Skip to content

১৪ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | সোমবার | ২৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইরা’র কাব্য

ইরা। ছোটবেলা থেকে ইরা নামটি খুব প্রিয় আমার। আমার যে বিশাল একটা কাল্পনিক জগৎ আছে, সেখানে আমি ইরা’র একটি অবয়ব কল্পনা করে ফেলেছি। কি সুন্দর ইরা’র চাঁদ মুখ। ঠিক যেন জান্নাতের হুর। কল্পনার জগৎ খুব সুন্দর হয় তাই না? সব কিছু নিজের মনের মতো ভাবা যায়। বাধা দেওয়ার মতো কেউ থাকেনা।

ভার্সিটির প্রথম দিন। সবাই যখন সবার সাথে পরিচিত হচ্ছিলো ঠিক তখনই একটি মেয়েকে দেখে থমকে দাঁড়ালাম। এটা কীভাবে সম্ভব? এইটা তো আমার ইরা। আমার কল্পনার রাজ্যের রাণী। এক পা দুই পা করে ইরা’র দিকে এগোচ্ছি। হার্ট বিট বেড়ে যাচ্ছে। ইরা’র সামনে যেয়ে দাড়াতেই হার্ট বিট অস্বাভাবিক বেড়ে গেলো। কম্পিত কণ্ঠে বললাম, 

 

“আসসালামু আলাইকুম। আমি আয়াজ”। 
ইরা অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসি দিয়ে আমার সালামের জবাব দিয়ে বললও, 
“আমি ইরা”। 
কল্পনার ইরা’কে কখনো বাস্তবে খুঁজে পাবো কখনো ভাবিনি। আল্লাহ হয়তো ইরা’কে আমার জন্যই সৃষ্টি করেছেন। 

 

ইরা’র হাসিটা কল্পনার থেকে বাস্তবে কয়েক গুণ বেশী সুন্দর। ইরা’র লম্বা চুল, টানা টানা দুইটা চোখ, মন কাড়ানো হাসি আমাকে প্রতিটা মুহূর্ত নতুন করে প্রেমে ফেলে। প্রথম একটা মাস ইরা’কে দেখেই কেটে গেলো। দেখার যেন শেষ নেই, যতই দেখি ততই দেখতে মন চায়। ইরা হয়তো বুঝতে পেরেছিল আমি ওকে প্রতিটা মুহূর্ত খেয়াল করি। তাই যখনই ওর চোখে আমার চোখ পড়ে যেতো তখন মৃদু একটা হাসি দিতো আর আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলতাম। 

 

সকাল থেকেই ক্যান্টিন এ বসে আছি। অনেক খিদেও পেয়েছে আবার কিছু খেতেও ইচ্ছে করছে না। রাতে ঘুম ভালো না হওয়ায় ঝিমুতে ঝিমুতে ব্যাগ এর উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ একটা কণ্ঠে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। পেছন ফিরে তাকাতেই দেখি ইরা। 

-ক্লাসে যাবেননা ?
-হ্যা যাবো।
-বসতে পারি?
-প্লিজ।
-চা খাবেন?
-খাওয়া যেতে পারে।

 

ইরা দুই কাপ চায়ের অর্ডার করে বলতে শুরু করলো, 

 

-ক্লাসে মনোযোগ না দিয়ে সারাক্ষণ আমার দিকে মনোযোগ দিলে পরীক্ষায় পাশ করতে পারবেন?
-এইবার খুব লজ্জা পেয়ে গেলাম।
-আশা করবো ক্লাসে এইভাবে তাকিয়ে থাকবেন না আর। আমি ইতস্তত বোধ করি।
-আচ্ছা তাকাবো না।
এর মধ্যে চা এসে পড়লো। ইরা চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বললও,
-বন্ধু হবেন?
-একটা শর্তে।
-বন্ধুত্ব শর্ত দিয়ে হয়?
-তেমন কিছু না। আপনি করে বলা যাবেনা। তুমি করে বলা লাগবে।
ইরা হাসি দিয়ে বললও, তুমি সত্যিই একটা পাগল।

