হবে। এই ঘটনায় দোষীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পেলে বখাটেরা ভয় পাবে। নারীর চলাচল নির্বিঘ্ন হবে।
অনন্যা/এসএএস