Skip to content

৭ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | সোমবার | ২২শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অতঃপর অপরাহ্ন

সময়টা মন্দ যাচ্ছিল না। অন্ধকারের মাঝে বদ্ধ পরিবেশে.. তখন আমার কাছে ছিল অমৃত! দিন রাত এক করে দিতাম কখনো রবি ঠাকুর বা কখনো মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এ। হুমায়ূন স্যার ত ছিল সবচে প্রিয়। বই ই ছিল আমার শৈশব কৈশোরের একমাত্র সঙ্গী! পরে ত বন্ধুবান্ধব…. প্রিয়ম হা করে মিহিরের কথা শুনছিল! 

একটা মেয়ে কি হাসি মুখে নিজের কষ্টের কথা গুলো বলে যাচ্ছে, শুনতে শুনতে ওর চোখের কোণে পানি চলে আসছে কিন্তু মিহির নির্বিকার! যেদিন প্রথম দেখা হয়েছিল বইমেলায় মেয়েটার সাথে, হাতভর্তি ঝালমুড়ি
নিয়ে দৌড়ে এসে হাতে দিয়ে বলেছিল লাভ ইউ ভাইয়া! এত অবাক হয়েছিলাম আমার হাত থেকে সব ঝালমুড়ি ছড়িয়ে পড়েছিল রাস্তায়। সে এক কাণ্ড! পরে বুঝেছিলাম বন্ধুদের সাথে শখের বাজির বলির পাঠা ছিলাম আমি!

আলাপ পরিচয় সামান্যই ছিল, যদিও গুগলের এই যুগে পরিচয়টা থেমে থাকেনা, দু একটা মেসেজেই আলাপ। মাঝে ত বড়লোকের বেশ নাক উঁচু মেয়ে বলেই মনে হত ওকে। সামান্য মেসেজেই একদিন বলে বসল, মজা করেছিলাম সেজন্য অ্যাডভানটেজ নেওয়ার চেষ্টা করে থাকলে বলতেই হচ্ছে সরি। সেদিনের পর আর কথা বলা হয়নি। 

আজ অনেক দিন পর দেখা হল। অদ্ভুত এই সাক্ষাৎ! আমি বড় বুবুকে নিয়ে এসেছিলাম অনেক রাতে ওর পেইন উঠল বলে। যখন সদ্য মামা হওয়ার তীব্র আনন্দ নিয়ে করিডোরে হাঁটছিলাম তখন ভোর হতে খুব দেরি
নেই, হঠাৎ নাকি এক পেশেন্টের রক্তের খুব দরকার হল। রুটিন চেকআপ করে দিলাম রক্ত, মিলেই যখন গেল। কি মনে হল ভাবলাম কার শরীরে দিয়ে দিলাম আমার এক বুক তাজা রক্ত তার মুখটা একবার দেখেই যাই। দেখতে এসেই চমকে উঠলাম। 

নাহ মেয়েটাকে কখনো বিশেষ নজরে দেখিনি শুধু প্রথম যেদিন দেখেছিলাম, বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে গেছিলাম! সেই বিস্ময় টা কাটেনি কখনো। এরপর প্রতিদিন ওর কেবিনে একবার আসতেই হত আমার, কেমন যেন ভালোলাগতো না, না এলে। মা নেই মেয়েটার, বাবাও বিয়ে করে নিউইয়র্কে সেটেলড। শৈশব টাকে একা পার করার ভয়াবহ একাকীত্বের গল্প সে আমায় বলত হাসি মুখে, আমিও বুকের ভেতর চিনচিনে ব্যথা নিয়ে শুনতাম সেসব কাহিনী। 

রোজ আসি আমি ইউনাইটেড হসপিটালের ১০৪ নাম্বার কেবিনে, এখন আর ঢুকতে পারি না
ভেতরে। মিহিরকে ওর বাবা নাকি নিউইয়র্কে নিয়ে গেছেন। ও চলে যাওয়ার পর অন্য একটা বাচ্চা মেয়ে এই কেবিনে এসেছিল, বেশ বন্ধুত্ব হয়ে গেছিল আমার সাথে! মাঝে মাঝে কথা হত, ওউ মিহিরেরই মতন জারবেরা ফুল ভালোবাসতো। 

তারপর আরও কত জন এল! সময় বয়ে চলে, একগুচ্ছ জারবেরা ফুল হাতে নিয়ে আমি রোজ সন্ধ্যায় এখানে আসি। কেন আসি জানি না! এই অনুভূতিকে ভালোবাসা বলা যায় কিনা সেটাও জানিনা, কিন্তু বড্ড মায়ায় পড়ে গেছি। এই করিডোরে যেন এক টুকরো জীবন আটকে গেছে আমার। শুধু ভাবি ভয়ঙ্কর কর্কট রোগের সঙ্গে যুদ্ধে টিকে আছে তো সে? নাকি..নাহ ওসব ভাবতে চাই না।

সন্ধ্যা হতেই একগুচ্ছ তাজা জারবেরা কিনে রিক্সা ডাকি, এই রিক্সা ইউনাইটেড হসপিটাল যাবা?

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