১৮ই ডিসেম্বর। আজকে ইরা’র জন্মদিন। আমাদের বন্ধুত্ব এই সাত মাসে অনেক গভীর হয়েছে। ক্যাম্পাসে সারাক্ষণ দুইজনের আড্ডা দেয়া, ক্লাসরুম এ পাশাপাশি বসা, গ্রুপ স্টাডি, ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ঘুরতে যাওয়া, সিনেমা দেখা, ইরা’র প্রিয় খাবার গুলো খাওয়া আর হ্যা হাজার হাজার সেলফি তোলা। মোট কথা ইরা’কে ছাড়া আমার আর আমাকে ছাড়া ইরা’র চলে না। ইরা’কে তো সেই ছোট্ট বেলা থেকেই ভালোবাসি। আজকে প্রথম ভালোবাসার কথা জানাবো। সকাল ১১টা। ইরা আমার সামনে বসে আছে। আজকে ইরা নীল রঙের একটা লং ফ্রক পড়ে এসেছে। আমি পলকহীন হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি। ইরা’কে নীল পরীর মতো লাগছে। ইরা আমাকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে লজ্জা পেয়ে অনেক কিছু বলে যাচ্ছে। আমার কান দিয়ে কিছুই ঢুকছিলো না। আমি হঠাৎ বলে উঠলাম, 

 

     “ভালোবাসি। ইরা আমি তোমাকে অনেক বেশী ভালোবাসি। আমার বেঁচে থাকার অক্সিজেন তুমি। মানুষ যেমন অক্সিজেন ছাড়া বাঁচতে পারেনা, আমিও তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবোনা। সেই ছোট্টবেলা থেকে তুমি আমার কলিজার পুরোটা দখল করে আছো। এই কলিজায় অন্য কোনো ইরা’কে বসানোর মতো একফোঁটা জায়গাও খালি নেই বিশ্বাস করো। তুমি আমার কল্পনায় ছিলে। বাস্তবে পাবো কখনো ভাবিনি। বাস্তবে যখন পেয়েছি তখন কীভাবে হারাবো তোমাকে বলো? তোমাকে যতবার দেখি ততবার নতুন করে প্রেমে পরি। সারাজীবন আমি তোমার প্রেমে বার বার নতুন করে প্রেমে পড়তে চাই। ভালোবাসার এই সুযোগটা দেয়া যাবে আমাকে? বিয়ে করবা আমাকে?” 

 

ইরা’র চোখ দুটো কেন যেন টলমল করছে। দুই চোখের কোণা বেয়ে নীরবে জল গড়িয়ে পড়ছে। হঠাৎ ই বসা থেকে উঠে দাড়ালো ইরা। আমিও উঠে দাঁড়ালাম ইরা’র উঠে দাঁড়ানো দেখে। ইরা এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো আর কানে কানে বললও, 

 

-এই প্রেমের সমাপ্তি ঘটবে নাতো কখনো?
-মরে যাবো, তবুও তোমাকে ছাড়বো না।

ঝগড়া আমাদের মাঝে মাঝেই লাগতো। ঝগড়া ছাড়া তো সম্পর্ক মিষ্টি হয় না। তবে ঝগড়া হতো আমি কেনো ইরা’র সাথে ঝগড়া করিনা সেটা নিয়ে। ইরা’র অভিযোগ আমি নাকি ইরা’কে বেশী ভালোবাসি। কিন্তু ইরা চায় আমি না ইরা আমাকে বেশী ভালোবাসবে। ঝগড়া করে ১ঘন্টাও কথা না বলে থাকতে পারতো না ইরা। আমি দূরে থাকলে ফোন দিয়ে কান্না করে সরি বলতো আর কাছে থাকলে আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কান্না করতো। আমি কখনো ওর কান্না থামানোর চেস্টা করিনি। ইরা কান্না করলে ওকে অনেক কিউট লাগে। বাচ্চা মেয়ে একটা। তৃতীয় পক্ষের কারণে একবার আমাদের অনেক বড় ধরনের ঝগড়া লাগলো। ১০ ঘন্টা পরে আমাকে ইরা ফোন দিয়ে বললও ওর বাসার নীচে আসতে। আরেহ মেয়ে দেখি পুরাই পাগল। রাত ২টা বাজে। এখন কীভাবে যাবো। ইরা’র কান্না ও সহ্য হয় না আবার। দারোয়ান চাচার সাইকেল নিয়ে গেলাম ইরা’র বাসার নীচে।

