বেলাশেষের সাধ!
বিয়ের আগে অবন্তী একটা জিনিসই চাইতো খুব করে,তার বর যেন ভোজন রসিক হয়! সে এ পদ সে পদ রাঁধবে,আর বরকে আসন পেতে খেতে বসাবে।বরকে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করবে,লাগলে শাড়ির আঁচলে ঘাম মুছিয়ে দিবে..এসব ভেবে নিজেই লজ্জায় মুখ লুকোতো সে।
কিন্তু সে ইচ্ছে আর পূরণ হলো কই? বাবার পছন্দমতো উচ্চপদস্থ কর্পোরেট চাকুরীকে বিয়ে করলো সে ঠিকই, তবে তার বর যেন এ জগতের কেও নয়! বাড়ির রান্না যে তার ভালোই লাগে না। রেস্তোরা আছে কি করতে?! বিয়ের আগে রান্না না জানা অবন্তী রোজ "১০০০ বাঙালী রান্না" বইটি দেখে কত কি রান্না করে। কিচ্ছু তাহার মুখে রোচে না! বাসায় তারা দুজনই থাকে। শ্বশুর-শাশুড়ি দেশের বাড়িতেই রয়ে গেলেন। তবে মাঝেমধ্যে এলে অবন্তীর রান্নার প্রশংসায় তাঁরা পঞ্চমুখ।
আজ অবন্তী রেঁধেছে বাসমতি চালের ভাত,বেগুনভর্তা,মটরশুঁটি টমেটো দিয়ে রুই মাছ,মুগডাল আর পোস্তর বড়া, কি অমৃত না বলুন?
বেলা তো পেড়িয়ে যাচ্ছে,অবন্তী অনেক সাহস সঞ্চয় করে এবার রাজাকে একটা টেলিফোন করে ফেললো। অনেকবার রিং বাজতে বাজতে কেও ওপাশ থেকে ভারী ও বিরক্ত গলায় টেলিফোনটা তুললো –
– "কি হয়েছে?"
– "বলি শুনছো?দুপুরে আসবে না খেতে?"
– "উফ!কতবার বলেছি আমার জন্য এত রান্নার ঝামেলা করবার দরকার নেই,যা রেঁধেছো নিজে খেয়ে নাও না!আমার কনফারেন্স আছে,রাখছি!"
– "সরি..হ্যালো?…শুনছো?,হ্যালো?.."
চোখের জল চেপে আর অনেকটা আক্ষেপ নিয়ে অবন্তী নিজের মনে বলতে লাগলো "আমি জীবনে আর সুখ পেলাম কই! এরচেয়ে তো আমার বাপের বাড়ির ঝি'য়ের ভাগ্যটাও ভালো! অন্তত বেলা শেষে সাধ করে বর বৌ মিলে 'একসাথে' দুটো ডালভাত তো খেতে পায়!"