এমনেতেই আমি ভূত-প্রেতে বিশ্বাসী। গা ছমছম করছে আমার। ইরা এসেই আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেয়ে একটা বেঞ্চে বসালো। মেয়েটার সাহস আছে। ইরাও বেঞ্চে বসলো। আমি ইরা’র কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লাম। ইরা হাত দিয়ে মাথা বুলিয়ে দিচ্ছে। আমার চোখের পাতা লেগে গিয়েছিলো ঠিক তখনই কয়েক ফোটা পানি আমার গালে পড়লো। চোখ মেলে দেখলাম ইরা কাঁদছে। এই মেয়েটা কীভাবে এতো কাঁদতে পারে?  ইরা বললও,

 

-তোমাকে ছাড়া কীভাবে থাকবো আমি? একটা মুহূর্ত তোমাকে ছাড়া থাকতে পারিনা। তোমাকে ছাড়া থাকা’র কথা চিন্তা ও করতে পারিনা আমি।
আমি ইরা’র মাথা আমার বুকের বাম পাশ টার উপর রেখে বললাম, 
-কিছু শুনতে পাচ্ছো?    
-হ্যা, হার্ট বিট।
-প্রত্যেক টা হার্ট বিট কি বলছে জানো?
-কি বলছে?
-ইরা শুনো, আয়াজ তোমাকে ভালোবাসে। 

 

সময়ের সাথে সাথে আমাদের সম্পর্কের কথাও দুই পরিবার জানতে পেরে গেলো। প্রথমে দুই পরিবার রাজি না হলেও পরে কিন্তু আমাদের সম্পর্কটা মেনে নিয়েছে দুই পরিবার। অক্টোবর এর ০৯ তারিখ। আজ আমাদের বিয়ে। ইরা লাল টুকটুকে একটা শাড়ি আর আমি লাল রঙের শেরওয়ানি পড়েছি। ইরা’কে আজকে লাল পরীর মতো লাগছে। ইরা’কে মানা করেছিলাম পার্লারে যেতে, কারণ আমার ইরা’কে আল্লাহ এতো সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন যে পৃথিবীর সব মেকআপ ওর মুখে বেমানান। ইরা তার কথা রেখেছে। ৪ বছরের প্রেমের সম্পর্ক অবশেষে তিন কবুলের মাধ্যমে সংসারে পরিণত হল। আল্লাহ’র দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া আদায় করলাম। তারপর আমাদের এক নতুন গল্প শুরু হল। যখন দূরে ছিলাম তখনই আমাদের কথা শুরু হলে শেষ হতো না। আর আজকে তো ইরা আমার একদম কাছে। আমাদের কথা কখনো শেষ হবার নয়। 

আজ রবিবার। শেষ রাত থেকেই খুব বৃষ্টি হচ্ছে। আমি আর ইরা খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেছি। বৃষ্টি দেখবো। আমার ইরা’র বৃষ্টি খুব প্রিয়। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়লেও আমার ইরা’র পাগলামি বেড়ে যায়। বিয়ের পর এইটা আমাদের প্রথম বৃষ্টি। ইরা’র বায়না এখন ইরা’কে নিয়ে আমার বৃষ্টিতে ভিজতে হবে। অথচ বৃষ্টিতে ভিজলেই ইরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। আজকে ইরা’র কোনো বায়না শুনবো না, ইরা’কে বৃষ্টিতে ভিজতে দিবো না। ইরা কিন্তু রাগ করলো না। আমার বুকে মাথা রেখে বললোঃ “আয়াজ, তোমার বিশাল বুকে এই ছোট্ট ইরা’কে আগলে রেখে ভিজতে পারবেনা? যদি পারো তোমার ইরা’র কিচ্ছু হবে না”। ইরা’কে বুকে আগলে রেখে দুই ঘন্টা ভিজেছিলাম। কাথামুড়ি দিয়ে বিছানায় শুয়ে আছি। ১০৫º ডিগ্রি জ্বর আমার। ইরা খুব কাঁদছে। ইরা নাকি আর কখনো বৃষ্টিতে ভিজবে না। ইরা’র মাথা আমার বুকের উপর। ইরা’র মাথায় হাত রেখে বললামঃ “ইরা, সামান্য জ্বর এসেছে। কয়েকদিন এর মধ্যেই ভালো হয়ে যাবো। এই সামান্য জ্বরে মরে যাবোনা”। ইরা মরা’র কথা শুনে এইবার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করলো। মেয়েটা কেনো যে আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে।

সময়ের সাথে সাথে বিয়ের দুই বছর পার হয়ে গেলো। ইরা কে আজকে অনেক বেশী খুশি দেখাচ্ছে। আমার সামনে আসতে লজ্জাও পাচ্ছে। আমি বার বার জিজ্ঞেস করার পরেও কিছু বললও না। বললও রাতে বলবে। রাতের খাবার খাওয়ার পর শুয়ে পড়েছিলাম। ইরা এসে আমার বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। বিয়ের রাত থেকে ইরা আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমায়। আমার বুক টাই নাকি ইরার বালিশ। আমার বুকে মাথা রেখে না ঘুমালে নাকি ওর ঘুমই আসে না। ইরা বুকে মাথা রেখে শুয়েই আস্তে আস্তে বললও,

 

-তোমার  আয়াত আসতেছে, আয়াজ।
-অবাক হয়ে বললাম, মানে?
-তুমি বাবা হবা আর আমি মা।

আর শুয়ে থাকতে পারলাম না। ইরা কে জড়িয়ে ধরে কপালে, গালে হাজার টা চুমু দিয়ে দুই হাত তুলে আল্লাহ্‌র দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া জানালাম।
সারারাত তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে ইরা, আমার আমাদের ভবিষ্যৎ আয়াতের জন্য দোয়া করলাম। অফিস থেকে ছুটি নিয়ে সারা দিন রাত ইরা’র যত্ন নিতে লাগলাম। ইরা কে রান্না করে খাওয়ানো থেকে গোসল করানো, কাপড় ধোয়া সব আমি করতাম। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ তো ছোটবেলা থেকেই পড়তাম এখন সাথে তাহাজ্জুদ ও পড়া শুরু করলাম। নিয়মিত ডাক্তারের চেকআপ ও করালাম। মা ও সন্তান দুজনেই সুস্থ। 

 

ডেলিভারির তারিখ সেই ৯ই অক্টোবর। নরমাল ডেলিভারি। সকল প্রস্তুতি সম্পূর্ণ। দুই পরিবারের সবাই উপস্থিত হাসপাতালে। ইরা’কে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়ার সময় ইরা আমার হাত অনেক শক্ত করে ধরে বলেছিলো আমি যেন ওর সাথে অপারেশন থিয়েটারে যাই। ইরা’র নাকি ভয় করছে একা যেতে। অনেক অনুরোধ করার পরেও ডাক্তার আমাকে ইরা’র সাথে থাকার অনুমতি দেয় নি। অপারেশন থিয়েটারের বাইরে খুব চিন্তিত অবস্থায় ছিলাম আমি। আমাকে আমার বাবা সাহস দিচ্ছিলেন অনেক।

 

অপারেশন শেষ হল, একটা নার্স এসে বললও আপনার মেয়ে হয়েছে। মা ও মেয়ে দুজনেই সুস্থ। আলহামদুলিল্লাহ। কিছুক্ষণ পর আয়াত’কে আমার কোলে এনে দিলো এক নার্স। জীবনের প্রথম বাবা হওয়ার অনুভূতি কি আয়াত আমার কোলে না আসলে অনুভব ই করতে পারতাম না। আয়াতের কপালে গভীর একটা চুমু খেলাম। চোখের দুই কোণা দিয়ে দুই ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো আমার। আয়াত কাদছিলো। বাবার কোলে এসে একদম লক্ষ্মী হয়ে গেছে। ঘুমাচ্ছে এখন। ইরা’কে কেবিনে পাঠানো হল। ইরা’র চোখেও জল। আমি আয়াত’কে নিয়ে ইরা’র পাশে শুইয়ে দিলাম। ইরা’র হাত শক্ত করে ধরে কপালে চুমু দিয়ে বললাম দেখো আমাদের মেয়ে টা একদম তোমার মতো হয়েছে। ইরা সেই মন কাড়ানো মৃদু হাসি দিয়ে বললও আমাদের মতো হয়েছে। 

 

ইরা আর আয়াত’কে নিয়ে আমার সংসারটা সুখের কাটছিলো। ভাবিনি এই সুন্দর সাজানো গোছানো সংসার এইভাবে একদিন ভেঙ্গে যাবে। আমার ইরা একদিন অনেক অসুস্থ হয়ে পড়লো। ডাক্তারের কাছে গেলাম। অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ডাক্তার যা বললও সেটা আমি কখনো শুনতে চাই নি। আমার ইরা’র নাকি ব্লাড ক্যান্সার। ইরা তাঁর আয়াজ’কে ছেড়ে চলে যাবে। এইটা কীভাবে সম্ভব? ইরা কে নিয়ে বাসায় গেলাম। ইরা বার বার জানতে চাচ্ছিলো ওর কী হয়েছে। সত্যিটা আমি কখনো বলতে পারতাম না। আর বলিওনি। কিন্তু যার শরীরে রোগ বাসা বাঁধে তাঁর থেকে যতই লুকানো হোক না কেনো সে কিন্তু সবই বুঝতে পারে। ইরা কাঁদল। অনেক কাঁদল। ও মরে যাবে তাঁর জন্য না, ওর শোকে আমি মরে যাবো তাঁর জন্য। রোগ ধরার পর ইরা যতদিন আমার সাথে ছিলো আমি ২৪ঘন্টা ওর সাথে ছিলাম। ও যেখানে যেতে চেয়েছে নিয়ে গিয়েছি, যা খেতে চেয়েছে তাই খাইয়েছি, যা পড়তে চেয়েছি পড়িয়েছি, যতটা ভালোবাসা চেয়েছে তাঁর থেকে লক্ষ গুণ বেশী ভালোবাসা দেয়ার চেষ্টা করেছি। নিজের সাধ্যমত ওর চিকিৎসা ও করাচ্ছিলাম। কিন্তু ইরা’র মনের জোড়ের সাথে শরীরের জোর টিকছিলো না। আজকের দিনটা ১৭ই ডিসেম্বর। রাত ১২টায় ওকে বার্থডে সারপ্রাইজ দিবো। ইরা’র প্রিয় চকলেট কেক এনে ফ্রিজে রাখলাম। আমাদের ৭ বছরের স্মৃতিময় একটা ভিডিও বানালাম। ইরা’র প্রিয় স্যুপ নিজের হাতে রান্না করলাম। ঘড়ির কাটা ঠিক ১২টা। ছাদে ইরা’কে নিয়ে গেলাম। আয়াত দাদীর সাথে ঘুমাচ্ছে। ইরা’কে গীটার বাজিয়ে উইশ করলাম। ইরা’র অনেক ইচ্ছা ছিলো ওকে যেন গীটার বাজিয়ে বার্থডে উইশ করি। আজকে ওর এই ইচ্ছাটাও পূরণ করলাম। কেক কাটলাম। ইরা’কে স্যুপ খাওয়াতে খাওয়াতে ল্যাপটপ এ ভিডিও  টা দেখালাম। ইরা’র চোখে জল। এখন ওর কান্না আর কিউট লাগে না। ভয় লাগে। ইরা বললও,

 

-আয়াজ শুনো।
-বলো?
-আমাকে তোমার বুকে নাও না। ঘুম পাচ্ছে অনেক।
-রুমে চলো।
-নাহ, এখানেই ঘুমাবো।

 

ইরা’কে বুকের ঠিক মধ্যে খানে নিলাম। ইরা আমাকে জড়িয়ে ধরে কপালে অনেক গুলো চুমু খেলো। আমিও ইরা’র কপালে চুমু খেয়ে ওকে বুকের মধ্যে আলতো করে জরিয়ে নিলাম। ইরা’কে চাঁদের আলোয় ঘুম মুখখানা চাঁদের মতো লাগছিলো। ওর চাঁদমুখখানা দেখতে দেখতে আমিও যে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম মনে নেই। সকালে আমার ঘুম ঠিক ই ভাঙলো। কিন্তু আমার ইরা’র ঘুম ভাঙল না। স্বার্থপরের মতো আমাকে একা রেখেই চলে গেলো ঘুমের রাজ্যে। আমি চিৎকার করে কাঁদতে চাচ্ছিলাম। পারছিলাম না। অনবরত চোখ দিয়ে শুধু জল গড়িয়ে পরছিলো। আমি চিৎকার করে শুধু বলতে চাচ্ছিলাম, “ইরা, আয়াজ তোমাকে অনেক বেশী ভালোবাসে। যেয়ো না আয়াজ’কে একা রেখে। অনেক ভালোবাসি ইরা তোমাকে”।

              
 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